সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪২ অপরাহ্ন
এইচ এম হেলাল ॥ টাকায় মেলে ভবন নির্মাণের প্লান, আবার টাকার অভাবেই থেমে থাকে ভবন নির্মাণ। কেউবা আবার ক্ষমতার জোরে প্লান ছাড়াই ভবন নির্মাণ করছে। যদিও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্লান নিয়ে ভবন নির্মাণের নিয়ম আছে। তবে সেই নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে নগরীর ব্যস্ততম নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সাথে গড়ে উঠেছে প্লান বহির্ভূত ভবন। যেখানে ইতিমধ্যে টিনের বেড়া দিয়ে রাতের আধারে গড়ে তোলা হয়েছে ৬টি স্টলও। জাকজমক ও চাকচিক্যময় হোটেল রেস্তোরা আছে সেই ভবনে।
এর মধ্যে অন্যতম হলো হোটেল কস্তুরী। যারা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতির কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছেন বলে দাবী করেন। তবে অভিযোগ রয়েছে সাবেক মেয়র কামালকে ম্যানেজ করেই প্লান বহির্ভূতভাবে ওই স্টলগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে মোটা অংকের লেনদেনও হয়েছে বলে সূত্রের দাবী।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সাবেক মেয়র কামাল হোসেনের সাথে আতাঁত করে টিনের আড়াল দিয়ে রাত দুপরে এই ভবন নির্মাণ করেন। যে ভবনের কোন প্লান পাস নেই এবং এখনও প্লান পাস হয়নি। জানা গেছে, শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বর্তমানে একজন জনপ্রতিধিও বটে। খোদ সিটি কর্পোরেশনের একজন জনপ্রতিনিধি প্লান বহির্ভূতভাবে ভবন নির্মাণ করায় জনমনে নানান প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা বলেন, জনপ্রতিনিধি হয়েও তিনি যদি বিসিসি’র আইন না মানেন তবে সাধারণ মানুষ কি করবে।
সূত্র জানায়, দশ বছর চুক্তিতে হোটেল কস্তরী থেকে অগ্রিম বাবদ ২৫ লক্ষ টাকা এবং প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা ভাড়া দিচ্ছেন দোকান মালিক মাসুদ পারভেজ ও আমিনুল।
তবে গোপন সূত্রে জানা যায়, দশবছরের চুক্তিতে ৪০ লক্ষ টাকা এবং প্রতিমাসে ভাড়া বাবদ ৪৫ হাজার টাকা ভাড়া দিচ্ছেন দোকান মালিক। এছাড়া অন্য ৬টি ষ্টল হোটেল কস্তুরীর মালিক চাইনিজ রেস্তোরা করার জন্য ভাড়া নিয়েছেন বলেও জানা যায়। এ ব্যাপারে আমিনুল বলেন, আমি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর ভাইর সাথে দশ বছরের একটা চুক্তি করেছি, তবে ভবনের কোন প্লান আছে কিনা তা আমার জানা নেই।
জানা গেছে, নির্মাণকৃত ভবনের জমি শ্রমিক ইউনিয়নের নামে ক্রয় করা হয়েছিল। আর ভবনের মালিকানায় প্রতিটি শ্রমিকের অংশ আছে। দোকান ভাড়ার টাকা এবং অগ্রীম বাবদ যে টাকা নেয়া হয়েছে তার কোন হিসেব নেই। কেননা একাধিক শ্রমিক জানান, বিগত দিনে কোন শ্রমিক মারা গেলে কিংবা দুর্ঘটনায় আহত হলে এককালীন কিছু টাকা দেয়া হতো ওই শ্রমিককে অথবা মৃত শ্রমিকের পরিবারকে। কিন্তু গত প্রায় ৩ বছর যাবত কোন শ্রমিককে ক্ষতিপূরন দেয়া নিয়ে টালবাহানা করেন শ্রমিক ইউনিয়ন সাধারন সম্পাদক মোঃ ফরিদ হোসেন। জানা যায়, কোন শ্রমিক (গাড়ি চালক) সড়ক দুর্ঘটনায় জীবন হারালে তার পরিবারকে এক কালিন ২০ হাজার টাকা দেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু শ্রমিক ইউনিয়ন সেই টাকা এককালীন না দিয়ে অল্প অল্প করে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও ২৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, প¬ান পাস করার জন্য একবার কাগজ দেয়া হয়েছে তাও সঠিকভাবে আমার মনে নেই। যদি না থাকে করে নিবো। টাকার বিষয়টি জানতে চাইলে বলেন, না দেখে কিছু বলতে পারবো না। প¬ান বর্হিভুভাবে অবৈধ ভবন নির্মান করা হয়েছে এমন প্রশ্নকরা হলে তিনি মুঠোফোন কেটে দেন।
এদিকে বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি মোঃ আফতাব হোসেন বলেন, দশ শতাংশ জমি দলিল করার সময় শ্রমিক ইউনিয়নের নামে করা হয়েছে, পক্ষে আমি ছিলাম। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এক সময় শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ছিলাম তা বহু আগে, প¬ান পাস করিয়ে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই।
এ বিষয় বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ খায়রুল হাসান বলেন, প্লান বহির্ভূতভাবে যদি কেউ ভবন নির্মাণ করে থাকেন তবে অবশ্যই তাকে অবশ্যই প্লানের আওতায় আনা হবে। প্লান বহির্ভূতভাবে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে কিনা তা বিসিসি’র প্লান শাখা দেখবে। আমি খোঁজ খবর নিয়ে যদি এর সত্যতা পাই তাহলে অবশ্যই তাদেরকে নোটিশ করা হবে এবং আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply