সোমবার, ০৩ মার্চ ২০২৫, ০৭:৪৮ অপরাহ্ন
রবিউল ইসলাম রবি ॥ বরিশাল নগরীর ১৩, ১৪ ও ১৫ নং ওয়ার্ড বাসিন্দাদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে উঠেছে এক ডজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী। তাদের গডফাদার হলেন- রুবেল শরীফ (৪০) ওরফে নাক কাটা রুবেল। এ সকল অপরাধীরা নানা অপরাধের অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে একাধিকবার আটক বা গ্রেফতার হয়েছেন। আইনের ফাঁক ফোকর থেকে বেড়িয়ে এসে আবারো এলাকাজুড়ে সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করে তারা। সম্প্রতি ১৫ নং ওয়ার্ডে মো. সবুজ (২৯) ওরফে ভাগিনা মিলনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করেছে সন্ত্রাসীরা। ঘটনার পরই স্থানীয়রা আশংকাজনক অবস্থা আহত সবুজকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগে ভর্তি করে। পরে অর্থপেডিক্স ওয়ার্ডে রেফার করলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্মরত চিকিৎসক রোববার (২ মার্চ) ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে প্রেরণ করেছেন বলে জানান সবুজ। অনুসন্ধানকালে বেড়িয়ে এসেছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।
স্থানীয় ও থানা সূত্রে জানা গেছে, মো. রুবেল শরীফ (৪০) ওরফে নাক কাটা রুবেল ও তার বড় ভাই আবুল বাসার (৪২) ওরফে রাজন। এ দুই জন পটুয়াখালী দুমকি উপজেলার পূর্ব কার্তিকপাশা গ্রামের মৃত. আলতাফ শরীফের ছেলে। এলাকায় নানা অপকর্মে অভিযুক্ত থাকায় এলাকাবাসী নাক কাটা রুবেলের এক পা ভেঙ্গে দিয়েছিল। তারপর এলাকা ছেড়ে বরিশার নগরীর বাংলাবাজার ‘শহীদ আলতাফ স্কুল’ সংলগ্ন এলাকায় বাসা করে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দিচ্ছে। বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় নাক কাটা রুবেলের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। ২০১৩ সালের ১০ জুন দায়েরকৃত ৮ নং , ২০২৩ সালের ৫ জুন দায়েরকৃত ৯ নং ও ২০০৯ সালের ১৬ অক্টোবর দায়েরকৃত ৫১ নং মামলার আসামি রুবেল। নাক কাটা রুবেলের ভাই রাজনের বিরুদ্ধেও রয়েছে একাধিক মামলা। ২০২৩ সালের ৫ জুন দায়েরকৃত ৯ নং ও ২০২৪ সালের ২৩ মার্চ দায়েরকৃত ৬০ নং মামলার আসামি রাজন।
এই দুই ভাইয়ের ছত্রছায়ায় মাদক ক্রয়-বিক্রয় করছে বাংলা বাজার সংলগ্ন আরশেদ আলী কন্টেকদার গলির ভাড়াটিয়া বাসিন্দা রিকশা চালক আনারের ছোট ছেলে অলি (১৯)। এ টিমে অংশ নিয়ে অল্পতেই অলি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। রিফিউজি কলোনির স্থায়ী বাসিন্দা মৃত. আকতার কসাইয়ের ছেলে শাহিন (৩৫) ও তুহিন (৩০)। এ দুই ভাই ইয়াবা শাহিন-তুহিন নামে পরিচিত। বড় ভাই নাক কাটা রুবেলের কাছ থেকে ইয়াবা আনে আর ছোট ভাই বিক্রি করে। ইয়াবাসহ একাধিকবার ডিবি পুলিশের হাতে আটক হয়েছিল তুহিন। রয়েছে একাধিক ইয়াবা মামলা।
নাক কাটা রুবেলের আপন মামাতো ভাই মো. সোহেল (২৮) ওরফে বাবা সোহেল। নগরীর ১৩ নং ওয়ার্ড কাজিপাড়া এলাকায় সোহেল ভাড়া থাকলেও আড্ডা জমায় রিফিউজি কলোনীতে। তার বাবা ছালাম ওরফে ফেন্সি ছালাম স্ত্রীকে নিয়ে চরকাউয়া হিরণ নগর এলাকায় বসবাস করে। বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় ২০২৩ সালের ৫ জুন দায়েরকৃত ৯ নং মামলার আসামি সোহেল।
নাককাটা রুবেলের অপর এক ভয়ংকর সহযোগী হলেন রিফিউজি কলোনির স্থানীয় মো. জব্বার কসাইয়ের ছেলে আব্দুল হামিদ ( ৩০) ওরফে বাপ্পী। বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় ২০১৫ সালের ১৭ মে দায়েরকৃত ৩৪ নং , ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর দায়েরকৃত ৮ নং ও ২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর দায়েরকৃত ১৩ নং মামলার আসামি বাপ্পী।
নাককাটা রুবেলের প্রধান ইয়াবা সরবরাহকারী হলেন- রিফিউজি কলোনির রাজবাড়ির ভাড়াটিয়া মৃত. আব্দুল ছত্তারের ছেলে মো. জাহাঙ্গির আলম (৫০) ওরফে হাড্ডি জাহাঙ্গির। ২০১৫ সালের ১৭ মে দায়েরকৃত ৩৪ নং , ২০২২০ সালের ২৮ মার্চ দায়েরকৃত ৮৮ নং ও ২০১০ সালের ৭ জানুয়ারী দায়েরকৃত ১১নং মামলার আসামি। সর্বশেষ চলিত বছরের ৩১ জানুয়ারি ডিবির এসআই রাহাতুল ২শ পিচ ইয়াবা সহ হাড্ডি জাহাঙ্গীরকে তার বাসভবন থেকে আটক করে।
এ সকল ভয়ংকর অপরাধীদের সাঙ্গপাঙ্গ হলেন- নগরীর ১৪ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগ সভাপতি তানভীর হোসেন হীরা (৩০)। এই হীরার সহযোগিতায় নাককাটা রুবেল বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক রইজ আহম্মেদ মান্নার সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। রিফিউজি কলোনীর ভাড়াটিয়া বাসিন্দা রাকিব (২৩) ওরফে সবজি রাকিব, আলামিন ওরফে বুলেট আলামিন, কাজীপাড়ার শাহালম (৪০) ওরফে গোলআলু শাহালম, নগরীর সার্কুলার রোডের বাসিন্দা মো. হানিফ ওরফে টোকাই হানিফ। নানা অপরাধে জেল থেকে বেড়িয়ে নাক কাটা রুবেলের নেতৃত্বে এ সকল অপরাধীরা প্রতিদিন রিফিউজি কলোনির সামনে রহিমের হোটেল ও মিঠুর চায়ের দোকানে আড্ডা জমায়। যা প্রায় সব সময়ই চলমান থাকে।
সম্প্রতি নগরীর ১৫ নং ওয়ার্ড মুনসুর কোয়ার্টার এর বাসিন্দা মো. সবুজ (২৯) ওরফে ভাগিনা মিলনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে তার সাথে থাকা নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয় সন্ত্রাসীরা। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বটতলা আমির কুটির হরিজন কলোনি (মেথর পট্টি) নামক স্থানে এ হামলা ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রথমে আহত সবুজের সাথে থাকা আত্মীয়-স্বজনরা বলেছেন, রুবেল, অলি, তুহিন, সোহেলের নেতৃত্বে ১০/১২ জন এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। পরে আহত সবুজ কারো নাম বলতে রাজি হননি তবে তিনি হামলাকারীদের খুঁজে বের করতে সাংবাদিক ও প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন এবং সুস্থ হয়ে মামলা দায়ের করবেন। চিকিৎসাধীন সবুজ আরো বলেন, শেবাচিম হাসপাতালে প্রথমে নাক-কান-গলা বিভাগে এর তিন দিন পর হাসপাতালের অর্থপেডিক্স ওয়ার্ডে রেফার করলে কর্মরত চিকিৎক এক দিন পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা প্রেরণ করেন।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দার সাথে আলাপ করলেও ওই সব অপরাধীদের বিরুদ্ধে কেউই প্রকাশ্যে স্বাক্ষাৎকার দিতে রাজি হয়নি। তারা বলে থানা ও আদালতে এ সব অপরাধীদের তথ্য বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানায় খোঁজ নেলেই বেড়িয়ে আসবে।
Leave a Reply