রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৬ পূর্বাহ্ন
কলাপাড়া প্রতিনিধি ॥ গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অুনষ্ঠিত হয়েছে। ভোটের আগে থেকেই পটুয়াখালী-৪ আসনের কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানার কয়েকটি ইউনিয়নে ছড়িয়ে পরে উত্তেজনা। নির্বাচনের ১৩ দিন পার হলেও থামছে না সহিংসতা। এখন পর্যন্ত অন্তত অর্ধশত নেতাকর্মী মারধরের শিকার হয়েছেন। মারধরের ভয়ে এখনও বাজার ঘাটে উঠতে পারছেন না অনেকে। আত্মগোপনে চলে গেছেন বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগের নেতা। মামলা করতেও সাহস পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। যার ফলে কোণঠাসা হয়ে পরেছে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত আওয়ামী লীগের নেতারা। এতে জিমিয়ে পরেছেন মাঠ পর্যায়ের সাধারণ কর্মীরা।
সর্বশেষ গত শুক্রবার সন্ধায় লতাচাপলী ইউনিয়নের ডংকুপাড়া গ্রামের বটতলা নামক স্থানে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হন বরিশাল বিএম কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র আসাদ মোল্লা। নৌকার প্রতীকের কর্মী আব্দুর রহিম মুসুল্লী ও তার ছেলে রাব্বী মুসুল্লী কুপিয়ে আসাদ মোল্লাকে রক্তাক্ত জখম করেছেন। তার মাথায় ছয়টি ও হাতে একটি কোপের চিহ্ন পাওয়া গেছে। গুরুতর আহত আসাদ বর্তমানে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। আসাদ মোল্লা লতাচাপলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মো.আনছার উদ্দিন মোল্লা এবং কুয়াকাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বারেক মোল্লার ভাতিজা। তার বাবার নাম ফারুক মোল্লা। এ ঘটনায় আসাদ মোল্লার মামা নাসির গাজী বাদী হয়ে মহিপুর থানায় চারজনের নামে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
এ প্রসঙ্গে মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, শুক্রবার রাতেই থানায় মামলা হয়েছে। তদন্ত পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শুক্রবার একই সময় আলীপুর থ্রিপয়েন্ট এলাকায় হামলার শিকার হন ইসমাইল ফরাজী নামের এক যুবক। নৌকার কর্মীরা হাতুরি দ্বারা পিটিয়ে ইসমাইল ফরাজীর দুই পায়ের হাটু পর্যন্ত থেতলে দিয়েছেন। ইসমাইল ফরাজী বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। সে লতাচাপলী ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের পান্না মিয়া ফরাজীর ছেলে।
এর আগে নির্বাচনের পরদিন আলীপুর চৌরাস্তায় নৌকার কর্মীদের হামলার শিকার হন মোশাররফ মোল্লা। তাকেও হাতুরি দ্বারা পিটিয়ে দুই পায়ের হাটু পর্যন্ত থেতলে দেয়া হয়েছে। সপ্তাহখানেক বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাসায় আনা হয়েছে। হাটুসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানের ক্ষত ভালো হলে দু’পায়ের অপারেশনের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন চিকিৎসক। মোশাররফ মোল্লা লতাচাপলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মো.আনছার উদ্দিন মোল্লা এবং কুয়াকাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বারেক মোল্লার ছোট ভাই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ জানুয়ারি (রোববার) রাতে ফলাফল ঘোষণার পর থেকে আজ রোববার (২১ জানুয়ারি) পর্যন্ত পটুয়াখালী-৪ আসনের মহিপুর থানার লতাচাপলী, মহিপুর, ধুলাসার, ডালবুগঞ্জ ইউনিয়ন ও কুয়াকাটা পৌর এলাকায় অন্ততপক্ষে অর্ধশত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকের সমর্থক বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে পারছেন না। এমনকি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়া পরিবহন কাউন্টার ও শ্রমিক সংগঠনগুলোতে এসেছে নতুন নেতৃত্ব।
লতাচাপলী ইউনিয়নে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মাহবুবুর রহমান তালুকদারের আলীপুরস্থ নির্বাচনী অফিস ভাংচুর, প্রদীপ ও স্বপন নামের ২ জন সংখ্যালঘু’র বাড়িতে হামলা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়ছে। এছাড়া আলীপুরের বাজার পাহারাদার আব্দুর রহিম, ভ্যানচালক হাচান প্যাদা, মুরগী ব্যবসায়ী আলী হোসেন, মাছ ব্যবসায়ী সোহাগ, ইউপি সদস্য মিজান মুসুল্লী হামলার শিকার হয়েছেন। এখনো দোকান খুলতে পারছেন না অপু গাজী, আবু বক্কর মল্লিক। এমন অভিযোগ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান আনছার উদ্দিন মোল্লাসহ অনেক নেতারা।
এ বিষয়ে লতাচাপলী ইউনিয়ন আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান আনছার উদ্দিন মোল্লা বলেন, প্রতিনিয়ত আমার হাত, পা কেটে ফেলার বিভিন্ন হুমকি ধমকি আসছে। আমি চাই এই প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ করা হোক। সুষ্ঠু ধারায় রাজনীতি চলুক।
লতাচাপলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান বিশ্বাস বলেন, নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার বিষয়গুলো উপজেলা নেতাদের অবহিত করা হচ্ছে। তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।
এদিকে কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় থাকা স্বত্ত্বেও নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী অফিস পৌর আ’লীগের কার্যালয়ের সাইনবোর্ড টানিয়েছেন পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার। তবে কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ লাভ করতে পারেন নি। কুয়াকাটা পৌরসভায় দু’টি দলীয় কার্যালয় হওয়ায় বিভ্রান্তিতে পরেছেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীরা।
এবিষয়ে কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বারেক মোল্লা বলেন, পৌর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কোণঠাসা করার জন্য বর্তমান মেয়র নির্বাচনী অফিস দলীয় কার্যালয় বানিয়েছেন। যা সম্পূর্ণ দলের গঠনতন্ত্র পরিপন্থি। তিনি জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা, এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দলীয় সদস্য পদ পাননি। বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীরকে অবহিত করা হয়েছে বলে তিনি দাবী করেছেন।
এ প্রসঙ্গে কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব তালুকদার বলেন, কুয়াকাটায় আওয়ামী লীগের কার্যালয় একটি। মেয়র আনোয়ার হাওলাদার যেটি করেছেন ওটি নির্বাচনী অফিস। তিঁনি আরো বলেন, নির্বাচন পরবর্তী যারা সহিংসতা করছে তাদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নির্বাচনী পরবর্তী কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে স্বীকার করে মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, নির্বাচনী পরবর্তী সহিংসতা রোধে মহিপুর থানা পুলিশ সবসময় সতর্ক আছে। যারা সহিংসতা করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, পটুয়াখালী-৪ সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়ে টানা দ্বিতীয় বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মহিববুর রহমান মহিব। তিঁনি বর্তমানে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকের প্রার্থী সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মাহবুবুর রহমান তালুকদার। হেভিওয়েট এ দুই প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা জড়িয়ে পরেছেন নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায়।
Leave a Reply