রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন
সৈয়দ মেহেদী হাসান :
বরিশালের গুরুত্বপূর্ণ চারটি সেতুতে যুগ পেরিয়ে গেলেও জ্বলছে না সড়ক বাতি। লাখ-লাখ টাকায় সড়ক বাতি স্থাপন করা হলেও ঠুনকো অজুহাতে আলোক রশ্মির বাইরেই থেকে যাচ্ছে সেতুগুলো। ফলে এসব সেতুতে সন্ধ্যা নামলেই ভিড় বাড়ে অপরাধী চক্রের। ছোটখাটো মারামারি, ছিনতাই, দর্শনার্থীদের যৌন হয়রানি, প্রেমিক প্রেমিকাদের জিম্মি করা ও ভ্রাম্যমান পতিতাদের নিরাপদ আখড়া হয়ে উঠেছে এই সেতুগুলো। অথচ বরিশালের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগে বাড়তি পাওনা কীর্তনখোলা নদীর ওপর দপদপিয়া পয়েন্টে শহীদ আব্দুর রব সরেনিয়াবাত সেতু, খয়রাবাদ উপ-নদীর উপর খয়রাবাদ সেতু, উজিরপুর-বাবুগঞ্জ উপজেলায় এম.এ জলিল সেতু (শিকারপুর) ও বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাংগীর সেতু (দোয়ারিকা)।
এই চারটি সেতুকে বলা হয়ে থাকে বরিশালের প্রবেশ্বদ্বার এবং সাগরকন্যা কুয়াকাটার দরজা। মজার কথা হলো সেতু নির্মাণের পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর কিয়দংশ ছাড়া বাকিগুলোতে একদিনের জন্যও জ্বলেনি ল্যাম্পপোস্টের সড়ক বাতি। এরমধ্যে ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর নিচ দিয়ে বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপন করা হয়েছিল। বরিশাল সড়ক ও জনপদ বিভাগ বলছে, সেই তার চুরি করে নিয়ে গেছে চোর। এ বিষয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হলেও বিশেষ কোন অগ্রগতি হয়নি। চুরি যাওয়া বৈদ্যুতিক কেবলও পাওয়া যায়নি। এই সেতুতে রেলিংয়ে বাতি রয়েছে মোট ১৩৪টি। তবে বর্তমানে বৈদ্যুতিক লাইন ল্যাম্পপোস্টের উপর থেকে ঝুলিয়ে বাতি জ্বালালেও রহস্যজনক কারনে অর্ধেক সেতু থেকে যায় অন্ধকারে।
ঝালকাঠি জেলার শেষ সীমানায় অবস্থিত খযরাবাদ সেতু। শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু পার হয়েই খয়রাবাত সেতু অতিক্রম করতে হয়। এই সেতু নির্মাণের পর থেকে আজও বাতি জ্বলেনি। মাঝখানে ঝালকাঠি সড়ক ও জনপদ বিভাগ সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বাতি জ্বালানোর উদ্যোগ নিয়ে কোটি টাকা মূল্যে সোলার প্যানেল বসিয়েছিল সেতুর দুই ধারের প্রায় শতাধিক ল্যাম্পপোস্টে। কিন্তু সোলার চার্জর ও ব্যাটারীর নি¤œমানের কারনে সে যাত্রায়ও আলো দেখেনি দর্শনার্থী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টিরা। বর্তমানে সোলার প্যানেলগুলো স্থানীয়রা খুলে নিয়ে বসত-বাড়িতে ব্যবহার করছে।
ওদিকে উদ্বোধনের পর থেকেই এম.এ জলিল সেতু (শিকারপুর) ও বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাংগীর সেতু (দোয়ারিকা) দুটির রেলিংয়ের সঙ্গে আলো প্রতিফলক কাগজ লাগিয়েই দায়সাড়া কাজ চালানো হচ্ছে। ওই রঙিন কাগজে আলোর প্রতিফলনই রাতে পরিবহন চালকদের কাছে সেতুর অবস্থান নিশ্চিত করে। তা দেখেই যানবাহনগুলো অধিক ঝুঁকি নিয়ে রাতে সেতু পার হয়। বাতির ব্যবস্থা করতে উদ্বোধনের প্রায় এগার বছর পরে এ দু’ সেতুতে ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করে বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ বিভাগ বরিশাল।
তবে ওই ল্যাম্পপোস্টগুলো স্থাপনের চার বছর অতিবাহিত হলেও সেতু দুটিতে আজও জ্বলেনি বাতি। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ বিভাগ এ সেতু দু’টি নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়। কুয়েতের অর্থ সহায়তায় চীনের একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ‘চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি’ সেতু দু’টির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে। রাতে অন্ধকারে সেতু পারাপার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতার আশংকা সত্বেও কর্তৃপক্ষ অর্থ স্বল্পতার অজুহাতে সেতু দু’টিতে আলোর ব্যবস্থা করেনি। সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুগুলোর সংযোগ সড়কের অনেক স্থানের মাটি সরে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আর সেতুতে স্থাপিত ল্যাম্পপোস্টের বাতিগুলো ঝুলে আছে ও ভেঙে পড়ে গেছে।
কোনো কোনো বাতির অস্তিত্বই নেই। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সন্ধ্যা নামলেই সেতু এলাকায় ভূতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সেতু এলাকা ফাঁকা থাকায় এবং বাতি না জ্বলায় সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলকারীরা প্রায়ই ছিনতাইয়ের শিকার হয়। মাঝে মধ্যে যানবাহন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের বরিশাল জোনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো: সোলায়মান মুঠোফোনে বলেন, সেতুগুলোতে আলো জ্বালানোর জন্য অতি দ্রুত কাজ শুরু করা হচ্ছে। তিনি বলেন এসব সেতুতে প্রতিদিন হাজারো মানুষ আসে। অগনিত যানবাহন চলাচল করে। অভ্যাগতদের কথা মাথায় রেখেই সমস্যাগুলো স্থায়ীভাবে সমাধানের পরিকল্পনা চলছে।
Leave a Reply