হারিয়ে যাচ্ছে হাতে লেখা চিরচেনা রংতুলির জাদুকররা Latest Update News of Bangladesh

শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪২ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




হারিয়ে যাচ্ছে হাতে লেখা চিরচেনা রংতুলির জাদুকররা

হারিয়ে যাচ্ছে হাতে লেখা চিরচেনা রংতুলির জাদুকররা




মো. নাঈম হাসান ঈমন, ঝালকাঠি : সৃষ্টিকুলের সকল প্রাণীদের ক্ষুধা প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে বেড়ায়। মানুষ, পশু পাখি, কীটপতঙ্গ সবারই প্রতিদিন ক্ষুধার তাড়না পোহাতে হয়। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ আর সেই মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে খাদ্য হলো অন্যতম। আর ক্ষুধা নিবারণের জন্য প্রয়োজন হয় খাদ্যের। মানুষকে সেই খাদ্য কোননা কোনো উপায়ে রোজগার করে খেতে হয়। তাইতো সমাজের মানুষ একেকজন একেক উপায়ে খাবারের ব্যবস্থা করেন।

পৃথিবীর অনেক শিল্পের মধ্যে আর্ট শিল্প একটি। সুন্দর এ পৃথিবীর প্রকৃতিকে আরো প্রাণবন্ত করতে, শিল্পী তার মনের মাধুরি মিশিয়ে রং, তুলি, শব্দের মিলনের মাধ্যমে অন্যের মনে আনন্দ ফোটানোকেই শিল্প বা আর্ট বলে। যেটাকে তুলি শিল্প, চারুশিল্প, কারুশিল্প, ললিতকলা, চারুকলাও বলা হয়। রং আর তুলির ছোঁয়ায় ফুটিয়ে তোলা হয় মানুষের মনের ভাষা। আবার শিল্পী রং তুলির খেলার মাঝে খুঁজে নেয় নিজের আনন্দ। নিজ এবং পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্বটাও তুলে দেয় এই রং তুলির হাতেই।

সারা বছর টুকটাক ব্যস্ত সময় পার করলেও জাতীয় বা স্থানীয় নিবার্চনে ব্যানার ফেস্টুন তৈরিতে যারা অত্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করতেন তারা আজ কাজের অভাবে নিজ পেশা ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন। ঝালকাঠি জেলায় একসময় রংতুলির আঁচড়ে ব্যানার বা সাইনবোর্ড লিখে জীবিকা নির্বাহ করত প্রায় অর্ধশতাধিকের বেশি শৌখিন বা পেশাজিবী আর্ট শিল্পিরা। আধুনিক যুগে ডিজিটাল নির্ভর কর্মক্ষেত্রে ডিজিটাল সাইনবোর্ড বা ব্যানার লিখন কাজের ব্যাপক চাহিদায় কদর কমেগেছে মূল ধারার চারু শিল্পিদের।

ঝালকাঠি জেলায় বর্তমানে কয়েকজন নামে মাত্র টিকে আছেন কোন রকম। আর্ট শিল্পের কথা বলতেই চোখে ভাসে শহরের বাসের গায়ে, ট্রাকের গায়ে, রিক্সার গায়ে, টেম্পোর গায়ে ও ট্রলারের গায়ে, দেয়ালের গায়ে, শিল্পীদের মনের মাধুরি মিশিয়ে আঁকা হরেক রকমের ছবি। ছিনেমা হলগুলোর সামনে টাঙ্গানো চলমান সিনেমার দৃশ্য আঁকা হতো শিল্পীর রং তুলিতে। বিভিন্ন সভা সমাবেশে কাপড়ের উপর হাতের লেখা সেই নিপুন ব্যানার এখন অতীত হয়ে গেছে। একসময় যাদের রংতুলির আঁচড়ে নানা ধরনের ব্যানারের লেখা শোভা পেত শহরের সড়কের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে আবার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড থেকে শুরু দেয়ালিকায় শোভা পেত বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক বার্তা তারা আজ হারিয়ে যেতে বসেছেন। এসব স্থানে তাকালে এখন আর দেখা মিলেনা এসব শিল্পের। যান্ত্রিকতার এই যুগে হারিয়ে যাচ্ছে রং আর তুলির কারুকাজ ও এর সাথে জরিত শিল্পিরা। এখন অল্প টাকায় স্বল্প সময়ে প্যানাপ্লেক্সের তৈরি বিভিন্ন ধরনে ব্যানার ফেস্টুন পাওয়া যাচ্ছে। আবার ক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা ঝুঁকছেন ডিজিটাল ব্যানারে দিকে।

চারুশিল্পের উপর গুরুত্ব দিয়ে সরকার ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত চারুকারু শিক্ষার জন্য জুড়ে দিয়েছে বিষয়ভিত্তিক পাঠ্যবই। বাস্তবিকভাবে শিক্ষার্থীরা এ শিক্ষা অর্জন করে ভবিৎষতে কর্মক্ষেত্রের কোন জায়গাতেই প্রয়োগের স্থান না দেখে আঁকাঝোকায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না তেমন কেহ। তাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছেনা আঁকা ঝোকার ঝোক। এজন্য ক্রমেই বিলুপ্তি হয়ে পড়ছে দেশের গ্রাম বাংলার পথে প্রান্তরে চারু শিল্পিদের কারুকাজ। সচারচর দেখা মিলছেনা মনের মাধুরি মিশিয়ে রং তুলি দিয়ে চারু শিল্পের কাজের ব্যাপকতা।

শহর ছাড়িয়ে এখন গ্রামেও ডিজিটাল ব্যানার লিখনের কাজ প্রসার লাভ করেছে। জীবিকা নির্বাহের প্রতিযোগিতায় রং তুলি ছেড়ে শিল্পিরা ঝুঁকে পড়ছেন অন্য পেশায়। তারপরও যারা এ পেশা আঁকড়ে জীবিকা অর্জনে টিকে থাকলেও নেই তেমন একটা ভাল অবস্থানে। দেয়ালে কাপড় টানিয়ে ব্যানার লিখন, লঞ্চ ষ্টিমারে আঁকাঝোকার কাজ ও প্রতিষ্ঠানে দেয়াল লিখন কাজের পরিবর্তে দেখা যাচ্ছে ডিজিটাল ব্যানার। সর্বোপরি, শতপ্রতিকুলতার মাঝেও জেলার পথে ঘাটে কোন কোন জায়গায় এখনো দেখা মিলছে রং তুলি দিয়ে কাজ করা গ্রাম বাংলার একসময়কার চিরচেনা আর্টশিল্পিদের।

ঝালকাঠির রাজাপুর সদরের বিশ্বাস বাড়ি এলাকার পঞ্চাশোর্ধ অঞ্জন মিস্ত্রী। উচ্চ শিক্ষিত হাসিখুশি সদালাপি একজন মানুষ। পরিবারের ছয় জনের মধ্যে তিনি উপার্জনক্ষম মানুষ। ছোট বেলা থেকেই তার শিল্পী মন নিয়ে বেড়ে ওঠা। মঞ্চ অভিনয় আর আর্টের উপরে ছিল তার খুবই দুর্বলতা। তিনি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও নিয়েছেন প্রশিক্ষণ। এক সময় সংসারের ভার তার কাঁধে পরতেই সখের বসে করা শিল্পটাকেই নিয়ে নিলেন পেশা হিসেবে। এরপর তিনি রাজাপুর উপজেলার ডাকবাংলো মোড়ের ভাড়ার দোকানে দীর্ঘ ২৭ বছরের বেশি সময় ধরে এই শিল্পটাকে নিয়ে যাচ্ছিলেন সঙ্গী করে। একটা সময় তিনি নিজ উপজেলা সহ পার্শ্ববর্তী উপজেলা থেকেও ব্যানার, সাইনবোর্ড, ফেস্টুন লেখা, ছবি আঁকা, বাঁধাই, ওয়ালমেট বাঁধাই সহ বিভিন্ন কাজ করানোর জন্য তার রং তুলি নিয়ে বসা ছোট টিনের ঘরটিতে সর্বদা মানুষের ভীড় লেগে থাকত। তিনি হাসিমুখে রংতুলির মিলন ঘটিয়ে কাপড়, কাঠ, টিনের বুকে, দেয়ালের গায়ে ফুটিয়ে তুলতেন গ্রাহকের মনের ভাষা। আর গ্রাহকের খুশিতেই খুশি হয়ে যেত শিল্পী ও তার পরিবার।

কিন্তু বর্তমানে আর আগের মত রং তুলির খেলা চোখে পরেনা। অঞ্জন মিস্ত্রীর মুখেও নেই আর আগের মত হাসি। দোকানেও নেই আর আগের মত গ্রাহকের ভিড়। এখন তার দোকানের সামনে গেলে দেখা যায় অঞ্জন মিস্ত্রী মন মরা হয়ে দোকানে বসে আছে। এ যেন বয়স থাকতেও অবসরে যেতে বাধ্য করার মত। গায়ে নেই আগের মত বাহারি পোষাক। হাতে নেই তার কাজ, তবুও মাথার উপরে রয়েছে সংসারের বিশাল চাপ। দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধগতির বাজারে প্রতিটি দিনই কাটে তার অনাহারে, অর্ধাহারে।

কথা হয় রাজাপুর উপজেলার শিল্পী অঞ্জন মিস্ত্রীর সাথে। উচ্চ শিক্ষিত হয়েও এই শিল্পী হয়ে বেরে ওঠার গল্প। এই শিল্প আজ তাকে কোথায় রেখেছে তার গল্প। দীর্ঘশ্বাস ফেলে একে একে বলতে শুরু করেন মনের জমানো কষ্টের কথা গুলো। জয়নুল আবেদিন, এস এম সুলতান, সমরজিত রায়, রফিকুননবিদের থেকে অনুপ্রেরণা পাওয়ার গল্প।

তিনি বলেন, আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি যেমন আছে আর আমরা যাদের অনুপ্রেরণায় এই শিল্পের হাল ধরেছি সেটা যদি তারা জানতেন তাহলে হয়তো তারাও এই শিল্পের প্রসার ঘটাতেন না। এই শিল্প বর্তমানে ডিজিটাল হয়ে গছে। আর শিল্পীও কোন রক্ত মাংসের মানুষ নয়। শিল্পী হলো উন্নত দেশের লোহার তৈরি যন্ত্র। তার কাছে মানুষ যেমন করে চায় সে তেমন করেই মানুষের প্রয়োজন মেটায়। আমাদের সকল কাজ এখন ওই যন্ত্রের দখলে। তাই এখন আমাদের জীবন কাঁটছে অর্ধাহারে, অনাহারে। আমি শিল্পী মানুষ তাই শুধু এই কাজটাই শিখেছি। এটাই পারি এছাড়া আর কিছু পারি না। বয়সের কালে লেখা পড়া শেষ করে চাকরির পেছনে ছুটি নাই। এই শিল্পের পিছনে ছুটছি। এখন আর এই বয়সে চাকুরী করার সুযোগ নাই। আমার মত দেশের সব আর্ট শিল্পীদের বর্তমানে একই অবস্থা। না পাচ্ছি বড় কোন কাজ আর না পারছি ছাড়তে। এরকম যদি চলতে থাকে তাহলে এই শিল্পটা যেমন হারিয়ে যাবে, তেমনি ঘটবে সব আর্ট শিল্পীদের অকাল মৃত্যু।

কথা হয় ঝালকাঠি শহরের শিল্পি জয়দেব মালাকর জয় এর সাথে। তিনি বলেন, আমি একজন চিত্রশিল্পী কাজ করি দীর্ঘ ২৩ বছর কাজের শুরুতে খুব ভালোভাবেই কাজকর্ম হইত তারপর বিভিন্ন স্কুলে কলেজে মাদ্রাসায় বিভিন্ন রকমের ছবি আঁকা লেখার কাজ করে দিনযাপন করতাম ডিজিটাল প্লাস্টিকের তৈরি ব্যানার আসার কারণে এখন আর কেউ আমাদের কাছ থেকে কাজ করায় না। যার ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে খুবই দুঃসাহ দিন যাপন করতেছি। এতগুলো বছর এই পেশায় নিয়োজিত থেকে শেষ বয়সে এসে অন্য কোন পেশায় যেতে পারছিনা অর্থভাবে। তাই সকলের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ। আপনারা ডিজিটাল প্লাস্টিকের ব্যানারবর্জন করুন যাতে পরিবেশ দূষণ হয় স্বাস্থ্যের পক্ষে ঝুঁকি বাড়ায়। তাকে বর্জন করে আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখুন সমাজ ও পরিবেশকে বাঁচিয়ে রাখুন।

