সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৬ অপরাহ্ন
এম.কে. রানা ॥ আর দশটা সাধারণ মানুষের মতোই তিনি। সব সময় সাধারণকেই ভালবাসেন। চলাফেরাও খুব সাধারণ। পোশাকের ক্ষেত্রেও সব সময় খুব ছিমছাম। অথচ তাঁর দক্ষতা, সততা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে অসাধারণ নৈপুণ্য তাঁকে অনেক সাধারণের থেকে আলাদা করে দিয়েছে। তিনি হয়ে উঠেছেন তাঁর কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় একজন মানুষ। তাঁর সাধারণত্বের মাঝেই খুঁজে পাওয়া যায় অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। যার দূরদর্শীতা আর সৃষ্টিশীল পদক্ষেপে ইতোমধ্যে সুফল ভোগ করছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকার সাধারণ মানুষ। সীমাহীন গুণের কারণে আপামর জনসাধারণের মনে তিনি পরম শ্রদ্ধা ও ভক্তির জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি হলেন বিএমপি’র সুদক্ষ কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান (বিপিএম-বার)। জনগণকে সরাসরি সেবা প্রদান করার তাৎক্ষণিক সুযোগ থাকায় একজন কৃষি বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হয়েও মহান ব্রত নিয়ে তিনি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। বিসিএস পাস করে তিনি পুলিশ বাহিনীতে যোগদানের পূর্বে বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউটে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন তিনি।
বিএমপি’তে যোগদানের পর থেকেই তিনি জনগণের জন্য দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একাধিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। সমাজ থেকে অপরাধ ও মাদক নির্মূলে কমিউনিটি পুলিশিং, বাল্যবিয়ে, ইভটিজিং আর মাদকের ভয়াবহতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে মহানগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের কমিটি গঠন এবং প্রতি মাসে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভা, নগরীর প্রতিটি স্কুলের সামনে কড়া নজরদারী, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জনগনকে সচেতন করার পাশাপাশি বিভিন্ন পরিবহন চালকদের মৌলিক প্রশিক্ষণ প্রদান, অবৈধ পরিবহন বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ, নগরীর যানজট নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণ, নগরীর প্রত্যেক সদস্যদের নাগরিক তথ্য সংগ্রহ, এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও গলাকাটা গুজব প্রতিরোধে বিএমপি পুলিশের ভুমিকা প্রশংসার দাবী রাখে। তার অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, ও দূরদর্শিতা আগামী প্রজন্ম তথা বিএমপি’র সকল সদস্যদের জন্য অনুসরণীয় হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, পুলিশকে জনগণের কাছাকাছি যেতে হবে, জনগণের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। এরই অংশ হিসেবে বরিশাল নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযোগ বক্স স্থাপন করা হবে। জনগণের তথ্য বা অভিযোগ সহজে পুলিশের কাছে পৌঁছানের লক্ষ্যে এসব অভিযোগ বক্স স্থাপন করা হবে বলেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার নগরীর নথুল¬াবাদ বাসস্ট্যা-ে বিএমপি কমিশনার অভিযোগ বক্স স্থাপন কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠানে কিংবা থানায় গিয়ে অনেকে অভিযোগ করতে পারেননা, কেউবা গোপনীয়তা রাখতে চায় তাই জনগণের দোড়গোড়ায় পুলিশের সেবা পৌছানোর জন্য অভিযোগ বক্স স্থাপন করা হবে। যা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ খুলবেন। ওই বক্সে শুধুমাত্র অভিযোগই নয়, বিভিন্ন মতামত, আইন-শৃঙ্খলা বিষয় পরামর্শও দিতে পারবেন জনগণ। তবে যে কোন সমস্যা পরিচয় না দিয়েও পুলিশকে অবহিত করার অনেক মাধ্যম যেমন: টেলিফোন, মোবাইল, ফেসবুক পেজ গ্রুপ রয়েছে। যে যেভাবে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তিনি বলেন, জনগণের কাছ থেকে তথ্য প্রাপ্তিতে এটিও একটি মাধ্যম।
সম্প্রতি বরিশালের আলোচিত তেল ব্যবসায়ী রিয়াজ হত্যার আসামী গ্রেফতারের পর রিয়াজের স্ত্রী বিএমপি কমিশনারের সাথে দেখা করার ইচ্ছা পোষন করেন। এরপর মুঠোফোনে কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খানকে বিষয়টি জানালে তিনি সহজেই সাক্ষাতের সময় দেন। রিয়াজের স্ত্রী তার এতিম সন্তানকে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন বিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে। এ সময় নিহত রিয়াজের স্ত্রীর বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং রিয়াজ হত্যায় জড়িত সকল আসামীকে গ্রেফতারের আশ্বাস দেন কমিশনার। সে সময় বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা হয় তার সাথে।
তিনি বলেন, অপরাধ দমনে কমিউনিটি পুলিশিং একটি বড় হাতিয়ার। সারা বিশ্বে এটা পরীক্ষিত। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের মূল অস্ত্র হল, সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য পাওয়া। সাধারণ জনগণ যাতে সহজে পুলিশের কাছে তথ্য পৌছাতে পারে সেজন্য কমিউনিটি পুলিশিং একটি টিম ওয়ার্ক। সবাই মিলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এক সঙ্গে কাজ করলে দেশের আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হবে, দেশ এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ মাদকের মত মরণ নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। এসব মেধাবী শিক্ষার্থীদের ধ্বংসের পথ থেকে টেনে তুলতেই বরিশালের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ‘স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং’ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে ছাত্রসমাজে অপরাধ প্রবণতা কমবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দূরত্ব কমে যাবে। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক অপরাধও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। সেজন্য পুলিশ, জনগন, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। সমাজ ভাল থাকলে সবাই ভাল থাকবেন বলেন তিনি।
ইতিপূর্বে বিএমপি কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান কুষ্টিয়া, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, রাজশাহী ও মুন্সিগঞ্জে পুলিশ সুপার, ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম ও অপারেশন) এবং র্যাব-৪, র্যাব-১০ ও র্যাব- ১২ এর কমান্ডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া একাধিকবার সাবেক যুগোশ¬াভিয়া (কসভো) ও সুদানে শান্তি রক্ষা মিশনেও কৃতিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। আর এসব অভিজ্ঞতার আলোকে পুলিশের কাছে ভুক্তভোগীদের প্রত্যাশা ও সমস্যা চিহ্নিতকরণে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে বিএমপি পুলিশের সকল স্তরে সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে কাজ করছেন তিনি।
বিএমপি কমিশনার (ডিআইজি পদমর্যাদা) মোঃ শাহাবুদ্দিন খান ১৯৬৪ সালে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা থানার মনোহরপুর ইউনিয়নের হিতামপুর গ্রামে সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি এবং ১৯৮৪ সালে শৈলকুপা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৫তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৯৫ সালের ১৫ নভেম্বর তিনি সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। ২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর তিনি ডিআইজি হিসাবে পদোন্নতি লাভ করেন। বরিশালে বদলির আগে তিনি শিল্প পুলিশের ডিআইজি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ৩ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে তাকে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ (বিএমপি) কমিশনার হিসেবে পদায়ন করা হয়। ১২ এপ্রিল তিনি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার পদে যোগদান করেন।
জানা যায়, পুলিশ বিভাগে যোগদান করে বেসিক ট্রেনিং-এ সেরা চৌকস অফিসার হিসেবে বেস্ট ম্যানস কাপ অর্জন করেন। এছাড়া ট্রেনিংয়ের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি প্যারেড কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তার সততা, কর্মদক্ষতা, বিচক্ষণতা, যোগ্যতা, সাহসিকতার কারণে তিনি দুই দুইবার বিপিএম পদক এবং দুইবার আইজিপি গুড সার্ভিসেস ব্যাজ অর্জন করেন।
Leave a Reply