মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ০২:০৬ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নগরীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ঐতিহাসিক বেলস পার্ক এখন আর আগের মতো বিনোদনের স্থান নয়। এক সময়ের ছায়াঘেরা, প্রশান্তিময় এই পার্কটি এখন দখল ও অনিয়মের কারণে রূপ নিয়েছে একটি অস্থায়ী বাজারে। বৃটিশ আমলের শেষ দিকে জেলা প্রশাসক মি. বেল প্রায় ৯ একর জায়গাজুড়ে এই পার্কটি গড়ে তুলেছিলেন। সেই পার্ক আজ হারিয়েছে তার ঐতিহ্য, সৌন্দর্য ও উদ্দেশ্য।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পার্কের ভেতরে অনুমোদিত দোকানের তুলনায় অতিরিক্ত ৮০টিরও বেশি দোকান গড়ে উঠেছে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) অনুমোদন রয়েছে ১৭৮টি দোকানের, অথচ বাস্তবে দোকানের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ২৫০টি। এসব অতিরিক্ত দোকান পার্কের অর্ধেকেরও বেশি এলাকা দখল করে রেখেছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী একটি মহল প্রতিদিন দোকানপ্রতি ৩০ থেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছে।
দোকানদাররা অনেকেই মুখ খুলতে রাজি নন। তারা বলছেন, চাঁদা না দিলে ব্যবসা চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। পার্কের দর্শনার্থীরা বলছেন, দোকানের দখলে হাঁটাহাঁটি, ব্যায়াম, শিশুদের খেলাধুলা, এমনকি শান্তভাবে বসে থাকার সুযোগও নেই। ময়লা-আবর্জনার কারণে পার্কের সৌন্দর্য তো নষ্ট হয়েছেই, পাশের ডিসি লেকের পানিও দূষিত হয়ে পড়ছে।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, পার্কে নির্ধারিত কোনো পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় মূল সড়কে মোটরসাইকেল, রিকশা ও গাড়ি দাঁড় করানো হয়, যার ফলে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। সন্ধ্যার পর কিশোর গ্যাং ও মাদকসেবীদের আনাগোনা বেড়ে যায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সম্প্রতি পার্কে একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটে, যা এলাকাবাসীর উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তোলে।
দর্শনার্থী শারমীন আক্তার বলেন, “এখনকার বেলস পার্ক যেন বাজার হয়ে গেছে। শান্তিতে হাঁটাও যায় না।” স্থানীয় ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন বলেন, “এক সময় এখানে শিশুরা খেলত, এখন তাদের জায়গাই নেই।”
বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) লুসিকান্ত হাজং বলেন, পার্কের জমি জেলা প্রশাসনের হলেও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও দোকান নিয়ন্ত্রণ বিসিসি’র দায়িত্ব। তবে সমন্বয়হীনতার কারণে সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে।
বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কাওছার পার্ক সংস্কারের কাজ পরিদর্শন করেছেন। ওয়াকওয়ে, লাইটিং ও পাবলিক টয়লেটের উন্নয়ন হলেও মূল সমস্যা অতিরিক্ত দোকান উচ্ছেদ না হওয়ায় সমাধান মিলছে না।
স্থানীয়রা মনে করছেন, বেলস পার্ককে পুনরুদ্ধার করতে হলে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, কঠোর নজরদারি ও প্রশাসনের সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি।
Leave a Reply