কথা হয় কাঁঠালিয়া উপজেলার বৈশাখী আর্ট এর স্বত্তাধিকারী গান্ধী হাওলাদার এর সাথে। তিনি বলেন, ১৯৯৫ সাল থেকে আর্টশিল্পে নিয়োজিত।একসময় সরকারি অফিস আদালতের সমস্ত প্রকার সাইনবোর্ড ব্যানার তিনিই লিখতেন। প্রতিনিয়ত সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একটানা কাজ করতেন। বিভিন্ন দিবসসহ নানান সামাজিক ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে কাজের অর্ডারে কখনো গভীর রাত পর্যন্তও তার কাজ করতে হতো। এজন্য তিনি প্রতিদিন গড়ে সহস্রাধিক টাকা উপার্যন করতেন।

তিনি আরও বলেন, এখন সর্বত্র ডিজিটাল ব্যানারের প্রভাবে সাইনবোর্ড, ব্যানার লিখনের কাজ তেমন একটা আসেনা বললেই চলে। তবে, এখনো পথে ঘাটের দেয়াল, লঞ্চ ষ্টিমারসহ বিদ্যালয়ের দেয়াল লিখনের কাজে তাদের কিছুটা চাহিদা থাকায় পেশা আকড়ে বেঁচে আছে। হাতে লেখার ব্যানারটির স্থায়িত্ব অনেক বেশি থাকলেও ডিজিটালের ব্যানার প্রাকৃতিক নানান কারনে অল্পতেই শেষ হয়ে যায়। তাছাড়া, ডিজিটাল ব্যানারে কোন ভুল হলে সাড়ার কোন উপায় না থাকলেও হাতে লেখা ব্যানারে ভুল ধরা পড়লেই তৎক্ষনাত সাড়া সম্ভব।

কথা হয় নলছিটি উপজেলার শিল্পি শাহিন আহমেদ এর সাথে। তিনি বলেন, একসময় সারাবছরই অল্প হলেও ব্যস্ততা থাকতো আবার নির্বাচনকালীন সময়ে কাজের প্রচুর চাপ থাকতো তখন বিভিন্ন প্রার্থীরা ব্যানার, ফেস্টুন, দেয়াল লিখনের মাধ্যমে খুবই ব্যস্ত সময় পার করতাম তখন আমাদের কদরও ছিল অনেক। তবে বর্তমানে রং তুলির শিল্পিদের সেই রমরমা অবস্থান আর নেই। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যানার ফেস্টুন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার প্রচারণার কারনে শিল্পিদের প্রয়োজনীয়তা হারিয়ে গেছে। প্রযুক্তির সাথে আমরা পেরে উঠছি না মানুষজনও টাকা ও সময়ের কথা চিন্তা করে প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি প্যানাপ্লেক্সের বিভিন্ন ধরনের ব্যানার ফেস্টুন করে তাদের প্রয়োজনীয়তা মিটাচ্ছেন। আবার অনেকে ইলেকট্রিক ডিজিটাল ব্যানার ব্যবহার করছেন।

শিল্পি ইউনুচ আলী হাওলাদার বলেন, আমি নলছিটিতে অনেক আগ থেকেই আর্ট পেশার সাথে জরিত মূলত বিভিন্ন দোকানের সাইনবোর্ড ও ব্যানার লিখতাম। তবে এখন কাজের সংখ্যা খুবই কম এখন সবাই তিন থেকে চারশ টাকার মধ্যে একটা প্যানাপ্লেক্সের ব্যানার লিখে এনে সহজেই দোকানের সামনে সাটিয়ে দিচ্ছেন। ঠিক একই কাজ আমাদের দিয়ে করাতে রং ও মজুরিসহ কম করে হলেও একহাজার টাকা দিতে হবে। তাই অনেকেই খরচ ও সময় বাঁচানোর জন্য আমাদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন না। যদিও আমাদের রং দিয়ে তৈরি কাজের স্থায়িত্ব অনেক বেশি ও পরিবেশবান্ধব। আর প্যানাপ্লেক্সের তৈরি সাইনবোর্ড ও ব্যানারে যে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার হয় তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং এর স্থায়িত্বও তুলনামূলক কম। সবমিলিয়ে আমাদের আর্ট শিল্পিদের খারাপ সময় যাচ্ছে। তাই এই পেশার সাথে জরিত মানুষের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।

একাধিক স্থানীয় রংতুলির সাহয্যে হাতে লেখা আর্টশিল্পিদের সাথে কথা হলে তারা জানান, একসময় শিক্ষিত যুব সমাজেরা সন্মানের সহিত এ পেশাকে সাদরে গ্রহন করে জীবিকা নির্বাহে সাচ্ছন্দ মনে করে অনেকে পেশাকে বেছে নিয়েছেন। কালের প্রবাহে আধুনিকতায় ডিজিটাল ব্যানারের ছড়াছড়িতে কেউ কেউ পেশাকে নেশা হিসাবে আকড়ে ধরে বেঁচে থাকার চেষ্টা করলেও নুতন করে এ পেশায় আসছেনা কেহ।

কাঁঠালিয়া সদর ফাজিল মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক মোঃ নুর-ই-আলাম ছিদ্দিকী বলেন, বর্তমানে আধুনিক যুগে ডিজিটাল নির্ভর কর্মক্ষেত্রে ডিজিটাল সাইনবোর্ড বা ব্যানার লিখন কাজের ব্যাপক চাহিদায় কদর কমেছে মূল ধারার চারু শিল্পিদের।

নলছিটি উপজেলার মোবাইল ব্যবসায়ী নয়ন হোসেন বলেন, আমি আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল সাইনবোর্ড ব্যবহার করি। তাতে আমার খরচ বেশি পরে এবং বিদ্যুৎ বিলও গুনতে হয়। তবে এটা রং তুলি দিয়ে তৈরি কাজের চেয়ে অনেক চকচকে তাই সহজেই সবার দৃষ্টি কারে তাই এটা ব্যবহারকেই ব্যবসায়ীরা এখন বেশি প্রধান্য দিচ্ছেন।

প্রভাষক আমির হোসেন বলেন, বাস্তবিকভাবে শিক্ষার্থীরা এ শিক্ষা অর্জন করে ভবিৎষতে কর্মক্ষেত্রের কোন জায়গাতেই প্রয়োগের স্থান না দেখে আঁকাঝোকায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না তেমন কেহ। তাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছেনা আঁকা ঝোকার ঝোক। এজন্য ক্রমেই বিলুপ্তি হয়ে পড়ছে দেশের গ্রাম বাংলার পথে প্রান্তরে চারু শিল্পিদের কারুকাজ।

আনোয়ারা খাতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান হাওলাদার বলেন, চারুশিল্পের উপর গুরুত্ব দিয়ে সরকার ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত চারুকারু শিক্ষার জন্য জুড়ে দিয়েছে বিষয়ভিত্তিক পাঠ্যবই। বাস্তবিকভাবে শিক্ষার্থীরা এ শিক্ষা অর্জন করে ভবিৎষতে কর্মক্ষেত্রের কোন জায়গাতেই প্রয়োগের স্থান না দেখে আঁকাঝোকায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না তেমন কেহ।

সাংস্কৃতিক কমী মাইনুল ইসলাম সুজন বলেন, রং তুলির শিল্পিরা বাঙালি ঐহিত্যের ধারক ও বাহক বর্তমানে তারা এই পেশায় নিজেদের টিকিয়ে রাখতে পারছেন না। তারা শুধু ব্যানার ফেস্টুন তৈরি না বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাঙালির কৃষ্টি কালচারকে রং তুলির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতেন। প্যানাপ্লেক্স দিয়ে যেসব জিনিস তৈরি করা হচ্ছে সেগুলো পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকরও বটে। তাই সরকারের উচিত এসব শিল্পিদের টিকিয়ে রাখতে প্যানাপ্লেক্সের তৈরি ব্যানার ফেস্টুনের ব্যবহার সীমিত করা বা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে দেয়া।

ঝালকাঠির সামাজিক সংগঠন ইয়ুথ অ্যাকশন সোসাইটির (ইয়াস) সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির হোসেন রানা বলেন, একটা সময় বিভিন্ন সভা সমাবেশে আর্টশিল্পিদের হাতে লেখা ব্যানার ব্যবহার করতেন মানুষ আর তখন তাদের সুদিন ছিল। বর্তমানে এখন আর তাদের দিয়ে কেউ লেখালেখির কাজ করাতে চান না। তাই তাদের এখন দূর্দিন যাচ্ছে। সমাজের সবাইকে নিয়ে ভালো থাকাই সবচেয়ে ভালো তাই তাদের নিয়ে ভাবার সময় হয়েছে। তাদের ব্যাপারে করনীয় ঠিক করতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD