সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০০ পূর্বাহ্ন
আকতার ফারুক শাহিন॥ বরিশাল নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের ২৭টিকেই রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সোমবার বিকালে রোড জোন ঘোষিত এলাকার তথ্য পাঠানোর পাশাপাশি ঢাকা থেকে দেয়া জরুরি বার্তায় রেড জোন এলাকা লকডাউন করাসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেয়া হয়।
তবে চলমান বাস্তবতায় এখনই পুরো সিটি কর্পোরেশন এলাকা লকডাউন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন। আপাতত মডেল হিসেবে নগরীর ছোট্ট একটি এলাকা অথবা ১টি বা ২টি ওয়ার্ড লকডাউন করে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করা হবে।
সব শর্ত মেনে আলোচ্য পাইলটিং বা মডেল এলাকায় লকডাউন সফল করা গেলে পরবর্তীকালে অন্যান্য এলাকা লকডাউনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এ দিকে জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, নগর এলাকায় লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেবে স্বাস্থ্য বিভাগ ও সিটি কর্পোরেশন। তাদের নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগ।
সরকারি হিসেবে বরিশাল নগরের ৩০টি ওয়ার্ডে মোট জনসংখ্যা ৪ লাখ ১৯ হাজার ৪৮৩ জন। সোমবার পর্যন্ত এই নগরে মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা ৭৫২ জন। এ ছাড়া ৮ জন মারা গেছে করোনা আক্রান্ত হয়ে।
এ দিকে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় যেখানে মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা ১ হাজার ৬৬৯ জন সেখানে এই সংখ্যার প্রায় অর্ধেকই বরিশাল নগরের বাসিন্দা। পুরো বিভাগে মারা যাওয়া ৩৩ জনের মধ্যে বরিশাল নগরীর মৃত্যুর সংখ্যাও এক-চতুর্থাংশ প্রায়। এমন পরিস্থিতিতে সোমবার ঢাকা থেকে আসে রেড জোনের ঘোষণা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রধান কার্যালয় থেকে আসা ওই নির্দেশনায় নগরীর ২৬, ২৭ এবং ৩০নং ওয়ার্ডকেই কেবল ঘোষণা করা হয়েছে গ্রিন জোন হিসেবে। এ ছাড়া বাকি ২৭টি ওয়ার্ড-ই রেড জোন। এখানে কোনো ইয়েলো জোন নেই বলে উল্লেখ রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যাপিংয়ে।
বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রেড জোন’র ম্যাপ পাঠানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক আমাকে ফোন করে তাদের দেয়া নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশনায় রেড জোন ঘোষিত এলাকায় লকডাউন ঘোষণাসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেছেন তিনি। ওই নির্দেশনা বাস্তবায়নের সুপারিশ করে বরিশালের সংশ্লিষ্ট সব দফতর প্রধানদের চিঠি দেয়া হয়েছে।
এখনই নগরীর ২৭টি ওয়ার্ড লকডাউন হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘লকডাউন হবে কিনা তার সিদ্ধান্ত নেবে স্বাস্থ্য বিভাগ এবং সিটি কর্পোরেশন। এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সহযোগিতা করব আমরা ও জেলা প্রশাসন। তবে এবার লকডাউন বাস্তবায়ন প্রশ্নে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যে সব নির্দেশনা রয়েছে তার সবগুলো আয়োজন সম্পন্ন করে লকডাউনের ঘোষণা দিতে হবে। এখানে অনেকগুলো বিষয় এবং দফতর জড়িত। সে সব সম্পন্ন করেই কেবল লকডাউনে যেতে পারব আমরা।
বরিশালের জেলা প্রশাসক এস.এস অজিয়র রহমান বলেন, ‘রেড জোন হিসেবে বরিশাল নগরীর ২৭টি ওয়ার্ড লকডাউন বিষয়ে আজ মঙ্গলবার জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধিদের মধ্যে ভার্চুয়াল মিটিং হয়েছে। যেহেতু এক সঙ্গে ২৭টি ওয়ার্ড লকডাউন করার ক্ষেত্রে অনেক বড় ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে তাই এখনই সে দিকে যাচ্ছি না আমরা। তাছাড়া এই পদ্ধতি বাস্তবায়নে আমাদের কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে সে সম্পর্কেও স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই। তাই প্রাথমিকভাবে নির্দিষ্ট একটি এলাকা লকডাউন করব আমরা। পাইলটিং হিসেবে ওই নির্দিষ্ট এলাকার লকডাউনকালীন উদ্ভূত সব পরিস্থিতির মোকাবেলা এবং শিক্ষা নেয়ার পর আমরা নগরীর বাকি রেড জোনগুলোতে লকডাউন দেয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেব।’
শুরুতে পাইলটিং হিসেবে বরিশাল নগরের কোন্ এলাকা লকডাউন করা হবে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা ম্যাপিং’র কাজ করছি। সবদিক বিবেচনা করে ঠিক করা হবে যে নগরের কোন্ এলাকায় পাইলটিং হিসেবে লকডাউন করা হবে। এ ক্ষেত্রে নগর ভবন এবং জেলা প্রশাসনও কাজ করছে।’
এ দিকে ঢাকা স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে আসা রেড জোনের ম্যাপিং অনুযায়ী বরিশাল নগরীর ১২নং ওয়ার্ডে করোনা শনাক্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি দেখানো হয়েছে। এই ওয়ার্ডে মোট জনসংখ্যা ১৪ হাজার ৬১১ জন। আর ১২ জুন পর্যন্ত এখানে মোট শনাক্ত হওয়া করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮৮ জন। এ ছাড়া ৫ হাজার ৭৯১ জন বাসিন্দার এলাকা ১২নং ওয়ার্ডে ৮১ এবং ৬ হাজার ৩৬০ জন বাসিন্দার এলাকা ১৬নং ওয়ার্ডে ৭৪ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন।
বরিশাল নগরীতে মোট শনাক্ত হওয়া করোনা রোগীদের মধ্যে মেট্রোপলিটন পুলিশের সদস্য রয়েছেন ১৫১ জন। এ ছাড়া পুলিশ পরিবারের ১৬ জন সদস্যের মধ্যেও শনাক্ত হয়েছে করোনা।
তালিকা অনুযায়ী উল্লেখিত ৩টি ওয়ার্ড কিংবা এর যে কোনো একটি ওয়ার্ডে পাইলটিং হিসেবে শুরু হতে পারে লকডাউন। আলোচ্য ৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১ ও ১২নং ওয়ার্ডে রয়েছে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রধান কার্যালয় এবং পুলিশ লাইনস।
Leave a Reply