সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৫ অপরাহ্ন
এইচ এম হেলাল ॥ আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে বিএনপিপন্থী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন বেশি হচ্ছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে। এমন অভিযোগ আ’লীগের নেতাকর্মীদের। তারা বলছেন, নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার পর দলের ত্যাগী নেতারা মেয়রের কাছে ঘিষতে পারছেন না। উদাহরণ টেনে তারা বলেন, আওয়ামীপন্থী ঠিকাদারদের বাদ দিয়ে বিএনপিপন্থী ঠিকাদার মাহফুজ খানকে সকল কাজ দেয়া হয়েছে। যিনি বিএনপি-জামায়াত জোটের সরকার বিরোধী আন্দোলনে অর্থ যোগান দিতেন। তার বিরুদ্ধে আ’লীগ সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময় দপদপিয়া ব্রীজের ঢালে আব্দুল্লাহ পরিবহণ নামক যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ মামলাও হয়েছিল। সেই মামলায় ২০১৫ সালে ৩০ জানুয়ারী নলছিটি থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতারও করেছিল।
সূত্রমতে, ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার বিএনপি পন্থী ঠিকাদার মাফুজ খান ৫ বছরের গ্যারান্টি দিয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে আধুনিক পেভার মেশিন দিয়ে নির্মাণ কাজের অর্ডার পায়। এমনই দাবী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের এম খান গ্রুপের স্বত্ত্বাধকিারী মাহফুজ খানের। ওই সময়ের মধ্যে যে কোন ধরনের সংস্কার কিংবা মেরামত প্রয়োজন হলে ঠিকাদার নিজ দায়িত্বে তা করে দেবেন এমন চুক্তি রয়েছে মাহফুজ খানের সাথে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক বিএনপিপন্থী হওয়ায় খোদ ক্ষমতাসীন দলের বরিশালের একাধীক ঠিকাদার থাকা সত্বেও কেন তাকে এত টাকার কাজ দেয়া হয়েছে ?
এদিকে ঠিকাদার মাফুজ খানের বিরুদ্ধে রয়েছে দেশ বিরুদী জামাত বিএনপির অর্থ জোগান দাতার অভিযোগ। সুত্র বলছে, দপদপিয়া ব্রিজের ঢালে আব্দুল্লাহ পরিবহনে অগ্নি সংযোগের মামলায় মাহফুজ খানকে অর্থ যোগানদাতা ও হুকুমদাতা হিসেবে ২০১৫ সালে জানুয়ারী মাসের ৩০ তারিখ শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টার সময় এম খান গ্রুপের স্বত্ত্বাধকিারী মাহফুজ খানকে নলছিটি উপজলোর চায়না মাঠরে ভলিবল খেলার কোর্ট থেকে আটক করে নলছিটি থানা পুলিশ। সে সময় নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি মাকসুদুর রহমান ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফিরোজ আলম পৃথক পৃথক ভাবে সাংবাদিকদের জানান, দপদপিয়া ব্রিজের ঢালে আব্দুল্লাহ পরিবহনে অগ্নি সংযোগের মামলায় মাহফুজ খানকে অর্থ মদদ ও হুকুমদাতা হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেই মামলায় মাফুজ খান দীর্ঘ তিনমাস কারাভোগ করেন।
অপরদিকে বিসিসির সড়কের কাজ শেষ হলেও ফের সমলোচনায় আসেন এই বিএনপি পন্থী ঠিকাদার মাহফুজ খান। চলতি মাসের (২৩ জনু) তারিখ বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায় আগৈলঝাড়া উপজেলা সদর থেকে রাজিহার হয়ে ঘোষেরহাট পর্যন্ত বরিশাল অংশে ৩০কোটি টাকা ব্যায়ে দুটি কালভার্টসহ ১৮ফুট প্রশস্তের ১২ দশমিক ৭০ কিঃ মিঃ সড়ক নির্মানের বাস্তবায়নের কাজ চলছে। ওই সড়কে নিম্নমানের কার্পেটিং করা হলে ওই কার্পেটিং হাত দিয়ে টেনে তোলেন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। এর পরে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল স্থানীয়রা। যা বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
নি¤œমানের কাজের খবর পেয়ে ঠিকাদার মাহফুজ খান উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করতে সরেজমিন দেখতে যান। তবে মাহফুজ খানকে দেখে স্থানীয়রা আরো ক্ষীপ্ত হলে পুনরায় সংস্কার কাজ করে দেওয়ার ওয়াদা দিয়ে দ্রুত সেখান থেকে কেটে পড়েন মাহফুজ খান। এদিকে আগৈলঝাড়ায় এমন ঘটনার সংবাদ ছড়িয়ে পড়ায় নগরবাসী অজানা শংকায় রয়েছে বিসিসি’র সড়ক নিয়ে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামীপন্থী এক ঠিকাদার বলেন, যার বিরুদ্ধে দেশ বিরোধী চক্রান্ত ও বিএনপি-জামায়াতের অর্থ যোগানদাতার অভিযোগ রয়েছে তাকে দিয়ে বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নগরীর সড়কগুলো নির্মাণ কাজ কেন করাচ্ছেন তা বোধগম্য নয়। তারা অভিযোগ করেন, নগরপিতার আশপাশের লোকজন আওয়ামী লীগের সুনাম ক্ষুন্নের জন্যই এমন পরামর্শ দিচ্ছেন মেয়রকে।
এ ব্যাপারে মোঃ মাহফুজ খান বলেন, আগৈলঝাড়া উপজেলা সদর থেকে রাজিহার হয়ে ঘোষেরহাট পর্যন্ত সড়কটি পুরাতন। তা ছাড়া বৃষ্টি হবার কারনে ভিটোমিন ধুয়ে কার্পেটিং উঠে যায়। কাজের সাইড থেকে ফোন দিলে আমরা গিয়া দেখেছি। বলছি নতুন করে করতে এবং নতুন করে কাজ চলতাছে। নগরীতে সড়ক মেরামত করা হয়েছে তা উঠে যাওয়ার সম্ভবনা আছে কি না এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা দেখেন কেউ কোন রাস্তার কিছু উঠাতে পারেন কি না ? রাজিহার হয়ে ঘোষেরহাট পর্যন্ত যে রাস্তা হচ্ছে দ্যাখেন কেউ তা উঠাতে পারেন কি না। এটা হলো রাজনীতি, থ্রী প্লান করে শো করছে আর কিছু না।
তিনি বলেন, এটা আমাদের ব্যবসা না, এর সাথে অন্য রাজনীতি জড়িত। ২০১৫ সালে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ দেয়ার হুকুমদাতা এবং সরকারী বিরোধী কাজে অর্থের যোগানদাতা হিসাবে আপনাকে কারাভোগ করতে হয়েছে এই বিষয় গুলো সত্য কি না তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, “এই মামলায় আমু মিয়া তো লাখ লাখ মানুষেরেই মিথ্যা-ই দিয়া থুইছে। এডার লগে আবার আপনার এডা লাগবে কিতে ? এরকমের কোন ঘটনা হয়নি। তিন মাস কারভোগ করছেন? “না এইডা মিথ্যা কথা, ওই খানে ১৫ দিন ছিলাম। আমু মিয়ারে চামে টাহা দিনাই হেইয়ার লইগ্যা সে মোরে আসামী করছে”।
এদিকে অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, নগরীতে পেভার মেশিন দিয়ে সড়ক নির্মাণ কাজটি কোন প্রকার টেন্ডার ছাড়াই ঠিকাদার মাহফুজ খানকে দেয়া হয়েছে। যা কিছুদিন পূর্বে বেসরকারি টিভি চ্যানেল ৭১এ মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তার উত্তরে মেয়র সাদিক জানিয়েছিলেন, অন টেস্টে ঠিকাদার মাহফুজ খানকে কাজ দেয়া হয়েছে।
পত্রিকায় টেন্ডার ঘোষণার পর সড়কের কাজটি ঠিকাদার মাহফুজ খানকে দেয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায় প্রকৌশলী আনিচুর রহমান বলেন, টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি ছাপানো হয়েছিল। তবে কত তারিখ এবং কোন পত্রিকায় তা তিনি বলতে পারেন নি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে ভাল বলতে পারবেন মেয়র মহোদয়ের মুখপত্র। আমিতো আর মেয়র মহোদয়ের মুখপত্র নই।
এ বিষয় মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহকে একাধীকবার তার মুঠো ফোনে ফোন দিলে তিনি তা রিসিফ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি
Leave a Reply