বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫১ পূর্বাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি ॥ ঝালকাঠির শহরতলীর কিফাতনগর এলাকায় পাঁচটি নদীর মোহনায় গড়ে ওঠা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যবেষ্টিত ধানসিঁড়ি ন্যাশনাল ইকোপার্ক প্রকল্পটি দুই যুগ পার হলেও বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। জমি সংক্রান্ত মামলা ও প্রশাসনিক জটিলতায় থমকে আছে বহুল আলোচিত এ প্রকল্পটির অগ্রগতি। অথচ প্রকৃতিপ্রেমী ও পর্যটকদের কাছে এটি একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠতে পারত।
২০০২ সালে গাবখান, ধানসিঁড়ি, সুগন্ধা, বিশখালি ও বাসন্ডা নদীর মোহনায় ৫৫ একর খাস জমিতে একটি জাতীয় ইকোপার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। প্রকল্পটির প্রাথমিক কাজ শুরু হয় ২০০৭-০৮ অর্থবছরে, যেখানে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বালু ভরাটসহ ভূমি উন্নয়ন কাজ করা হয়। কিন্তু এরপরই স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল ৩৫ একর জমির মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করে দেয়। মামলাটি এখনো উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
এমন দীর্ঘসূত্রতা ও অনিশ্চয়তার ফলে হতাশ ঝালকাঠিবাসী। প্রকল্পটি আজও কাঙ্ক্ষিত পরিণতি না পাওয়ায় পর্যটনের সম্ভাবনা যেমন থমকে গেছে, তেমনি স্থানীয় অর্থনীতির বিকাশও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অবকাঠামোগত কোনো সুযোগ-সুবিধা না থাকায় যারা বেড়াতে আসছেন, তাদের পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে।
ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা সোমা আক্তার বলেন, “ঝালকাঠিতে ঘোরার জায়গা সীমিত। ধানসিঁড়ি পার্কে এসেছি, কিন্তু শিশুর জন্য কোনো ওয়াশরুম নেই, খুব কষ্ট হয়েছে।” চাকরিজীবী সোবাহান মোল্লা জানান, “বসার জায়গা না থাকায় ঘুরতে এসেও ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।”
বিশেষ করে নারী ও শিশুর জন্য নেই প্রয়োজনীয় টয়লেট, বিশুদ্ধ পানি কিংবা নিরাপদ বিশ্রামের জায়গা। এমন পরিস্থিতিতে পর্যটকদের আকৃষ্ট করাটা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান বলেন, “জমির মালিকানা সরকারের কাছেই আছে। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা চলছে। মামলার রায় পাওয়া গেলে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।”
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শুধু ঝালকাঠির পর্যটন নয়, বরং গোটা দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ করে একটি আধুনিক ইকোপার্ক গড়ে তোলা গেলে তা শিক্ষার্থী, গবেষক ও ভ্রমণপিপাসুদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হতে পারে।
এখন প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি এবং সুপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগ। তাহলেই দুই যুগের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাস্তবে রূপ পাবে ধানসিঁড়ির সেই স্বপ্নের ইকোপার্ক।
Leave a Reply