শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৫ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারতে পতিতাবৃত্তির জন্য বিক্রি করার অভিযোগে মানব পাচার আইনে মামলা দায়ের করেছেন যিনি তার বিরুদ্ধেই নানা অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন পাচার হওয়া সেই নারী। একই সাথে মানবপাচার আইনে দায়ের হওয়া মামলার ঘটনা প্রবাহ মিথ্যে বলে দাবি করেছেন ভূক্তভোগী নারী।
বুধবার (০৩ এপ্রিল) বেলা ১১ টায় শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন নিপা বেগম নামের ওই নারী।
লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, বরিশাল মেট্রোপলিটনের বিমানবন্দর থানাধীন মাকরকাঠী এলাকার মিলন আকনের সাথে নিপার ২০০৬ সালে বিবাহ হয়। দীর্ঘ সংসার জীবনে তাদের ইফাত একটি ১৬ বছরের ছেলেও সন্তানও রয়েছে। তবে বছর কয়েক পূর্বে নিপা জানতে পারেন মিলন আকন একজন পেশাদার মাদক কারবারি এবং তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে এবং বিভিন্ন সময়ে একারণে কারাভোগও করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে নিপা বলেন, আমি ধার্মিক হওয়ায় তাকে বাধা দিয়েও থামাতে পারিনি বরং আমাকে বিভিন্ন সময়ে মাদক পাচারের জন্য চাপ দিত। আর না শুনলে শারিরীক ও মানসিকসহ বিভিন্ন নির্যাতন চালাতো। যা থেকে রক্ষা পেতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহায়তা কামনাসহ পারিবারিক আদালতেরও দ্বারস্থ হয়েছিলাম। কিন্তু মিলন আকন সে সকল অভিযোগ আমলে না নিয়ে আমার ওপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছিল। তার নির্যাতন থেকে বাঁচতে, আমি ২০২২ সালের ২২ অক্টোবর বগুড়া রোড কাজী অফিস থেকে স্ব ইচ্ছায় মিলন আকনকে তালাক দেই। পরে পারিবারিকভাবে মীমাংসা করা হলেও মিলনের নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। ২০২৪ সালের ২২ মার্চ মিলন আকনকে পুনরায় তালাক দেই।
তিনি বলেন, এদিকে বরিশাল নগরের রুপাতলী এলাকার বাসিন্দা আলমগীর হোসেনের সাথে আমি নতুন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। শারিরীকভাবে অসুস্থতার কারনে ডাক্তার দেখাতে আমি ও আমার বর্তমান স্বামী আলমগীর হোসেন ভারতে যাওয়ার চিন্তা করি। এদিকে ছেলে ইফাতের এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ায় তাকেও নিয়ে যাওয়ার চিন্তা করি। পরবর্তীতে গত ২৪ মার্চ আমার ছেলে, বর্তমান স্বামীসহ আমি ভারতের কলকাতায় যাই এবং সেন্ট্রাল পয়েন্ট গেষ্ট হাউজে উঠি।
পরের দিন ২৫ মার্চ কয়েকজন যুবক সেই হোটেলে এসে আমার বর্তমান স্বামী আলমগীরকে লাঞ্চিত করে। পাশাপাশি ইফাতকে অপহরণের অভিযোগ এনে আমার কাছ থেকে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে বাবা মিলন আকনের কাছে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। যে সংক্রান্ত আমার কাছে রয়েছে। সেইসাথে স্থানীয় পুলিশও আমাদের ভারত সকলের ভারতে যাওয়ার কাগজপত্র যাচাই করে বৈধ পায়।
তিনি বলেন, সাবেক স্বামী মিলনের ভয়ে আমি চিকিৎসা না করিয়ে পরের দিন বর্তমান সামী আলমগীরসহ ২৬ মার্চ আকাশপথে দেশে চলে আসি। তবে ওই সময়ের মধ্যে মিলন আমার বর্তমান স্বামীর পরিবারকে বিভিন্নভাবে জীবননাশের হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিলো। আর হুমকি-ধামকি থেকে বাঁচতে গত ৩১ মার্চ আমি কোতোয়ালি মডেল থানায় মিলন আকনের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি করি। আর সেই ডায়েরি করার খবরে পরের দিন ১ এপ্রিল মিলন আকন বাদী হয়ে মানবপাচার আইনে একটি মিথ্যে অভিযোগে মামলা করেন। যেখানে আমার বর্তমান স্বামী আলমগীর হোসেনসহ দুজনকে আসামী করা হয়েছে।
নিপা বলেন, মামলা মিলন আকন উল্লেখ করেছেন আমাকে ও আমার ছেলে ইফাতকে আমেরিকা নেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে পাচার করেছে, অথচ আমরা সবাই বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা নিয়ে ভারতে গিয়েছি। আবার বলা হয়েছে আমাকে নির্যাতন ও পতিতাবৃত্তি করাতে বাধ্য করাচ্ছে আলমগীর হোসেন ও অন্য আসামীরা। কিন্তু ভারতে আমি আমার স্বামী ও ছেলে ছাড়া অন্য কেউ যাইনি। মিলনের মামলায় বলা হয়েছে ভারতের কলকাতায় আমাদের অজ্ঞাত স্থানে রাখা হয়েছে, তাহলে মিলনের লোকজন গিয়ে আমার স্বামীকে লাঞ্চিত ও ছেলে জোরপূর্বক নিয়ে আসলো কিভাবে। সেইদিন মিলন ভিডিও কলেও ওই লোকদের সামনে আমাদের সাথে কথা বলেছে, যার প্রমাণও আমার কাছে রয়েছে। সর্বোপরি পাচার হলে তো ভারতে থাকার কথা কিন্তু আমি কিভাবে বর্তমানে বরিশালে অবস্থান করছি এবং স্বামী আলমগীরের সাথে সংসার করছি। আর আমার ছেলেও তো মিলনের কাছে রয়েছে।
তিনি বলেন, আমি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই, সেইসাথে আমার নাবালক ছেলের নিরাপত্তা চাই। কারন ওকে নানানভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে নিপার বর্তমান স্বামী আলমগীর হোসেন জানান, ইফাত নিপার ছেলে, সে তার মায়ের সাথে কোথাও গেলে আমি বাধা দেব কেন। ইফাতের যেমন তার মায়ের প্রতি অধিকার রয়েছে, তেমনি মায়েরও রয়েছে তার প্রতি। তবে নিপা বর্তমানে আমার স্ত্রী তাই তার ভালমন্দ দেখভাল করার কথা আমরাই। তাকে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের কথা অনুযায়ী উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়েছিলাম আর এটাই আমার কাল হয়েছে। এখন আমি ও আমার স্বজনরা মানবপাচার মামলার আসামী।
তবে আদালতে দায়েরেকৃত ওই মামলাটির কাগজপত্র পাওয়ার পরে পুরো ঘটনা তদন্তে নামবে পুলিশ। আর তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও নির্দোষ কাউকে জড়ানোর সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য ২০২৩ সালের শেষ দিকে মিলন আকন ও তার সহযোগী সেন্টুর বাসা থেকে ফিন্সিডিল উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ওই ঘটনায় স্টেু ধরা পড়লেও মিলন পালিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন তৎকালীন কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আনোয়ার হোসেন।
Leave a Reply