সোমবার, ০৩ মার্চ ২০২৫, ০৯:১১ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক।। বরিশাল শিক্ষাবোর্ডে দুই জন কর্মকর্তা যোগদানকে কেন্দ্র করে ফের চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধের চেষ্টা চালানো হয়। দুই কর্মকর্তাকে ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিয়ে বোর্ডের কর্মচারী সংঘর্ষের নেতৃবৃন্দ উত্তপ্ত পরিস্থিতির চেষ্টা করলে সেখানে বরিশাল মহানগর বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ হয়। রবিবার (২ মার্চ) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে এ ঘটনা ঘটে।
বরিশাল শিক্ষাবোর্ড বোর্ডে নতুন পদায়ন হওয়া উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মো. কামরুজ্জামান কামাল ও উপ বিদ্যালয় পরিদর্শক হাসান মাহমুদ যোগদান করতে আসলে তাদের কক্ষ তালাবদ্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ঐ দুই কর্মকর্তা শিক্ষা বোর্ডে আসলে তাদের ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যায়িত করে শিক্ষাবোর্ড কর্মচারীরা বিক্ষোভ মিছিল শেষে চেয়ারম্যানের কক্ষে গিয়ে উচ্চবাচ্য করেন।
জানতে চাইলে উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও উপ বিদ্যালয় পরিদর্শক বলেন, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একটি অংশ পদ দুটিতে নিয়োগ চান। এ নিয়েই মূলত দ্বন্দ্ব। আমাদের দুজনকে আওয়ামী লীগের ‘দোসর’ বলা হয়েছে। তদন্ত করে যদি এমন প্রমাণ পায়, তবে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছি আমরা। দুজনে স্ব স্ব পদে যোগদান করেছি। আমাদের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয় কর্মচারীরা। পরে বিএনপি নেতা আফরোজা খানম নাসরিনের সহায়তায় কর্মস্থলে যোগদান করেন।
তারা আরো বলেন, কখনও কোন রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম না। আর কখনও কোনো অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক বক্তব্য দেননি। কমিটি গঠনের সময় জনবল সংকট থাকায় নাম লিপিবদ্ধ করা হয়। অনেক সময় সেটা আ.লীগ-বিএনপির উভয় ক্ষেত্রে গিয়ে পড়ে। তাছাড়া কলেজের ছাত্ররা ‘ছাত্রদল-ছাত্রলীগ’ করে তারা নানা সময়ে কলেজে বসে কম বেশি সকল স্যারদের সাথে ছবি তুলে। সেই সব ছবি ফেসবুকে ছাত্ররা পোস্ট করলে সাথে থাকা ওই শিক্ষক/প্রফেসরদের রাজনৈতিক দলের দোসর বলে আখ্যায়িত করা হয়।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ড কর্মচারী সংঘ সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কামরুজ্জামান কামাল সরাসরি ফ্যাসিবাদের দোসর। কামরুজ্জামান কামাল বরিশালের সাবেক মেয়র ও মহানগর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর করে দেয়া বিএম কলেজ শিক্ষক পরিষদের সদস্য ছিলেন। ওই কমিটি শিক্ষকদের ভোট ব্যতীত হয়। সরাসরি সাদিক কলেজ অধ্যক্ষকে তার বাসভবনে নিয়ে অফিস আদেশের মাধ্যমে কমিটি করে। আল আমিন সরোয়ারকে ওই কমিটির সম্পাদক করা হয়।
শহিদুল ইসলাম আরো বলেন, উপ বিদ্যালয় পরিদর্শক হাসান মাহমুদ আওয়ামী পন্থি স্বাধীনতা শিক্ষক সমিতির নেতা ছিলেন। এই দুই কর্মকর্তাকে শিক্ষা বোর্ডে পদায়ন করা হয়েছে। আমরা তাদের যোগদানে বাধা দিয়েছি। তবে বিএনপি নেতা আফরোজা খানম নাসরিন তাদের যোগদানে সহায়তা করেছেন।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ড কর্মচারী সংঘের বিশ্বস্ত এক সূত্র নিশ্চিত করে বলেন, আ.লীগ শাসনামলে শহিদুল ইসলাম তার আপন ভাই ছাত্রলীগ নেতা ইমরান শিকদারের ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন। আ.লীগ পতন হওয়ার পর এখন নিজে বিএনপি সেজে ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বরিশাল- ৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কর্নেল জাহিদ ফারুক শামিমের ছত্রছায়ায় থাকতেন শহিদুল ইসলামের ভাই ইমরান। শহিদুল ইসলামও স্বীকার করেন তার ভাই আ.লীগ করতেন এবং বর্তমানে পলাতক রয়েছে।
বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন, শিক্ষা বোর্ডে যাদের বদলি অথবা নিয়োগ দেওয়া হয় তাদের সবাইকে মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তের পর চূড়ান্ত করা হয়। তারপরও অভিযোগ উঠেছে দুই কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের দোসর। যা নিয়ে কর্মচারীরা বিক্ষোভ মিছিল করে। চেয়ারম্যান বলেন দু’টি পদে কর্মচারীরা পদায়ন পেতে যাচ্ছে। যা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। বোর্ডের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ দু’টি পদে প্রেষণ থেকে আসাদের পদায়ন না হলে বোর্ডের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। তারপরও গত কয়েকদিন ধরে যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে পদায়নকৃত দুইজনের বিরোধী পক্ষরা নানান তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছে। এসময় বোর্ডের চেয়ারম্যান ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন বোর্ডের কর্মচারীদের তদবির না মানলেই যাকে-তাকে ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এ বিষয়টি নিয়ে তিনি মন্ত্রণালয়ে আলোচনা করে কঠোর পদক্ষেপও নিবেন বলে সাংবাদিকদের জানান। পরে বোর্ড চেয়ারম্যান বিএনপি নেত্রী ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে কামরুজ্জামান কামাল ও উপ-বিদ্যালয় পরিদর্শক পদে হাসান মাহমুদ যোগদান করেন।
জানা গেছে, উপ বিদ্যালয় পরিদর্শক হাসান মাহমুদ সহযোগী অধ্যাপক পদে যশোর সরকারি কলেজে ও উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কামরুজ্জামান কামাল সহযোগী অধ্যাপক পদে বাকেরগঞ্জ সরকারি কলেজে কর্মরত ছিলেন। উল্লেখ্য, সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে ওই হুমকি ও অবরুদ্ধ করার ঘটনা ঘটিয়েছে নানা কর্মকার্ন্ডে বির্তকিত বরিশাল মহানগর বিএনপি সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদারের অনুসারী মহানগর ছাত্রদল, সেচ্ছাসেবক দল ও শ্রমিক দলের প্রায় ৫০/৬০ জন নেতাকর্মী। যে কারণে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের অধিকাংশ কর্মকর্তা কর্মচারীদের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ওই জিয়াউদ্দিন সিকদারের অনুসারীই হলেন বরিশাল শিক্ষা বোর্ড কর্মচারী সংঘ সভাপতি শহিদুল ইসলাম।
Leave a Reply