বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৯ অপরাহ্ন
বাবুগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিনিধি: বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ভূতেরদিয়া গ্রামে আজিজুল হক (৫৫) এর মৃত্যুর ১৮ দিন পর আদালতে হত্যার অভিযোগ এনে নালিশী মামলা দায়ের করা হয়।
৪ জানুয়ারি দাফনের ৪ মাস পর সোমবার (২৯ এপ্রিল) সকালে ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে বৃদ্ধের লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে।
এতে ক্ষিপ্ত এলাকাবাসী বলেন, শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করেন বৃদ্ধ আজিজুল হক। তার জানাজা নামাজে এলাকার চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ শতশত লোক অংশগ্রহণ করেন। অথচ তখন কেউ বলেনি তাকে হত্যা কর হয়েছে। তার ছেলে সন্তানসহ কেউ অভিযোগ তোলেনি অথচ মৃত্যুর ১৮ দিন পর ভাইয়ের ছেলে বেল্লাল সিকদার বাদী হয়ে আদালতে আনিছুর বেপারিসহ তার পরিবার পরজনসহ মোট ১১ জনকে আসামী করে নালিশি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি জমিজমা নিয়ে বিগত দিনের আক্রোশ থেকে করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
মামলার এজাহার থেকে জানাযায়, মামলায় উল্লেখিত ঘটনার দিন আসামীগন আজিজুল হককে মেরে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। স্থানীয় থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে থানা কতৃপক্ষ মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে এবং লাশ দাফন করতে বলে। ফলে লাশ হাসপাতালে নিতে সাহস পায়নি বাদী। একারনে লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে পোস্টমর্টেম করে আসামীদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় গ্রেফতারী পরোয়ানার আকুতি জানায় আজিজুল হকের ভাতিজা মামলার বাদী বেল্লাল সিকদার।
ফলে বরিশাল বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সি,আর ১৬/২৪ নং মামলাটিকে আমলে নিয়ে পোষ্টমর্টেম’র জন্য কবর থেকে লাশ উত্তোলনের নির্দেশ দেয়।
বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর মেডিকেল অফিসার ডা. ওসমান গনি বলেন, আজিজুল হক নামের রোগীটি ৪ জানুয়ারি সকাল সারে ১১ টার দিকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। আমরা তাকে এক্স-রে, ইসিজিসহ বিভিন্ন পরিক্ষা – নিরিক্ষা করাই। তার গায়ে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় নায়। দুপুর ২টার দিকে (সিওপিডি) হৃদ যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু বরন করেন। যার সকল ডকুমেন্টস হাসপাতালে সংরক্ষিত রয়েছে।
মৃত আজিজুল হকের ছেলে বলেন, আমি বাবার মৃত্যুর সময় ঢাকা ছিলাম। মৃত্যুর খবর শুনে বাড়িতে আসি। তখন মারধরের কোন কথা শুনিনি। মামলার বিষয়ে আমাদের সাথে কোন পরামর্শ নেওয়া হয়নি।
মামলার বাদী, মৃত আজিজুল হক’র ভাতিজা বেল্লাল সিকদার বলেন, আমার চাচাকে মারধর করা হয়। তাকে দেখে আমি অজ্ঞান হয়ে পরি। চাচাকে অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়। চাচা আমাকে মৃত্যুর আগে প্রতিশোধ নেওয়ার কথা বলে গিয়েছে। তাই মামলা দায়ের করেছি। মামলার এজাহারে চিকিৎসা না দিয়ে দ্রুত দাফন উল্লেখ করার বিষয়ে বলেন, আমি ঠিকই বলেছি উকিল ভুল লিখেছেন।
যদিও মামলার মূল আসামী আনিচুর বেচারী বলেন, শত্রুতা আদায়ে স্বাভাবিক ভাবে মৃত আজিজুল হককে ভিকটিম বানিয়ে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। কারন এর আগে গত ১০ -১২ বছর যাবৎ জমিজমা নিয়ে আমার বিরুদ্ধে তারা একের পর এক মামলা দিয়ে যাচ্ছে। সব মামলা থেকে আমি অব্যহতি পেয়েছি। ফলে তারা এখন আমাকে মিথ্যা হত্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। যাতে আমি বাড়িঘর ছেড়ে অন্যকোথাও চলে যাই।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বাকেরগঞ্জ সার্কেল)ফরহাদ সরদার বলেন, যেকোন এলাকায় হত্যার ঘটনা ঘটলে বিষয়টি স্থানীয় লোকজন ও থানা পুলিশ জানবে। যদি থানার ওসি মামলা নিতে অপারগতা জানায় তাহলে উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের কাছে জানাবে। এই মামলাটির ক্ষেত্রে এরকম কিছু ঘটেনি। মৃত্যুর ১৮ দিন পর বাদী সরাসরি আদালতে মামলা করেন। পুলিশের ইমেজ নিয়ে প্রশ্ন তোলায় আদালতের নির্দেশনা নিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর সামনে লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। পোষ্টমর্টেম করলে বিষয়টি ক্লিয়ার হওয়া যাবে। পোষ্টমর্টেম রিপোর্ট পেলে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
লাশ উত্তোলনের সময় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সুব্রত বিশ্বাস দাস উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বাবুগঞ্জ থানা পুলিশ সহ স্থানীয় জনগন উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply