বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০১:১৮ অপরাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট : শেষ হলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার পর্ব। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় শেষ হয়েছে নির্বাচন ঘিরে প্রার্থীদের প্রচারের সুযোগ। আগামী রোববার (৭ জানুয়ারি) চূড়ান্ত পরীক্ষা। ওইদিন সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। সে পর্যন্ত ভোট চেয়ে মিছিল, গণসংযোগ কিংবা প্রচারমূলক আর কোনও কর্মসূচী পালন করতে পারবেন না নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। এখন শুধু ভোটারদের রায় প্রয়োগের অপেক্ষা।
এরই মধ্যে চলছে ভোটকেন্দ্রের প্রস্তুতি। ভোট গ্রহণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জাম পৌঁছে যাচ্ছে কেন্দ্রগুলোতে। ব্যালট বাক্সও প্রস্তুত, সর্বোচ্চ নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কাল থেকে কেন্দ্রে পৌঁছাতে শুরু করবে ব্যালট পেপার। নির্বিঘ্ন ভোট আয়োজনে কেন্দ্র ও তার আশপাশের এলাকায় নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি তটস্থ আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মূলত ইসির নিয়মানুযায়ী ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে শেষ করতে হয় প্রচার-প্রচারণা। সেই নিয়ম মেনেই শুক্রবার সকাল ৮টায় সারাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব ধরনের প্রচার-প্রচারণার সমাপ্তি হয়েছে। এক্ষেত্রে কেউ আইন না মানলে ছয় মাসের জেল অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডিত হতে পারে। কমিশন চাইলে শুনানি করে কারো প্রার্থিতাও বাতিল করতে পারে।
গত ১৮ ডিসেম্বর শুরু হয়েছিল প্রচার ও জনসংযোগ। ১৮ দিনের প্রচার ও গণসংযোগে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু এলাকায় প্রতিপক্ষের সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও দেশের বেশির ভাগ এলাকায় মিছিল, গণসংযোগ ও প্রচার ছিল শান্তিপূর্ণ। যার যার জায়গা থেকে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ভোটারদের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির গান শুনিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। ইশতেহার প্রকাশ করেছে প্রধান দলগুলো। এখন শুধু ভোটারদের রায় প্রয়োগের অপেক্ষা।
দেশের জাতীয় সংসদে আসনসংখ্যা ৩০০ থাকলেও এবার ২৯৯ আসনে নির্বাচন হচ্ছে। গত ২৯ ডিসেম্বর নওগাঁ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল হকের মৃত্যু হওয়ায় বিধি অনুযায়ী আসনটির ভোট স্থগিত করেছে ইসি। এর ফলে ২৯৯ আসনে ভোটাররা জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পাবেন ৭ জানুয়ারি।
এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের, মোট ২৬৬ জন। সেইসঙ্গে জাতীয় পার্টির ২৬৫ জন, তৃণমূল বিএনপির ১৩৫ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৯৬ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ৫৬ জনসহ ২৮টি রাজনৈতিক দলের মোট এক হাজার ৫৩৪ প্রার্থী অংশগ্রহণ করছেন ৭ জানুয়ারির ভোটে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী ৪৩৬ জন। নির্বাচনে ৯০ জন নারী প্রার্থী ও ৭৯ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রার্থীও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪৪ হলেও অংশ নিচ্ছে না ১৬ টি দল। এর মধ্যে আছে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিও। নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ একাধিক দাবিতে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচন বয়কট করেছে তারা।
এদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ১৮৬ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিককে অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাদের মধ্যে ১২৭ জন পর্যবেক্ষক আর ৫৯ জন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের কর্মী। এ ছাড়া নির্বাচন পর্যবেক্ষদের তালিকায় আছেন দেশি আরও ২০ হাজার ৭৭৩ জন পর্যবেক্ষক। তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে ৪০টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ৫১৭ জন এবং স্থানীয়ভাবে ৮৪টি পর্যবেক্ষণ সংস্থার ২০ হাজার ২৫৬ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন।
এ ছাড়া নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে ২২ সদস্যের মনিটরিং সেল গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই মনিটরিং সেলের নেতৃত্ব দেবেন আইডিএ প্রকল্প-২ এর প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সায়েম। ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, কাল ৬ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে ৯ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত মোট ৭২ ঘণ্টা পরিচালনা করা হবে এই মনিটরিং সেল। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের আদেশ অনুযায়ী গত ৩ জানুয়ারি থেকে নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দায়িত্ব পালন করছে সশস্ত্র বাহিনী। ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৮ দিন মাঠে থাকবে তারা।
নির্বাচন উপলক্ষে ৭২ ঘণ্টা মোটরসাইকেল ও ২৪ ঘণ্টা সর্বসাধারণের যান চলাচলের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ সময় কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, প্রশাসনের সদস্য ও অনুমোদিত পর্যবেক্ষক, জরুরি সেবার যানবাহন, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অভিন্ন কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র এবং সংবাদপত্র বহনকারী সব ধরনের যানবাহন, দূরপাল্লার যানবাহন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের এজেন্টদের ক্ষেত্রে এই বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে। সাংবাদিক, পর্যবেক্ষক, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, জাতীয় মহাসড়ক, প্রধান আন্তঃজেলা রুট, মহাসড়ক এবং প্রধান মহাসড়কের সংযোগ সড়কের ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে।
এ ছাড়া সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ সময় পর্যন্ত লাইসেন্সধারীরাও আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতে পারবেন না। নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ‘অস্ত্র আইন ১৯৭৮’ এর সংশ্লিষ্ট ধারার বিধান অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে দেওয়া হয়েছে নির্দেশনা।
সব মিলিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যয় দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২৩শ’ কোটি টাকা। এ নির্বাচনে আসনপ্রতি ৭ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিশাল এ বাজেটের দু-তৃতীয়াংশ অর্থই ব্যয় হবে ভোটের দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পেছনে। এ ছাড়া নির্বাচন পরিচালনা খাতে প্রায় ১ হাজার ৫০ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় হবে বলে জানিয়েছেন ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে ২৯৯ আসনে মোট কেন্দ্র আছে ৪২ হাজার ২৫ কেন্দ্র, যেখানে মোট এক হাজার ৯৭০ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
Leave a Reply