সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫২ অপরাহ্ন
এম. কে. রানা॥ সম্প্রতি সারাদেশে “গলাকাটা” গুজব ছড়িয়ে ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টা করেছে একটি মহল। বর্তমান ডিজিটাল যুগে এ গুজবটি দ্রুতই সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে দেশব্যাপী কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনায় নিহতের ঘটনাও ঘটে। ফলে এ গুজবের তীব্রতা বেড়ে যায়। এরই প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব আর সঠিক দিক নির্দেশনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে পুলিশ বাহিনী যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করায় “গলাকাটা” আর বেশি দূর এগোয়নি। সর্বশেষ দেশে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে আতংকে রয়েছে পুরো দেশবাসীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলবাসীও।
ইতিমধ্যে দেশের ৬৪ জেলার ৬২টি জেলাতেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর খবর পাওয়া গেছে। আর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মৃত্যের সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ, যার মধ্যে বরিশালে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে মশক নিধন ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে একযোগে চলছে প্রচার-প্রচারণা। ছেটানো হচ্ছে মশা নিধন স্প্রে (ওষুধ)। অবশ্য কোথাও কোথাও মশক নিধন বা ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ না নিয়ে শুধুমাত্র ফটোশেসন চলছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায়। সচেতন নাগরিকদের মতে, দুর্ঘটনার পরবর্তী নয়, পূর্বেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে দুর্ঘটনা কিছু কম হতে পারে বা দুর্ঘটনা রোধ করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে বরিশাল মহানগরীতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির তাগিদ দেন তারা।
সূত্রে জানা যায়, ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও মশক নিধনের লক্ষ্যে বরিশাল জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি দফতরে একযোগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হয়েছে। শনিবার (৩ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০ টায় নগরীর আলেকান্দার বেগম তফাজ্জেল হোসেন মানিক মিয়া মহিলা কলেজে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও সংশি¬ষ্ট সরকারি দফতরের প্রধানরা ছাড়াও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন। এই কার্যক্রমের আওতায় বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজে এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সহ নগরীর প্রায় প্রতিটি স্কুলেও শুরু হয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান। এছাড়া বিভাগের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় পরিস্কার-পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করার খবর পাওয়া গেছে।
মশক নিধণে তৎপর বিসিসিঃ বিগত সিটি মেয়র কামালের সময়কালে মশক নিধনে লাখ লাখ বরাদ্দ হলেও নগরীর কোন ওয়ার্ডে মশক নিধণের জন্য ওষুধ ছেটানো হয়নি। কালেভদ্রে মশক নিধন ওষুধ ¯েপ্র করা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গু বিস্তার লাভ করায় করপোরেশনের মশক নিধন তৎপরতাও বেড়েছে। তাই দুইভাবে মশক নিধন কার্যক্রম করছে বরিশাল সিটি করপোরেশন। ঝোপঝাড়-ড্রেন-নালা পরিষ্কারের পাশাপাশি প্রতিদিন প্রতিটি ওয়ার্ডে মশক নিধন হ্যান্ড ¯েপ্র করছে সিটি করপোরেশন। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ড্রেনগুলোতে ফগার মেশিন দিয়ে ¯েপ্র করছে তারা। বিসিসি সূত্র জানায়, বিগত মেয়রের ৫ বছর মেয়াদে মাত্র দুই বার কেনা হয়েছে মশক নিধন ওষুধ। ওই ওষুধ নিয়মিত ¯েপ্র হতো না নগরীর কোথাও। প্রতিটি ওয়ার্ডে মাসে একবার হ্যান্ড ¯েপ্র এবং ভিআইপি এলাকাগুলোতে ফগার মেশিন দিয়ে মধক নিধন করা হতো।
তাও অনিয়মিত ছিল। বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল¬াহ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে সপ্তাহে দু’বার এবং গুরুত্বপূর্ণ ড্রেনগুলোতে ফগার মেশিন দিয়ে মশক নিধন হতো প্রতিদিন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়ায় নড়েচড়ে বসেছে কর্তৃপক্ষ। এখন প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিদিন হ্যান্ড ¯েপ্র এবং গুরুত্বপূর্ণ ড্রেনগুলোতে প্রতিদিন ফগার মেশিন দিয়ে ¯েপ্র করা হচ্ছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। মশক নিধন কার্যক্রমের দায়িত্বে থাকা বিসিসি’র প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা ভেটেরিনারি সার্জন মো. রবিউল ইসলাম বলেন, অন্যান্য জায়গায় মশক নিধনের জন্য কি ওষুধ দেয়া হয় সেটা তিনি জানেন না। তবে বরিশাল সিটি করপোরেশন মশক নিধনের জন্য এসিআই কোম্পানি থেকে সরাসরি দুই ধরনের ওষুধ কিনেছে। হ্যান্ড ¯েপ্র’র মাধ্যমে লারভিসাইট এবং ফগার মেশিন দিয়ে ¯েপ্র করা হয় এডালটিসাইট। লারভিসাইট মশার ডিম, বাঁচ্চা ও লার্ভা এবং এডালটিসাইট বড় বা উড়ন্ত মশা ধ্বংস করে করে।
গুজব প্রতিরোধে পুলিশের ভুমিকাঃ
৩১ জুলাই বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকার চারটি থানার উদ্যোগে বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসায় একযোগে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, দূর্নীতি, বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, সাইবার ক্রাইম ও চলমান গুজব প্রতিরোধ এবং ডেঙ্গু জ্বর বিষয়ে সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিএমপি পুলিশের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত থেকে বরিশালে চলমান গুজব প্রতিরোধসহ অতি সম্প্রতি আলোচিত ডেঙ্গু বিষয়ে করণীয় বর্জনীয় সংক্রান্তে ছোট্ট সোনামনিসহ বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষদের সচেতন করে সতর্ক থাকার এবং অভিভাবকদের ও শিক্ষকদের পৃথকভাবে উলে¬খিত বিষয়ে সজাগ থাকার পরামর্শ প্রদান করে গণমুখী পুলিশিং এর প্রত্যয় ব্যক্ত করে পুলিশকে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করার আহবান জানানো হয়।
যার ধারাবাহিকতায় ৩১ জুলাই উপ-পুলিশ কমিশনার বিএমপি (ডিবি) মুহম্মদ জাহাঙ্গীর মলি¬ক কোতয়ালী থানাধীন বরিশাল সরকারী কলেজে কোতয়ালী থানা কর্তৃক আয়োজিত সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, দূর্নীতি, বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, সাইবার ক্রাইম ও চলমান গুজব প্রতিরোধে সচেতনতামূলক সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। সভায় আরও উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন সহকারী পুলিশ কমিশনার ডিবি বিএমপি (এডমিন এন্ড পিআর) নাসির উদ্দিন মলি¬ক ও সহকারী পুলিশ কমিশনার ডিবি (স্পেশালাইজড ক্রাইম) বিএমপি নরেশ চন্দ্র কর্মকার সহ অন্যান্য অফিসার ও ফোর্স বৃন্দ। গত ২৮ জুলাই কোতয়ালী থানাধীন কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজে চলমান গুজব, জঙ্গীবাদ,যৌতুক, বাল্যবিবাহ, মাদক,ইভটিজিং প্রতিরোধ সংক্রান্তে গণসচেতনতা মূলক বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ আকরামুল হাসান। একই দিন সহকারী পুলিশ কমিশনার (কাউনিয়া) মোঃ আঃ হালিম এয়ারপোর্ট থানাধীন খানপুরা আলিম মাদ্রাসায় চলমান গুজব, সাইবার ক্রাইম, মাদক, যৌন হয়রানী, জঙ্গী, শিশু নির্যাতন ইত্যাদি বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। ৩০ জুলাই কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নুরুল ইসলাম পিপিএম কোতয়ালী থানাধীন কমার্স কলেজ বরিশালে সামাজিক সমস্যা,
প্রতিকার ও সচেতনতা মূলক কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন। ৩১ জুলাই এয়ারপোর্ট থানাধীন ইমাম ১৮২ গণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বরিশালে চলমান গুজব প্রতিরোধসহ অতি সম্প্রতি আলোচিত ডেঙ্গু বিষয়ে করণীয় বর্জনীয় সংক্রান্তে ছোট্ট সোনামনিদের সচেতন করে সতর্ক থাকার এবং অভিভাবকদের ও শিক্ষকদের পৃথকভাবে উলে¬খিত বিষয়ে সজাগ থাকার পরামর্শ প্রদান করে গণমুখী পুলিশিং এর প্রত্যয় ব্যক্ত করে পুলিশকে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করার আহবান জানিয়ে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এয়ারপোর্ট থানা, এইচ. এম. আবদুর রহমান মুকুল বক্তব্য রাখেন।
