বিদায়ের শেষ ঘন্টা বাজছে মেয়র কামালের Latest Update News of Bangladesh

শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:১৬ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




বিদায়ের শেষ ঘন্টা বাজছে মেয়র কামালের

বিদায়ের শেষ ঘন্টা বাজছে মেয়র কামালের




মাইদুল হাসানঃ
আগামী ২৩ অক্টোবর নগর ভবনে তিনি শেষ কর্মদিবস পালন করবেন।হিসাব অনুযায়ী আর ১ মাস ৬ দিন নগর পিতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।এদিকে বিদায়ের শেষ বেলায় বিগত দিনের হিসাব নিকাশ কষছেন মেয়র আহসান হাবিব কামাল।নগরবাসী যাই বলুক মেয়র হিসেবে নিজেকে সফল বলে দাবী করছেন তিনি।২০১৩ সালের ১৫ জুন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের তৃতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।ওই নির্বাচনে বরিশাল সিটি’র সাবেক জননন্দিত মেয়র মরহুম শওকত হোসেন হিরনকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামাল।এরপর একই বছরের ২৩ অক্টোবর নগর পিতার দায়িত্ব গ্রহন করেন তিনি।সে হিসেবে আগামী ২৩ অক্টোবর পাচঁ বছর পূর্ণ হবে তার।একই সাথে বিদায়ের প্রহর গুণছেন কামাল।এ দিকে মেয়রের দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকেই নগর উন্নয়নে বেশ কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন লক্ষ্যে একাধিক বাজেট ঘোষণা করলেও অনেকাংশে তার প্রতিফলন ঘটাতে পারেন নি।যদিও আবার যতটুকু সৌন্দর্য্য করেছে তা নিয়ে সমালোচনায় বেশি পড়তে হয়েছে তাকে।বাজেট পরিসংখ্যানে দেখা যায়,বরিশাল সিটি করপোরেশনে ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ১২১ কোটি ৩৫ লাখ ২৮ হাজার ২৩৯ টাকার সংশোধিত বাজেটসহ ৩৮১ কোটি ১৬ লাখ ১০ হাজার ৪১৩ টাকার বাজেট ষোষণা করে তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র মোঃ আলতাফ মাহমুদ সিকদার।প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন কোন কর আরোপ ছিল না।সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরনের সময়ে যে সকল কাজ চলমান ছিল তা বাজেটে অন্তভূর্ক্ত হয় নি।এমনকি তার সময়ের ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে ঘোষিত এমন ১৩টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় নি।১৩টি প্রকল্প হচ্ছে,বরিশাল সিটি করপোরেশনে ভূমি অধিগ্রহণসহ ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ,জেল খাল-ভাটার খাল,সাগরদী খাল সংরক্ষণসহ খালগুলো উদ্ধার,বরিশাল কেন্দ্রীয় নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল বর্ধিতকরণ এবং উন্নয়ন,সিটি করপোরেশনের নতুন নগরভবন নির্মাণ,সিটি করপোরেশন এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণসহ তিনটি অঞ্চলে নতুন কবরস্থান,১টি শ্মশান ও ১টি খ্রিস্টান সমাধি নির্মাণ,বরিশাল শহর রক্ষাবাঁধ ও নিম্নাঞ্চলসহ বস্তি এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন,বরিশাল হাটখোলা মার্কেট নির্মাণ,সুইপার কলোনি নির্মাণ,বদ্ধভূমি সৌন্দর্য্য বর্ধন ও সংরক্ষণ শিশুবান্ধব নগরী,শিশু পার্ক নির্মাণ প্রকল্প,গরুর হাট উন্নয়ন প্রকল্প এবং বাঁশের হাট স্থাপন। তবে এগুলোর ভিতরে রাস্তা ও ড্রেন সংস্কার,পুনঃনির্মান, কালভার্ট নির্মান,ঐতিহ্যবাহী জেল খাল উদ্ধারে জেলা প্রশাসককে সহায়তা,মার্কেট নির্মান,বাইপাস লেন,কীর্তণখোলা তীরে বেরী বাধ নির্মাণ কাজটি সম্পন্ন করা হয়েছে।এরপরও এখনো অধিকাংশ ফাইল বন্ধি রয়ে গেছে।এদিকে ওই বাজেটের উন্নয়ন প্রকল্প শেষ না হতেই ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার কয়েকদিন পূর্বে মেয়র একটি গনমাধ্যমে বলেন এ বাজেটের আকার হবে বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিগত অর্থ বছরের থেকে বৃহৎ।এটাই হবে নগরবাসীর প্রথম চমক।বাজেটে আমার নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী বেশ কিছু নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।যে প্রকল্পগুলো বিগত ১১টি বাজেটে উপস্থাপন করা হয়নি।এ ছাড়াও আসন্ন বাজেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি সিটির বর্ধিত এলাকার উন্নয়নে।বিশেষ করে ২০০১ সালে সিটি করপোরেশন ঘোষণা করার পর যে সকল বর্ধিত এলাকায় আদৌ উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি সেই সব ওয়ার্ডে।বিশেষ বরাদ্দ ও নগরীর তিনটি প্রবেশ দ্বারে সিটি গেট স্থাপন করব।যাতে বাইরে থেকে কেউ এই শহরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে শহরের পরিচিতি সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন।পরবর্তী তিনি ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ৪২৩ কোটি ২১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৫৬ টাকার বাজেট ঘোষণা করেন।কিন্তু সংশোধিত বাজেটে তা দাঁড়িয়েছিল ১শ’ ৮২ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার ৬শ’ টাকা।মেয়রের দাম্ভিকতা ফলশ্রুতি হয় না।সিটি টোল বসানো হলেও কয়েক মাস পর কার্য্যক্রম থাকে না।লোহার তৈরি সিটি টোলঘর তিনটি আজ উধাও।বর্ধিত ওয়ার্ড গুলোতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।অনেক এলাকা বৃষ্টির পানিতে এখনো ডুবে যায় জানিয়েছে একাধিক ভুক্তভোগী।এমতাবস্থায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সম্ভাব্য নিজস্ব আয় ১১৮ কোটি ৯৫ লাখ ৫৮ হাজার ৭৬৪ টাকার বিপরীতে ৪শ’ ৪৪কোটি ১০লাখ ৫৮লাখ ৭শ’ ৬৫ টাকার অনুদান নির্ভর বাজেট ঘোষণা করা হয়।এতে সম্ভাব্য আয় ধরা হয় ১১৮.১০ কোটি টাকা।বাকি ৩১৫.১৫ কোটি টাকা সরকারি-বেসরকারি এবং উন্নয়ন সংস্থা থেকে প্রত্যাশিত অনুদান থেকে আয় ধরা হয়।এর মধ্যে নিজস্ব উৎস থেকে সম্ভাব্য আয়ের সম্পূর্ণটুকুই খরচ হবে বেতন-ভাতাসহ সংস্থাপন খাতে।অনুদানপ্রাপ্তি সাপেক্ষে বেশ কিছু উন্নয়ন পরিকল্পনা সড়ক,খাল,পানি সরবরাহ,পয়ঃনিষ্কাশন,মার্কেট উন্নয়ন,সেবক কলোনি নির্মাণ,বাস ও ট্রাক টার্মিনাল,কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল, বৃদ্বাশ্রম নির্মাণ বাজেটে উল্লেখ রাখা হয়। কিন্তু আজ পযর্ন্ত সেবক কলোনি নির্মাণ,বাস ও ট্রাক টার্মিনাল, কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল,বৃদ্বাশ্রম নির্মাণ নগরবাসী দেখেনি।সব শেষ ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের জন্য ৪০৬ কোটি ৪৫ লাখ ৮০ হাজার ২৮ টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়।নগর ভবন সূত্রে জানা যায়,নগর উন্নয়নে যে প্রকল্প অর্থব্যয় বেশি হবে তা পূএ রুপম ও পছন্দের ঠিকাদার মোমেন সিকদার কে দিয়ে করাতেন মেয়র কামাল।এসকল কাজ শেষ হওয়ার পূর্বে বিল উঠিয়ে নেয় তারা।ফলে উন্নয়ন কাজ থমকে যায়। নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যান সংলগ্ন শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য একটি ‘গ্রীণ সিটি’ পার্ক নির্মাণ করে সিটি কর্পোরেশন। প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেই পার্কটি মেয়র পুত্র কামরুল আহসান রুপম ও ঠিকাদার মোমেন সিকদারের সঙ্গে সন্ধিচুক্তি করেন।কিন্তু পার্কটি নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি ও নির্মাণের কাজ হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।মূলত এই পার্ক নির্মাণসহ পিতাপুত্রের বহু দুর্নীতির অভিযোগ জমা পরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে।একইভাবে নগরীর আমতলা পানির ট্যাংকি সংলগ্ন লেকে ছয়টি প্যাডেল বোট সরবরাহের কাজও বাগিয়ে নেন রূপম। কাজটি অনেক পুরনো হলেও সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তড়িঘড়ি করে অতিসম্প্রতি ছয়টি প্যাডেল বোট সরবরাহ করা হয়েছে।যুবদল নেতা মোমেন সিকদারের মালিকানাধীন মেসার্স মিতুসী ট্রেডার্সের নামে ১০ লাখ টাকায় সরবরাহ করা ওই প্যাডেল বোট একেবারে নিন্মমানের। মিতুসী ট্রেডাসের নামে ছয়টি বোট সরবরাহের কাজটি করেছেন কামরুল আহসান রূপম। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে রূপমের প্রধান সহযোগী বিএনপি কর্মী মোঃ রুবেলের নাম। ঠিকাদার মোমেন সিকদার কাজ সমাপ্ত না করে বিল উঠিয়ে নেয়ায় আলোর মুখ দেখেনি শেখ রাসেল অডিটোরিয়ামটি। এছাড়া বিগত সময়ে মেয়র কামালের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে চলতি বছরের জুন মাসে তদন্তে আসেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি। ওই কমিটির নেতৃত্ব থাকা অতিরিক্তি সচিব (প্রশাসন) সৌরেন্দ্র নাথ দুর্নীতির তদন্তের পাশাপাশি তৎকালীন সময়ের বিসিসির নির্বাহী কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার ও মেয়র কামালকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এমনকি সেই সময় বিসিসির সকল কাগজপত্রাদি খতিয়ে দেখেন। সেই কমিটি ঢাকায় ফিরে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার সপ্তাহখানেকের মাথায় নির্বাহী কর্মকর্তা রনজিৎ কুমারকে বদলি করা হয়।যদিও এই কর্মকর্তাকে বদলির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে কোনো কিছু অবহিত করেননি।তবে ধারণা করা হয়েছিল,মেয়রের সঙ্গে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার কারণেই তাকে সরিয়ে নেয়া হয়।এদিকে এসব বিষয়ে উড়িয়ে দিয়ে মেয়র কামাল বলেন,নানা প্রতিকুলতার মধ্যেও একজন মেয়র হিসেবে নগর উন্নয়ন সহ সার্বিক বিষয়ে নাগরিক সেবা নিশ্চিতে শতভাগ সফল হয়েছেন।তিনি বলেন,দায়িত্ব পালনের শেষ পর্যায়ে এসে পৌছেছেন,শেষ মুহুর্তে কোন সমলোচনার নয়,বরং সুনাম নিয়েই বিদায় নিতে চাচ্ছেন তিনি। তাই নগর ভবনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন করে বকেয়া বেতন পরিশোধের উদ্যোগ নিয়েছেন।দৈনিক মজুরী ভিত্তিক কর্মচারীদের দুই মাস এবং নিয়মিত কর্মচারীদের বকেয়া এক মাসের বেতন দিতে রাজস্ব আয়ের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।বিরোধী দলের (আমি) মেয়র হওয়ায় বরাদ্দের ঘাটতি ছিলো।তার মধ্যেও যথা সম্ভব উন্নয়ন করেছি।নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহন করেছি।আমি আমার অবস্থান থেকে শতভাগ শততা এবং নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। নির্বাচনের পূর্বে আমার যে ইশতেহার ছিলো তা আমি পূরন করতে চেষ্টা করেছি। শুধু তাই নয়, যতটুকু করার কথা ছিলো তার থেকে বার্তি কাজও করেছি বরিশাল সিটিতে। তাই কে কি বলছে সে দিকে গুরুত্ব না দেয়াই ভালো। কেননা যার পক্ষ আছে তার বিপক্ষও আছে। তবে আমি মনে করি একজন নির্বাচিত মেয়র হিসেবে আমি সফল। প্রসঙ্গত,২০১৩ সালের ১৫ জুন বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন বিএনপি সমর্থিত আহসান হাবিব কামাল।ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর চেয়ে ১৮৬৫১ ভোট বেশি পেয়েছিলেন তিনি। এর আগে তিনি জাতীয়তাবাদী নাগরিক কমিটির প্রার্থী হয়ে ১৯৯১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ একযুগ বরিশাল পৌরসভার প্রশাসক,চেয়ারম্যান এবং নবগঠিত সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD