রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৮ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: বরিশালে বইছে তীব্র তাপদাহ। ঈদের পর থেকে গড়ে ৩৬-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াল তাপমাত্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে জনজীবন। এদিকে তীব্র গরমে জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, বমিসহ বেড়েছে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ। এতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা ও বয়স্করা। হঠাৎ করেই বাড়তি রোগীর চাপে হাসপাতালে অতিরিক্ত চিকিৎসক দিলেও রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এছাড়া হাসপাতালে দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। তীব্র গরম থেকে শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শিশু ওয়ার্ডে স্বাভাবিকের তুলনায় তিন থেকে চারগুণ শিশু রোগী প্রতিদিন ভর্তি থাকছে। চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। হাসপাতালের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় শিশু ওয়ার্ডে ৪৬ বেডের বিপরীতে ভর্তি রয়েছে প্রায় ২০০ এর অধিক রোগী। শয্যা না পেয়ে হাসপাতালের ফ্লোরেই চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে। বরিশালসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে রোগী আসছে প্রতিনিয়ত।
শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি শিশু সুমাইয়ার মা রেহেনা বেগম জানান, জ্বর আর পেটে ব্যথা থাকায় সুমাইয়াকে নিয়ে বাবুগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েও কোন উন্নতি না হওয়ায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছেন। এখন কিছুটা সুস্থ তার মেয়ে। এখানে ভর্তি একাধিক রোগীর স্বজনরা জানান, তারা বরিশালের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে এসেছেন। সন্তানের বমি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট নিয়ে প্রথমে নিজস্ব এলাকায় ডাক্তার দেখান। সেখানে কোনো ভালো ফল না পেয়ে বরিশাল মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন। অনেকে আবার ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে শিশুকে খাইয়েছেন। হাসপাতালে আসার পর তারা অনেকেই আগের চেয়ে ভালো আছেন বলেও জানান কেউ কেউ।
শেবাচিম হাসপাতালের উপ সেবা তত্ত্বাবধায়ক সাহিদা খানম বলেন, আগের চেয়ে তিন-চারগুণ রোগী বেড়েছে। শয্যা না থাকায় অনেকে ফ্লোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ওয়ার্ডে ২১ জন নার্স রোস্টার ডিউটের মাধ্যমে সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। সব ধরনের সহায়তায় আমরা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। একই অবস্থা হাসপাতালের বহির্বিভাগেও। সেখানেও আগে গড়ে ২০০-২৫০ জন শিশু চিকিৎসা নিলেও বর্তমানে প্রতিদিন চারজন চিকিৎসক গড়ে সাড়ে পাঁচশ রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছেন।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. নুরুল আলম বলেন, বহির্বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ রোগী বেড়েছে। চাপ সামাল দিতে চারজন চিকিৎসক সেবা দিলেও হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
শয্যা সংকট থাকলেও কোনো রোগীকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না জানিয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলম বলেন, বর্তমানে হাসপাতালের রোগীর চাপ অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি। আক্রান্তদের মধ্যে পেটের পীড়া বেশি দেখা যাচ্ছে।
এদিকে তীব্র তাপপ্রবাহে বরিশালের সদর (জেনারেল) হাসপাতালে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর চাপ। বেশিরভাগ রোগী আসছে ডায়রিয়া নিয়ে। অতিরিক্ত রোগীর কারণে হাসপাতালের মেঝেতে সেবা নিতে হচ্ছে অনেককে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ডায়রিয়া ইউনিটে শয্যা সংখ্যা ১২টি হলেও প্রতিদিন গড়ে ৪০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। এত রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। বাধ্য হয়ে ভিন্ন ওয়ার্ডের একটি অংশ খালি করে সেখানে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মেঝেতে চিকিৎসাধীন রোগী সাইফুল ইসলাম জানান, একদিন হলো পেটের পীড়া নিয়ে এখানে ভর্তি হয়েছেন। বেড না পেয়ে মেঝেতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, এই হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বেড সংখ্যা ১২টি। দশ উপজেলার রোগীরা এখানে চিকিৎসার জন্য আসে।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, এই মৌসুমে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে রোগীর চাপ একটু বেশিই থাকে। তবে এবার এখন পর্যন্ত যে চাপ তা বিগত দিনের রেকর্ডকে পেছনে ফেলেছে। আমরা বাধ্য হয়ে ফিমেল মেডিসিন ওয়ার্ড খালি করে সেখান থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেছি।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক মাসুদ রানা রুবেল জানান, সোমবার দুপুর ৩টায় জেলার তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
Leave a Reply