বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৮ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দুইদিন পর আন্দোলনের মুখে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া ও প্রক্টর ড. মো. আব্দুল কাইউমসহ আট জন পদত্যাগ করেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে তাদের পদত্যাগের তথ্য নিশ্চিত করে রেজিষ্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম জানান, অজ্ঞাত স্থান থেকে উপাচার্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। পদত্যাগপত্রে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণ উল্লেখ করেছেন উপাচার্য।
এর আগে সকাল ১১টার থেকে শত শত শিক্ষার্থী উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবনের নিচতলায় ভিসি ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। ঠিক একই সময়ে ভিসিকে বহাল রাখার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন শিক্ষার্থীদের আরেকটি পক্ষ। তবে আন্দোলন শুরুর কিছুক্ষণ পরেই ড. মো. আব্দুল কাইউম প্রক্টরের পদ থেকে পদত্যাগের একটি দরখাস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্টার বরাবর দাখিল করেন। যেখানে তিনি সেচ্ছায় পদত্যাগ করার কথা উল্লেখ করেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ভিসি ও প্রক্টরিয়াল বডির সাত জনসহ মোট আট জন এ পর্যন্ত তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। এখন নতুন ভিসি না আসা পর্যন্ত আর্থিক বিষয় ছাড়া সব কিছু স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হবে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, সোমবার আমাদের বিক্ষোভ থেকে উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগের আলটিমেটাম দেওয়া হয়। মঙ্গলবার সকাল থেকে তাদের পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন শিক্ষার্থীরা। তারা একাডেমিক ভবনের নিচে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। একপর্যায়ে উপাচার্য ও প্রক্টর পদ্যাত্যাগ করেন। পরে তাদের পদত্যাগের খবরে ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারী ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুজয় বিশ্বাস শুভ বলেন, ভিসি ও প্রক্টর ছাত্র আন্দোলনে সর্বোচ্চ অসহযোগিতা করেছেন। তারা আন্দোলন দমাতে ও শিক্ষার্থীদের নানান ভাবে হয়রানি করতে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। ভিসি ও প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগে খুশি তারা।
অপরদিকে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. বদরুজ্জামান কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রক্টর ড. মো. আব্দুল কাইয়ুম স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অদৃশ্য ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করতেন।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া ২০২২ সালের ১৯ এপ্রিল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রেজারার হিসেবে যোগদান করেছিলেন। গত বছর ৫ নভেম্বর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিনের মেয়াদ শেষ হয়। এর কয়েকদিন পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পান ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া। আর ২০২৪ সালের ৪ মার্চ তাকে উপাচার্যের পদে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য গত শনিবার (১৭ আগস্ট) বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনানন্দ দাশ কনফারেন্স হলে উপাচার্যের কাছে শিক্ষার্থীদের দাবি উপস্থাপন ও আলোচনা সভায় উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া ও প্রক্টর ড. মো. আব্দুল কাইউম ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ক্ষমা প্রার্থনা করে উপাচার্য বলেন, তোমরা আমার পরিবার। আর পরিবারের কাছে ক্ষমা চাওয়াটা লজ্জাজনক নয় বরং আন্তরিকতার পরিচয়। একই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আবদুল কাইউম বলেন, কোটা আন্দোলনের সময় আমাদের সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমন্বয় করতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষার্থীদের ওপরে হামলার মতো ঘটনা ঘটে যা আমার জানা ছিল না। সার্বিক বিষয়ের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।
Leave a Reply