শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৭ পূর্বাহ্ন
গৌরনদী প্রতিনিধি॥ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের ২০টি খামারে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ১৬ হাজার সোনালী মুরগী মারা গেছে। গত দুই দিনে ইল্লা, ডুমুরিয়া ও কমলাপুর গ্রামে এসব মুরগী মারা যায় বলে খামারীরা জানান। রোববার সকালে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে প্রতি খামার থেকে মরা মুরগীর নমুনা সংগ্রহ করে তা পরিক্ষার জন্য বরিশাল গবেষনাগারে প্রেরন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্থ খামারিরা সর্বস্ব হারিয়ে পাগল প্রায়। তারা সরকারের সহযোগীতা কামনা করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নে ছোট বড় শতাধিক পোল্ট্রি মুরগির খামার রয়েছে। তার মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ টি রয়েছে সোনালী লেয়ার মুরগির খামার। যার মধ্যে অধিকাংশ খামার ইল্লা, ডুমুরিয়া ও কমলাপুর গ্রামে।
ইল্লা গ্রামের খামারি ভূমিহীন লিপি বেগম (৩৫) জানান, তার অসুস্থ্য স্বামী ফরিদ হাওলাদারসহ তিন সন্তান নিয়ে তিনি সায়েদুল সরদারের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। স্থানীয় ডিলার শংকর তফাদারের কাছ থেকে বাকীতে ৪ হাজার সোনালী মুরগীর বাচ্চা ও খাবার এনে দুটি খামারে লালন পালন করতে থাকেন। করোনাভাইরাসের কারণে মুরগি বিক্রির সময় হলেও তা বিক্রি করতে পারেননি। বর্তমানে প্রতিটি মুরগি এক কেজির উপরে ওজন রয়েছে। শনিবার সকালে মুরগির খাবার দিতে গিয়ে দেখতে পান খামারের অধিকাংশ মুরগি মরে রয়েছে। বাকী মুরগি শরীর কাঁপছে এবং মুখ দিয়ে পানি পরছে। এ ভাবে ২ থেকে ৩ মিনিট পর আক্রান্ত মুরগি কাঁপতে কাঁপতে মারা যায়।
একই গ্রামের খামারি শহীদ হাওলাদার (৪৫) কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘ধার দেনা ও ডিলারের কাছ থেকে বাকীতে ঈদে বিক্রির লক্ষ নিয়ে আমার ৫টি মুরগির খামারে ৭ হাজার মুরগি পালন করি। গত দুই দিনে আমার ৬ হাজার মুরগি মারা যায়। বাকী এক হাজার মুরগি নামে মাত্র মূল্যে বিক্রি করে দিয়েছি।
শেষ সম্বল হারিয়ে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। সরকার সহযোগীতা না পেলে, আর মনে হয় ঘুরে দাড়াতে পারবোনা’। একই ভাবে জানালেন, ডুমুরিয়া গ্রামের জসিম সরদার (৪৮), কমলাপুর গ্রামের জহুর আলী (৫১), ইল্লা গ্রামের লিটন ফকির (৪২), ছোরাফ মৃধা (৩৮), সোহেল হাওলাদারসহ অনেক খামারি।
ইল্লা গ্রামের বেকার যুবক খামারি নাজমূল ঘরামী (২০) অভিযোগ করে বলেন, আমার খামারের মুরগি মরার শুরু করলে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের ফোন দিয়ে বিষয়টি জানালেও কোন চিকিৎসক খামারে আসেননি।
স্থানীয় ডিলার ও খামারি শংকর তফাদার বলেন, আমার বাড়িতে ব্যক্তিগত ৩টি খামারে প্রায় ৬ হাজার এক কেজি ওজনের সোনালী মুরগি ছিল। তার মধ্যে ৫ হাজারের অধিক মুরগি মারা যায়। এ ছাড়া অধিকাংশ খামারে আমার ৩০ লক্ষ টাকার উপরে বাকীতে বাচ্ছা ও খাবার সরবরাহ করেছি। নিজের ও খামারিদের মুরগি মারা যাওয়ায় এ যেন, মরার উপর খরার ঘা। এ ছাড়া আমার কোম্পানী মুরগি মারা যাওয়ার খবর শুনে কোম্পানীর পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য প্রতিনিয়ত মোবাইল ফোনে চাপ প্রয়োগ করছে।
গৌরনদী প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারী সার্জন ডাঃ মাছুম বিল্লাহ ডাক্তার না যাওয়া প্রসঙ্গ অস্বীকার করে বলেন, ‘খবর পেয়ে রোববার অজ্ঞাত রোগে মুরগি আক্রান্ত তিনটি গ্রামের খামার গুলো পরিদর্শন করি। খামারীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরনীয়। প্রতি খামার থেকে মরা মুরগীর নমুনা সংগ্রহ করে তা পরিক্ষার জন্য বরিশাল গবেষনাগারে প্রেরন করা হয়েছে। গবেষনাগারের রিপোর্ট পাওয়ার পর অসুস্থ্য মুরগির প্রয়োজনী চিকিৎসা দেয়া হবে’।
Leave a Reply