শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৪ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক//
ঝালকাঠিতে ঘুষের দাবিতে আওয়ামী লীগনেতা এক ইউপি সদস্যকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে ঝালকাঠি সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে (৫)২ ধারা দন্ডবিধির ৩০২ ধারায় মামলা হয়েছে। রবিবার দুপুরে সদর উপজেলার লেশপ্রতাপ গ্রামের নিহত ইউপি সদস্য খলিলুর রহমান মন্টুর স্ত্রী নাজমা বেগম বাদী হয়ে ঝালকাঠির জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে ৮ জনকে আসামী করে এ মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিক দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বরিশাল এর উপ-পরিচালককে মামলাটি তদন্ত করে আগামী ২৬ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। অপর আসামীরা হলেন, সদর উপজেলার বারইগাতি গ্রামের আব্বাস তালুকদার, ইছাহাক তালুকদার, সামসুল হক তালুকদার, ইয়াসিন তালুকদার, সুলতান তালুকদার, আবদুর রহিম ওরফে রাসেল ও নূরুল হক।
মামলার বিবরণে জানাযায়, বাসন্ডা ইউনিয়নের লেশপ্রতাপ গ্রামের এক ব্যবসায়ী ইউপি সদস্য ও নয় নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি খলিলুর রহমান মন্টুর বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বলে এসআই দেলোয়ার হোসেন ইউপি সদস্য মন্টুর কাছে এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। মন্টু ২৫ হাজার টাকা এসআই দেলোয়ারকে দেন। বাকি ৭৫ হাজার টাকার জন্য মন্টুকে চাপ দেন তিনি। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় মন্টুকে গ্রেপ্তারের ভয় দেখানো হয়। মামলার বাদীর কাছ থেকে বড় অংঙ্কের টাকা নেওয়ার খবর পেয়ে মন্টু এসআই দেলোয়ারকে ঘুষ দেওয়া ২৫ হাজার টাকা ফেরত চাইলে ক্ষিপ্ত হন দেলোয়ার। মন্টুকে ১৪ সেপ্টেম্বর সকালে শহরের তরকারিপট্টির ভাড়া বাসায় দেখা করতে বলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। মন্টু ওই বাসায় গেলে এসআই দেলোয়ার তাকে ঘরের ভেতর আটকে নির্যাতন করেন। এতে মন্টুর একটি পা ভেঙে যায় এবং মাথা ও বুকে গুরুতর আঘাত লাগে। পা ভাঙা অবস্থায়ই মন্টুকে গ্রেপ্তার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন এসআই দেলোয়ার। সপ্তাহ খানেক পরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয় মন্টুকে। কারাগার থেকে গুরুতর অবস্থায় মন্টুকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কারা শাখায় ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর মন্টুর নাম কাটিয়ে ঝালকাঠি কারাগারে নিয়ে আসেন এসআই দেলোয়ার। কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে মন্টুকে ২৯ সেপ্টেম্বর আবারো বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কারা শাখায় ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৩ অক্টোবর রাতে মন্টুর মৃত্যু হয়। মামলার বাদী নিহতের স্ত্রী নাজমা বেগম অভিযোগ করেন, আমার স্বামীকে একটি মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে উপপরিদর্শক (এসআই) দেলোয়ার হোসেন এক লাখ টাকা দাবি করে ২৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। এর পরও এসআই দেলোয়ার বাকি টাকার জন্য আমার স্বামীকে তাঁর তরকারি পট্রির ভাড়া বাসায় ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে পা ভেঙে হাসপাতালে ভর্তি করান। মিথ্যা মামলায় ঘুষের টাকা নিয়েও স্বামীকে নির্যাতনে হত্যা এবং সন্তানদের এতিম করার জন্য এসআই দেলোয়ারের বিচার দাবি করেন নিহতের স্ত্রী।
বাদীর আইনজীবী আবদুর রশীদ সিকদার বলেন, ঘুষের দাবিতে মন্টুকে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতনের কারণে মন্টুর মৃত্যু হয়েছে। ঘুষ নেওয়া এবং দাবি করায় দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের (৫)২ ধারা এবং দন্ডবিধির ১০৯/১১৪/১৬১/৩০২/৩৪ ধারায় মামলা দায়ের করেছি। এসআই দেলোয়ারের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগও আনা হয়েছে। এ কাজে তাকে যারা সহযোগিতা এবং প্ররোচণা দিয়েছেন তাদেরকেও আসামী করা হয়েছে।ঝালকাঠি সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার বিরেুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত। নিহত ইউপি সদস্য খলিলুর রহমান মন্টুর বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজির মামলা থাকায় তাকে গ্রেফতার করতে গেলে সে রিকশা থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় আড়ৎদ্দার পট্রিতে ড্রেনে পড়ে তার একটি পাঁ ভেঙে যায়। তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়েছে। হাসপাতালে সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে হার্ট এ্যাটাকে মারা যায়।
Leave a Reply