শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৮ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: সর্বত্র জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহ শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় স্থানীয় ছাত্র জনতা নিয়ে স্বেচ্ছাসেবীবাহিনী গঠন, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজে ছাত্রদের সহায়তা করা, সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেজুরভিত্তিক সন্ত্রাসী ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার দাবিতে বরিশালের সাধারণ শিক্ষার্থী ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার বেলা ১১ টায় নগরীর আশ্বিনী কুমার হল চত্বরে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা প্রশাসনকে তাদের দায়িত্ব বুঝে নিয়ে মাঠে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান।
বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমি হকের সভাপতিত্বে এবং সিটি কলেজের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বিএম কলেজের শিক্ষার্থী জাকির হোসেন ও মারিয়াম বিনতে মোর্শেদ, বরিশাল মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাত আরা রিয়া, বরিশাল পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী সোহানুর ইসলাম সিয়াম, বরিশাল কলেজের শিক্ষার্থী রাইদুল ইসলাম সাকিব ও নদী আক্তার ও বরিশাল টেকনিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী ইসান ইসলাম প্রমুখ।
এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, জুলাই গণহত্যায় শতাধিক ছাত্র জনতা নিহত হয়েছে এবং কয়েক হাজার আহত অবস্থায় হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। এই সকল ভাইদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বৈরাচারী সরকারকে পদত্যাগ করিয়ে আমাদের দেশকে মুক্ত করেছি। কিন্তু কিছু দুষ্কৃতিকারী আমাদের অর্জনকে ভূলন্ঠিত করার জন্য সারাদেশে লুটপাট, অগ্নিসংযোগে মেতে উঠেছে। এসব দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে আমরা পাড়ায় মহল্লায় শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি। সারাদেশ জুড়ে রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ছাত্র ভাইয়েরা রাত দিন কাজ করছে। সব ধরনের পরিবহন শ্রমিকদের ট্রাফিক নিয়ম মেনে রাস্তায় শৃঙ্খলভাবে চলার আহ্বন জানাচ্ছি এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কাজে নিয়জিত ছাত্র ভাইদের সকল পরিবহন চালক ও সাধারণ মানুষের সাথে বিনয়ী আচরণ করার অনুরোধ করছি।
বক্তারা আরো বলেন, অবিলম্বে প্রশাসনকে তাদের দায়িত্ব বুঝে নিয়ে মাঠে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। এই দেশ আমাদের সবার। সকলে মিলে দেশকে একটি মানবিক সমাজে রুপান্তর করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সকল শহীদ পরিবারকে তাদের একজীবনের উপার্জনসম ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং আহতদের সম্পূর্ণ চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে হবে। ছাত্র জনতার আন্দোলনে হামলাকারীদের অবিলম্বে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং জুলাই গণহত্যায় শহীদ সকল ভাইদের জাতীয় বীর স্বীকৃতি দিয়ে তাদের নিজ শহরে স্মৃতিফলক উন্মোচন করতে হবে।
বক্তারা বলেন, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবিলম্বে ছাত্র সাংসদ নির্বাচন দিতে হবে। ক্যাম্পাসে সম্পূর্ণ সন্ত্রাসী লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করতে হবে। সকল শিক্ষার্থীদের জন্য প্রথমবর্ষ থেকে বৈধ সিটের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহনে হাফ ভাড়া নিশ্চিত করতে হবে এবং চিকিৎসা সেবা কার্ডের মাধ্যমে সহজলভ্য চিকিৎসা সেবা দিতে হবে।
এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের থেকে রক্ষা করা আরও কঠিন কাজ। স্বাধীনতা রক্ষায় আমাদের সদা জাগ্রত থাকতে হবে। আজ থেকে অত্র এলাকায় (বরিশাল) পুলিশসহ কোন দল, বা গোষ্ঠী কোন দোকান, প্রতিষ্ঠান, বাসাসহ কোন জায়গা থেকে কোন চাঁদা তুলতে পারবে না। কোন ধরণের চাদাবাজির খবর যদি ছাত্রজনতার কাছে আসে তাহলে সম্মিলিতভাবে তা প্রতিহত করা হবে। কোথাও কোন সন্ত্রাস, অরাজগতা, লুটপাট করা যাবে না। আগ্নেয়াস্ত্র কিংবা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কেউ কোন মহড়া দিতে পারবে না। প্রত্যেকের কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকতে হবে। কথা বলার জন্য কেউ কারও ওপর হামলা করতে পারবে না, কথা বলার জন্য কাউকে পুলিশী হয়রানি নির্যাতন গ্রেপ্তার করা চলবে না। জোর করে কাউকে মিছিল সমাবেশে নিয়ে যাওয়া চলবে না। পুলিশ বেআিইনিভাবে কাউকে বিনা ওয়ারেন্টে হয়রানি বা গ্রেপ্তার করতে পারবে না। হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন করতে পারবে না। যথাযথ সন্মান দিয়ে পুলিশ মানুষের সাথে কথা বলবে। এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে মোটরসাইকেল মহড়া দেয়া যাবে না। নারীদের সাথে উপযুক্ত সন্মান দিয়ে কথা বলতে হবে, কোন ধরণের যৌন হয়রানি, নির্যাতন উত্যক্ত করা ইভটিজিং করা চলবে না। এ ধরণের কাজ কেউ করলে তাকে শিক্ষার্থী জনতার সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে। বিভিন্ন ধর্মের কিংবা জাতিস্বত্তার মানুষ ও তাদের বাড়িঘর কিংবা উপসনালয়ে ওপর হামলা করা চলবে না। রাস্তায় কোন ময়লার ভাগার থাকতে পারবে না, শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিটি এলাকায় খেলার মাঠ, ন্যায্য পরিবহন ভাড়া ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
পরে শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল বের নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
Leave a Reply