এসময় অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষিকা ফরিদা ইয়াসমিন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আঃ সত্তার হাং, সম্মানিত অভিভাবকবৃন্দসহ অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শিক্ষিকাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ৩১ জুলাই বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মোস্তফা কামাল হায়দার, গন সচেতনতা উপলক্ষে বন্দর থানাধীন ৯ নং টুঙ্গীবাড়ীয়া ইউনিয়নের বিশারদ গ্রামের ৬২ নং বিশারদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক, শিক্ষাথী ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকদের নিয়ে একটি মত বিনিময় সভা করেন। একই দিন এয়ারপোর্ট থানাধীন খানপুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলে ধরা সংক্রান্তে গুজব প্রতিরোধমুলক সভায় বক্তব্য রাখেন সহকারী উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোঃ মহিউদ্দিন। ওই দিনই এয়ারপোর্ট থানাধীন গণপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলে ধরা সংক্রান্তে গুজব প্রতিরোধমুলক সভায় বক্তব্য রাখেন উপ-পুলিশ পরিদর্শক এয়ারপোর্ট থানা বিএমপি অরবিন্দ বিশ্বাস। ওই দিন এসআই মনোজ কুমার সরকার এয়ারপোর্ট থানাধীন পশ্চিম বিল্ববাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলে ধরা সংক্রান্তে গুজব প্রতিরোধমুলক সভা করেন।
এছাড়াও ৩১ জুলাই বন্দর থানাধীন ৪৭ নং চরকাউয়া ও ৪৮ নং নয়ানী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলে ধরা সংক্রান্তে গুজব প্রতিরোধমুলক সভায় বক্তব্য রাখেন বন্দর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত), শাহ মোঃ ফয়সাল আহমেদ। কোতয়ালী থানাধীন শের-ই বাংলা, নথুল¬াবাদ ও কলেজপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলে ধরা সংক্রান্তে গুজব প্রতিরোধ ও গণ সচেতনতামূলক সভায় বক্তব্য রাখেন উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আঃ কুদ্দুস মোল¬া। এছাড়া ৩১ জুলাই কাউনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে কাউনিয়া থানার অফিসারবৃন্দ থানা এলাকার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলে ধরা সংক্রান্তে গুজব প্রতিরোধ ও গণ সচেতনতামূলক বক্তব্য রাখেন। এছাড়া ৩১ জুলাই বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তফা কামাল হায়দার এর নেতৃত্বে বন্দর থানার অফিসারবৃন্দ বন্দর থানাধীন বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলে ধরা সংক্রান্তে গুজব প্রতিরোধ ও গণ সচেতনতামূলক বক্তব্য রাখেন। এছাড়া গত ২৮ আগষ্ট এয়াপোর্ট থানার এসআই মনোজ সরকার ও এএসআই জুয়েল এয়ারপোর্ট থানাধীন মুশুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, জনতার সাথে জনসচেতনতামুলক সভায় বক্তব্য প্রদান করেন।
বরিশাল নগরীর সচেতন মহল মনে করেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কার্যকরী পদক্ষেপের কারণে “গলাকাটা” গুজব যত দ্রুত প্রতিরোধ করা হয়েছে। ঠিক একই ভাবে সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনসহ সকল সরকারি বেসরকারি সংস্থাগুলো সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে বরিশালকে ডেঙ্গু মুক্ত রাখতে পারবেন বলে বিশ্বাস করেন তারা।এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান (বিপিএম) বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ যেহেতু বেড়েছে, মানুষকে সচেতন করতে নিয়মিত কাজ করছে পুলিশ বাহিনী। তিনি বলেন, “গলাকাটা” গুজব প্রতিরোধে যেমন সপ্তাহব্যাপী ব্যাপক প্রচারণা আমাদের পক্ষ থেকে চালানো হয়েছিল ঠিক তেমনভাবেই আমরা ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যক্রম করবো। এছাড়া নিয়মিতই ওপেন হাউজ ডে, স্কুল ভিজিট এর মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে উলে¬খ করে তিনি বলেন, কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সদস্যদের নিয়ে শীঘ্রই ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম চালু করা।
Leave a Reply