রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৮ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক:দিনাজপুর জেলা শহর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে সেতাবগঞ্জ যাওয়ার পথে মহাসড়কের পার্শ্বেই ধুকুরঝাড়ী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়। কোনো কারণ ছাড়াই প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছুটি ঘোষণা করে মাঠে আয়োজন করা হয়েছে। বিকাল পর্যন্ত মেলায় কোনো লোকজন পাওয়া না গেলেও সন্ধ্যার পর পরই শুরু হয় মাইকিং। দুই ঘণ্টার মধ্যেই ভরে যায় বিদ্যালয় মাঠ। শুরু হয় হাউজি জুয়া, আর র্যাফেল ড্র, মাঠের পাশেই আলোক সজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে সারারাত মনোরঞ্জনের জন্য নগ্ন নৃত্য আর গান।
ধুকুরঝাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র আবউ নাইম জানায়, গত ৭ দিন ধরে দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে চলছে হচ্ছে সর্বনাশা র্যাফেল ড্র, হাউজি ও নগ্ন নৃত্য। ধুকুঝাড়ী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়কে হাউজি কার্যালয় ও মাঠকে প্যান্ডেল এবং প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়কে মুক্তা র্যাফেল ড্র’র অফিস বানিয়ে জমজমাট চলছে জুয়ার আসর। এ কার্যালয় থেকে প্রতিদিন দেড়শ থেকে দুইশ ইজি বাইক ও পিকআপ এ করে মুক্তা র্যাফেল ড্র’র টিকিট বিক্রি হচ্ছে দিনাজপুরসহ আশপাশের জেলা ও উপজেলাগুলোতে। অপরদিকে হাউজি খেলতে আসা সাধারণ মানুষেরা ভোর পর্যন্ত হাউজি খেলে সর্বশান্ত হয়ে ফিরে যাচ্ছে।
জানা যায়, ঐতিহ্যবাহী ধুকুঝাড়ী পশু মেলার নামে ১ মার্চ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে মুক্তা র্যাফেল ড্র ও সার্কাসের নামে শুরু হয়। মুক্তা র্যাফেল ড্র দৈনিক মন মাতানো আকর্ষণীয় ও দামি পুরস্কারের নামে চলছে টিকিট বিক্রি। আর এসব লটারির টিকিট কিনে সর্বশান্ত হচ্ছে ব্যবসায়ী, তরুণ সমাজ ও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। থাকছে ৭ থেকে ৮টি মোটরসাইকেল, গরু-বাছুর, ফ্রিজ ও মটরসাইকেলসহ ৪৩ থেকে ৪৫টি পুরস্কার।
মুক্তা র্যাফেল ড্র’র সত্ত্বাধিকারী কাজল ভুইয়া ও তার প্রধান ম্যানেজার আফজাল এর সার্বিক দৌরাত্বে আরো ১৫-২০ সহ ম্যানেজারের মাধ্যমে চলছে মুক্তা র্যাফেল ড্র। অপরদিকে ধুকুরঝাড়ী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় অফিসকে হাউজি অফিস ও মাঠে বসানো হয়েছে বিশাল হাউজি প্যান্ডেল। গত ৩ মার্চ রোববার থেকে হাউজি নামে জমজমাট জুয়ার আসর পরিণত হয়েছে।
হাউজি পরিচালনায় রয়েছে ৩নং ধামইর ইউপি চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দীন, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের কর্মরত উচ্চমান সহকারী শাহিন হোসেন ও জুয়েল, বিআরটিসির তরিকুল, দলিল লেখক মমিনুল, ব্যবসায়ী মোস্তফা, ইউপি সদস্য মমতাজ, সেতাবগঞ্জের মানিকুল ও নজরুলসহ আরো অনেকে।
ধুকুরঝাড়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র হওয়ার পরও প্রধান শিক্ষক স্কুল বন্ধ করে এ আসরের ব্যবস্থা করিয়েছে। সরকার শিক্ষা ব্যবস্থার যেখানে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে কিন্তু ধুকুরঝাড়ী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ করে চালানো হচ্ছে হাউজি ও র্যাফেল ড্র এর আসর।
এ ব্যাপারে ধুকুরঝাড়ী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিমল চন্দ্র দাসকে স্কুল বন্ধে কোনো নোটিশ পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাকে কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আমাকে ডেকে জানতে চাইলে আমি এটাই বলেছি। ধুকুরঝাড়ী পশু মেলার নামে সর্বশান্ত হাউজি ও র্যাফেল ড্র বসিয়ে আয়োজক কমিটি কামিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। স্থানীয় প্রশাসন, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও প্রভাবশালী নেতাকর্মীর কাছে চলে যাচ্ছে আকর্ষণীয় উপটোকন। পুরস্কারের নামে লক্করঝক্কর মার্কা জিনিসপত্র রং বার্নিশ করে চালিয়ে দিচ্ছে ভাগ্যবান ব্যক্তিদের।
তিনি আরও জানান, এসব জুয়ার নামে হাউজি ও র্যাফেল ড্র বসিয়ে বাড়ছে চুরি ও ছিনতাই। হাউজি ও র্যাফেল ড্র বন্ধে স্থানীয় এলাকাবাসী ও সচেতন মহল প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে কখনই এ ধরণের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে না। আমি ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছি স্কুল বন্ধ রেখে এ ধরণের হাউজি ও র্যাফেল ড্র বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দিনাজপুর বিরল থানা অফিসার ইনচার্জ এ টি এম গোলাম রসুল জানান, ধুকুরঝাড়ী মেলার অনুমতি আছে তবে হাউজি ও র্যাফেল ড্র সহ কোনো প্রকার জুয়ার অনুমতি নাই।
পুলিশ সুপার আবু সায়েম জানান, মেলায় হাউজি বা জুয়ার কোনো অনুমোদন দেওয়া হয় না। এসব মেলার অনুমোদন জেলা প্রশাসক দিয়ে থাকে। তিনি নির্দেশ দিলেই আমি তাৎক্ষণিক হাউজি ও র্যাফেল ড্র জুয়া বন্ধের ব্যবস্থা নিবো।
ধুকুরঝাড়ী মেলার হাউজি ও র্যাফেল ড্র বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল আলম জানান, আমরা শুধু পশু মেলার অনুমোদন দিয়েছি কোনো হাউজি বা র্যাফেল ড্র এর অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
Leave a Reply