মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪২ অপরাহ্ন
মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা॥ পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে রিকশা চালিয়ে দারিদ্রতার সাথে সংগ্রাম করে চলেছেন প্রতিবন্ধী রোজিনা বেগম (৩২)। সারাদিন উপজেলার এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাত্রী পরিবহন করেন। তিনি প্রতিবন্ধী দেখে অনেকেই তার রিকশায় উঠতে চায় না। তবুও থেমে থাকে না তার চলার পথ।
জীবন যুদ্ধে হার না মানা এক সংগ্রামী নারী প্রতিবন্ধী রোজিনা। আগৈলঝারা উপজেলার বাগদা গ্রামে তার জন্ম। শিশু বয়সে টাইফয়েডে তার বাম পা বিকলাঙ্গ হয়ে যায়। কিশোরী বয়সেই বরিশালের মুলাদী উপজেলার খেজুরতলা গ্রামের দরিদ্র সুমনের সাথে বিয়ে হয়।
জীবিকার তাগিদে স্বামীর সাথে ছুটে যান ঢাকায়। ১টি ছেলে ও ১টি মেয়ে সন্তানের মা রোজিনা। ছয় বছর পূর্বে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তার স্বামী মারা যায়। মাথার ওপর যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে তার। একদিকে নিজে অসহায় প্রতিবন্ধী অন্যদিকে ছোটো ছোটো দুটি বাচ্চা। কীভাবে চলবে তাদের জীবন? কি করে জীবিকা নির্বাহ করবে? জীবন যুদ্ধে তিনি ভুল সিদ্ধান্ত নেননি। হার মানেনি দারিদ্রতার কাছেও। তখন থেকে ঢাকার শহরে ভাড়ায় রিকশা চালিয়ে জীবিকা উপার্জন শুরু করেন।
পরে তিন বছর আগে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে এক আত্মীয়ের বাড়িতে সন্তানদের নিয়ে আশ্রয় নেন। একপর্যায়ে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি পুরাতন অটোরিকশা ক্রয় করেন।
তিন বছর ধরে উপজেলার বিভিন্ন সড়কে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে ছেলে-মেয়ে নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে উপজেলার সুবিদখালী কলেজ রোড একটি ভাড়াটিয়া বাসায় থাকেন। ছেলে হৃদয় (১০) স্থানীয় একটি হাফিজী মাদরাসায় পড়াশোনা করে। টানাটানির সংসারে মেয়ে রিতুকে (১৩) পড়াশুনা করাতে পারছেন না তিনি।
প্রতিবন্ধী রোজিনা বেগম বলেন, একটি পা পঙ্গু হয়েছে তাতে কি? দুটি হাত ও একটি পা আল্লাহ তায়ালা সবল রেখেছেন। সারাদিন পরিশ্রম করে রিকশা চালিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে সকল কাজ করতে হয়। তারপরও তার মনে কোনো কষ্ট নেই বলেন। পরিশ্রম করে সংসার চালাই। কারো কাছে হাত পাতা লাগে না। ‘আল্লাহ আমাকে কষ্ট করনের জন্য পাঠাইছে’। পরিশ্রম করে সংসার ও ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনা চালিয় মানুষের মতো মানুষ করতে চাই। প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য আবেদন করলেও এখন পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা পাই নাই।
মির্জাগঞ্জ উপজলা পরিষদের চেয়ারম্যান খান মো: আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, সমাজে অনেক সুস্থ মহিলাকে দেখছি কাজ না করে ভিক্ষা করে বেড়ায়। ওই সমস্ত মহিলাদের জন্য রোজিনা একটি দৃষ্টান্ত। নতুন সমাজসেবা অফিসার যোগদান করলে তাকে সহযোগিতার জন্য ভাতা পাবার ব্যপারে জোর সুপারিশ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসা: তানিয়া ফেরদৌস বলেন, তার সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply