সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৬ অপরাহ্ন
এম.কে. রানা ॥ “মোরা পারি, মোগো আছে সাকিব, মাশরাফি, মুশফিক… ধূর এ্যাহন কথা কওয়ার সোমায় নাই। মোগো বাংলাদেশের পোলারা ক্যামনে খ্যালতে আছে আগে হেইয়া দ্যাহেন। মোরা ডরাই না, তয় মোগো ডরায় অনেকে। দ্যাহেন না গেল বিশ্বকাপে মোগো বিরুদ্ধে ষরযন্ত্র কইর্যা ক্যামনে ঠগাইছে। তয় এ্যাহোনো অনেক খেলা বাহি আছে, আর বেবাক্কেরও দ্যাহার অনেক কিছু বাহি আছে। এইফির আর ছাড়মু না”। গতকাল নগরীর বিবির পুকুর পাড়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে উইন্ডিজদের বিপক্ষে বাংলাদেশের খেলা দেখছিলেন ষাটোর্ধ্ব জব্বার মিয়া। লিটন দাসের মারা পর পর তিন ছক্কা মারার পরই কথা হয় তার সাথে। এভাবেই বলছিলেন ক্রিকেটপ্রেমী বরিশালের জব্বার মিয়া।
তিনি বলেন, “আরে মেয়া ক্রিকেটের লগে মোগো দ্যাশেরও সনমান (সম্মান) জড়িত। দ্যাহেন না মোরা ঠগলে সবাইর চোহে পানি আয়, মোরা ব্যাতা পাই”। আর জেতলে মোরা কত্তো খুশি অই হ্যা বুঝান যাইবে না”। নগরীর কাউনিয়া এলাকায় সড়কে দাড়িয়ে খেলা দেখছিলেন অটোচালক জামাল। তিনি বলেন, “মামা মোগো সাকিবই এট্টা (একটা) জিনিস। ও থাকলে মোরাও সাহস পাই। আর মাশরাফি বস তো আছেই”। এ কথা বলতেই আরেকটি চারের মার। জামাল বলেন, “মামা এ্যাহন কতা কওন যাইবে না, সাকিব মামায় খ্যাপছে। আইজ আর মোগো থামায় কেডা”।
ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশ এখন পরাশক্তি। অথচ পিছনে ফিরে তাকালে খুব বেশিদিন বলে মনে হয় না। বাংলাদেশের টেষ্ট ষ্ট্যাটাস পাওয়া, প্রথম টেষ্টে ভারতের সাথে খেলা। প্রথম টেষ্টেই দারুণ খেলার অভিজ্ঞতা। এসব যেন সেদিনের কথা। তবে সময় ঠিকই চলে গেছে অনেকটা। ক্রিকেট আজ অন্য উচ্চতায়।
এখন যোগ হয়েছে টি-টুয়েন্টি নামের আলাদা একটি ফরম্যাট। অথচ তখন উত্তেজনা বলতে ওয়ানডে ম্যাচ আর টেষ্ট দেখাতেও ছিল ব্যাপক আগ্রহ। সময়ের সাথে সাথে ক্রিকেটের অনেক আইনেও এসেছে নতুনত্ব। এখন বাংলাদেশ নতুন এক শক্তি। প্রতিটি দেশ এখন বাংলাদেশের সাথে খেলার আগে পরিকল্পনা সাজায়। বিশেষ করে বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান আর কার্টার মাস্টার মোস্তাফিজকে নিয়ে চিন্তিত থাকে বিরোধী শিবির।
সাথে নতুন যোগ হয়েছে মেহেদি মিরাজ। আজ সোমবার নিজেদের বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জিতেছে বাংলাদেশ। টনটনে বিশ্বকাপের ২৩তম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেয়া ৩২২ রানের লক্ষ্য টাইগাররা পার হয়ে গেছে ৭ উইকেট ও ৫১ বল হাতে রেখে। সাবাশ বাংলাদেশ এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়, জ্বলে পুড়ে মরে ছাড়খার তবু মাথা নোয়াবার নয়। বাংলাদেশকে অবিস্মরণীয় জয় এনে দিয়েছেন সাকিব আল হাসান।
বল হাতে ৮ ওভারে ৫৪ রানে ২ উইকেট শিকারের পর ব্যাট হাতে তুলে নিয়েছেন ‘ব্যাক টু ব্যাক’ সেঞ্চুরি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২১ রানের পর সাকিব উইন্ডিজদের বিপক্ষে করেছেন অপরাজিত ১২৪ রান। সাকিবের মাহাত্ম্য এখানে শেষ নয়; ইংল্যান্ড ও ওয়েলস বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকাতেও সবার শীর্ষে উঠেছেন বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার।
৪ ম্যাচে ২ ফিফটি ও দুই সেঞ্চুরিতে সাকিব করেছেন ৩৮৪ রান। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ করেছেন ৫ ম্যাচে ৩৪৩ রান। আজ বাংলাদেশ ক্রিকেটের যে অর্জন তা যেন গোটা বিশ্ব দেখছে। সমন্বিত ণৈপূণ্যে বাংলাদেশ দল আজ কোথায় পৌছে যাচ্ছে তা যেন কোন সীমায় বাধা যায় না। এবারের বিশ্বকাপে আমাদের ক্রিকেট সবাইকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাক, এগিয়ে যাক ম্যাশ, এগিয়ে যাক সাকিব, এগিয়ে যাক বাংলার টাইগাররা এদেশের মানুষের এটাই প্রত্যাশা।
Leave a Reply