শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ০৫:৩৬ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥ ইরান-ইসরাইল চলমান উত্তেজনার মধ্যেই ইরান বিশ্ব থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গত ৬০ ঘণ্টা ধরে দেশটি পুরোপুরি ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা নেটব্লকস। সংস্থাটির মতে, এটি কোনো সাধারণ কারিগরি ত্রুটি নয়; বরং এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সিদ্ধান্ত—যার উদ্দেশ্য মূলত জনমত নিয়ন্ত্রণ ও সংঘাতকালে সরকারের ওপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা।
এ সময়ে ইরানের সাধারণ জনগণ চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে। রাজনৈতিক মত প্রকাশ, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ, দৈনন্দিন কার্যক্রম এবং এমনকি জরুরি নিরাপত্তা নির্দেশনাও সময়মতো পৌঁছাচ্ছে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবেশ করতে না পারায় নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক ও অস্থিরতা বাড়ছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, মানুষ VPN বা অন্যান্য উপায়ে অনলাইনে ফেরার চেষ্টা করলেও খুব একটা সফল হতে পারছেন না।
১৯ জুন টাইমস অব ইসরাইল জানায়, ইরানে প্রথমে ১২ ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট বন্ধ করা হলেও পরে তা দীর্ঘায়িত হয়ে ৬০ ঘণ্টা ছাড়িয়ে গেছে। পর্যবেক্ষণ বলছে, ইসরাইলি সাইবার হামলার ঝুঁকি থেকে বাঁচতেই সরকার এই পথে হেঁটেছে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এই পদক্ষেপ নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল এবং ইরান সরকারের দমনমূলক কৌশলেরই অংশ।
সংঘাতের পটভূমি আরও জটিল হয়ে উঠছে। ১৩ জুন থেকে ইসরাইল ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা ও পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইরান পাল্টা জবাব দিচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার মাধ্যমে। এ ধরনের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট বিচ্ছিন্নতা দেশবাসীকে আরও বেশি অনিশ্চয়তা ও বিভ্রান্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, দীর্ঘ সময় ধরে ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট থাকলে ইরানের অর্থনীতি, গণমাধ্যম, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবার ওপর ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইরানের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং অভ্যন্তরীণ জনরোষও তৈরি হতে পারে।
ইরান সরকারের পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সময়সীমা জানানো হয়নি। ফলে পরিস্থিতি কতদিন স্থায়ী হবে বা আদৌ শিগগিরই স্বাভাবিক হবে কি না, তা অনিশ্চিত রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক মহল ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করলেও ইরান আপাতত কঠোর অবস্থানেই রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
Leave a Reply