রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০১ অপরাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥ লকডাউনের কারণে কোনো যানবাহন ও অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে নিজের পিঠে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে মাকে মোটরসাইকেলে বসিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আলোচনায় আসেন ব্যাংক কর্মকর্তা জিয়াউল হাসান। ছয়দিন চিকিৎসার পর মাকে সুস্থ অবস্থায় সেই মোটরসাইকেলেই বাড়ি নিয়ে যান তিনি।
এবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন সেই জিয়াউল হাসান। শুক্রবার দুপুরে মা রেহেনা পারভীনকে নিয়ে ঝালকাঠির বাড়িতে ফেরেন তিনি। শনিবার সকালে আবার মা ও ছোট ভাই রাকিবকে নিয়ে যান নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে তিনজনের অ্যান্টিজেন টেস্ট করান। মা ও ছোট ভাইয়ের রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও জিয়াউলের পজিটিভ আসে।
রিপোর্ট পাওয়ার পর জিয়াউল হাসান বলেন, আমি পজিটিভ। দোয়া করবেন, কোনো সমস্যা নেই। সুস্থই আছি। অক্সিজেন স্যাচুরেশনও ভালো। আমার মা ও ছোট ভাই সুস্থ আছে।
তিনি আরো বলেন, মায়ের অক্সিজেন স্যাচুরেশন এখন ৯৮-৯৯। সবার কাছে কৃতজ্ঞতা যে আমি আমার মাকে সুস্থ করে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। সবার দোয়ায় আমিও সুস্থ হয়ে যাব। এত মানুষের শুভকামনা, ভালোবাসা বৃথা যেতে পারে না।
জিয়াউলের মা স্কুলশিক্ষক রেহেনা পারভীন বলেন, খুব ভালো আছি। কিন্তু আমার ছেলেটা যে করোনা পজিটিভ হলো- এ নিয়ে চিন্তা লাগছে। আমার কত যত্ন করেছে ছেলেরা। বাড়িতে ১০ দিন জ্বরে পড়ে ছিলাম। রাতে একটু তন্দ্রা লেগে এলে আবার উঠে দেখতাম, আমার দুই ছেলে আমার দুই পাশে বসে মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কীভাবে আমাকে সুস্থ করা যায়, তা নিয়ে দুই ভাই পরামর্শ করছে। কী করলে আমার একটু আরাম লাগবে, সারারাত সে চেষ্টাই করত। কত কষ্ট করে মোটরসাইকেলে আমাকে হাসপাতালে নিয়েছে। ছয়দিন এক মুহূর্তের জন্যও হাসপাতাল থেকে আমার ছেলে চোখের আড়াল হয়নি।
তিনি আরো বলেন, গত বছরের ১ মার্চ আমার স্বামী মারা গেছেন। এরপর নিজেকে অসহায় লাগত। কিন্তু এবারের অসুস্থতায় বুঝেছি, আমি অসহায় নই। ছেলেরা আমার পাশে আছে।
এর আগে, ১৭-২২ এপ্রিল ছয়দিন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন মায়ের সার্বক্ষণিক সেবাযত্ন করেন জিয়াউল। ঝুঁকি আছে জেনেও তাকে এই কাজে নিবৃত্ত করতে পারেননি চিকিৎসক, নার্স ও স্বজনরা।
Leave a Reply