রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৮ পূর্বাহ্ন
মীর্জাগঞ্জ প্রতিনিধি : বই আমাদের মনের খোড়াক,বই মানুষকে বদলে দিতে পারে। অজানা, অদেখা, বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেয় বই। আমরা বইয়ের মাধ্যমে মুহূর্তে ছুটে যেতে পারি পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। এমন কথাগুলো বলেন ৪৩তম বিসিএস পরিক্ষায় প্রকাশিত ফলাফলে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হওয়া মোঃ জহিরুল ইসলাম।
তিনি পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) পদেও সুনামের সাথে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে চাকরি করছেন প্রায় ২ বছর ধরে। ‘হারার আগে হারবো না’ পারি বা না-পারি, আমি চেষ্টা চালিয়ে যাব। পরিশ্রম করে যাব। সে অনুযায়ী আমি চেষ্টা চালিয়ে যাই। সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস, ত্যাগ, ধৈর্য এবং পরিশ্রমের ফলেই মানুষ তার সফলতার উচ্চ লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি। তার এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের পার্শ্ববর্তী উপজেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার মোঃ ইউসুফ শিকদার এবং শাহিদা পারভিন দম্পতির তৃতীয় সন্তান তিনি। মধ্যবিত্ত ও কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া জহিরুল ২০০৮ সালে কলসকাঠি বিএম একাডেমি থেকে এসএসসি এবং বরিশালের সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ থেকে ২০১০ সালে এইচএসসি পাশ করেন।
পরবর্তীতে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি)। ২০১৬ সালে স্নাতক এবং ২০১৭ সালে স্নাতকোত্তর পাশের পর ২০১৯ সালে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
কিন্তু বিসিএস ক্যাডার হবেন এটা ছিল স্বপ্ন তার। সেই স্বপ্ন পূরণ না হওয়া অবধি থেমে থাকেননি এই অধম্য শিক্ষার্থী। জহিরুল ইসলাম বলেন, বিজনেস ব্যাকগ্রাউন্ডের স্টুডেন্ট হওয়ায় শুরুতে ব্যাংকিং সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ার পরিকল্পনা ছিল। শুরুর দিকে প্রস্তুতিও ছিল সেই দিকে লক্ষ্য রেখে। কিন্তু ৩৮তম বিসিএসের সার্কুলার প্রকাশ পেলে ভালো একটি ক্যারিয়ার গড়ার আশায় আবেদন করি। তখন থেকেই বিসিএস-এ পড়াশোনা মনোযোগ দেই। তিনি বলেন, ৩৮তম বিসিএসের ফলাফল প্রকাশ পেলে প্রিলিতে টিকেলাম। এর মধ্যে এসআইতে সুযোগ হয়। ট্রেনিং চলতে থাকে।
তখন থেকেই কর্মজীবন শুরু করলেও বিসিএস এর প্রতি ঝোক ছিলো অণ্য রকম। কারণ বিসিএস ছিল আমার স্বপ্ন। আমি শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যেতে চাইলাম। চাকরি এবং পাশাপাশি পড়াশোনা নিয়মিত ধরে রাখা খুবই কঠিন ছিল। এর মধ্যে ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিই। কিন্তু তখন পুলিশ অ্যাকাডেমিতে ট্রেনিং এ থাকায় পরীক্ষায় অংশ নিলেও সেটাতে সাফল্য পাইনি। ৪১তম বিসিএসে প্রিলি এবং লিখিত পরীক্ষায় নির্বাচিত হলেও মৌখিক পরীক্ষা শেষে নন-ক্যাডারে আটকে যাই। সাফল্য ধরা দেয় ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায়।
তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন সময়ে নানা রকম প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। কারণ, আমি যে চাকরি করি সেটা অন্য যেকোনো চাকরির থেকে ভিন্ন। এখানে নিজের জন্য ব্যক্তিগত সময় নেই বললেই চলে। এরই মধ্য দিয়ে যতটুকুই সময় পেয়েছি আমি শুধু চেষ্টা করে গিয়েছি। বিভিন্ন সময়ে বিসিএসসহ অন্যান্য চাকরির পরীক্ষা দিয়েছি। এমনো হয়েছে পরদিন সকালে পরীক্ষা কিন্তু আগের দিন রাত পর্যন্ত থানায় অনেক কাজের চাপ ছিল। আবার কখনো এমনো হয়েছে যে, পরীক্ষার আগের রাতেও কোনো না কোনো দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। অনেক কষ্ট করে এভাবেই ম্যানেজ করে বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষাগুলোতে অংশগ্রহণ করেছি।
পরীক্ষা বা ভাইবা’র সময় আসলেই মনে হতো কাজের ব্যস্ততা আরো বেশি বেড়ে যেত। কিন্তু আমি একটি বিষয় সব সময় মনে রেখেছি যে হাল ছাড়ব না। হতাশ হওয়া যাবে না। প্রস্তুতি যেমনই হোক প্রায় সকল পরীক্ষাতে অংশ নিয়েছি। কোনো পরীক্ষাই মিস হতে দিইনি। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে অন্যান্য চাকরিতে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থাকলেও বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার হিসেবেই যোগদান করে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দেশের সেবা করতে চাই।
Leave a Reply