রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪৮ অপরাহ্ন
বাবুগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি প্রভাবে বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে নিরাপদ ও সুপেয় পানির সংকট দিনদিন তীব্রতর হচ্ছে। বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলাও এই সংকটের বাইরে নয়। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গভীর নলকূপ থেকে পানি উত্তোলন করা যাচ্ছে না, কিছু নলকূপে কখনো পানি ওঠে, কখনো আবার ওঠে না। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অধিকাংশ অকেজো নলকূপ অগভীরভাবে স্থাপন করা হয়েছে। তবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্থাপন করা অধিক গভীর নলকূপে সন্তোষজনকভাবে পানি পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে ফ্যাক্টরি বা বড় স্থাপনাগুলোর আশপাশে গভীর নলকূপে পানির প্রবাহ দেখা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে একটি মহল মনে করছেন, মাধবপাশা ইউনিয়নের পাংশা গ্রামে অবস্থিত ‘অমৃত কনজুমার ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড’ তাদের বোতলজাত “অমৃত পানি” ভূগর্ভ থেকে উত্তোলন করায় আশপাশের এলাকায় পানির স্তর নিচে নেমে গেছে, যার ফলে পানি সংকট দেখা দিচ্ছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির প্রোডাকশন ম্যানেজার বিজয় কৃষ্ণ ঘোষ এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাদের পানি উত্তোলনের জন্য সরকারিভাবে অনুমোদিত জরিপ ও লাইসেন্স রয়েছে। তিনি দাবি করেন, বরিশালের অনেক জায়গায় আগে থেকেই খরা মৌসুমে পানি সংকট ছিলো, যা জলবায়ু পরিবর্তন ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফল।
এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, ফ্যাক্টরির আশপাশের বাড়িগুলোতে গভীর নলকূপে পানি পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী ইমদাদুল হক দুলালের বাড়ির সামনের পূর্ব পাংশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নলকূপেও পানি স্বাভাবিকভাবে উঠছে।
অন্যদিকে, বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের বকশিরচর গ্রামের বাসিন্দা এবং উপজেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন জানান, “বৃষ্টির আগ পর্যন্ত আমাদের নলকূপে পানি উঠত না। বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।”
বাবুগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. সুমন বলেন, “খরা মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যায়। ফলে কিছু এলাকায় গভীর নলকূপে পানি কম উঠতে পারে। তবে বর্ষা মৌসুমে স্তর স্বাভাবিক হলে সমস্যা আর থাকে না।”
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) ‘সকলের জন্য নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও প্রাপ্যতা নিশ্চিত’ করাকে ষষ্ঠ লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। ইউনিসেফের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ৭৪ শতাংশ প্রাকৃতিক দুর্যোগই পানি-সম্পর্কিত। আর এই সংকটের সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছে শিশু সমাজ।
এতদসত্ত্বেও, সরকারি ও বেসরকারি উভয় পক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
Leave a Reply