সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩১ পূর্বাহ্ন
রাশেদ রাব্বি॥ যতই দিন যাচ্ছে, ততই বাড়ছে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের তীব্রতা। এটি আরও এক থেকে দুই সপ্তাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময়ে বাড়তে পারে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় যতদ্রুত সম্ভব ‘লকডাউন (অবরুদ্ধ)’ কার্যকরের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বুধবার দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে যুগান্তরের কাছে উল্লিখিত অভিমত দেন বেশ কয়েকজন ভাইরোলজিস্ট (ভাইরাস বিশেষজ্ঞ) ও এপিডেমিওলজিস্ট (রোগতত্ত্ববিদ)। তারা আরও জানান, দেশে ভাইরাসের স্বাভাবিক সংক্রমণ বজায় থাকলে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা এত বাড়ত না। কিন্তু সংক্রমণের মাঝামাঝি সময়ে সারা দেশে অবাধ চলাচলের সুযোগ করে দেয়ার কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শুধু তাই নয়, সরকার ঘোষিত দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা সাধারণ ছুটিতেই লোকজনকে বাড়িতে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে ভাইরাসটি ধীরে ধীরে সামাজিক সংক্রমণে রূপ নেয়। এতেই বাড়তে থাকে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর তথ্যমতে, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়ার পর ইতোমধ্যে ১০২ দিন অতিবাহিত হয়েছে। বুধবার (১০২তম দিন) চার হাজারের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা একদিনে সর্বোচ্চ। দেশে সংক্রমণের শুরু থেকে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৮ হাজার ৪৮৯ জনে। একই সময়ে দেশে এ রোগে মৃতের সংখ্যা ১৩০৫ জন। আক্রান্ত এবং মৃতের প্রায় অর্ধেক রোগী শনাক্ত হয়েছে চলতি মাসের প্রথম ১৭ দিনে। এই সময়ে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৪৯ হাজার (৪৮ হাজার ৯৫৭) জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৬৩৩ জনের।
ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন (নিপসম)-এর ভাইরোলজিস্ট ডা. মোহাম্মদ জামালউদ্দিন বলেন, আমাদের দেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ভাইরাসের রি-প্রোডাকশন নম্বর না করায় এটি বাড়া-কমার হার সঠিকভাবে বলা কঠিন। ভাইরাসের ট্রান্সমিশন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় থাকলে সেটি বলা সহজ হতো। কিন্তু সংক্রমণ চলাবস্থায় সারা দেশে জনসাধারণের অবাধ যাতায়াতের ফলে সংক্রমণের হার কয়েকগুণ বেড়েছে। তবে ভাইরোলজিক্যাল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, বর্তমানে যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে, সেটি আগামী এক থেকে দু’সপ্তাহ পরে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে।
আইইডিসিআরের তথ্যানুযায়ী, দেশে প্রথম ১০০ রোগী শনাক্ত হয় প্রথম ২৮ দিনে, অর্থাৎ ৬ এপ্রিল। পরবর্তী ৮ দিনে (১৪ এপ্রিল) এই সংখ্যা এক হাজারে পৌঁছায়। এর ১৯ দিন পর অর্থাৎ ৩ মে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ হাজারে। এরপর ১৮ মে রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৫ হাজারে। গত ১ জুন এই সংখ্যা ৫০ হাজারে পৌঁছায়। আর চলতি মাসের ১-১৭ তারিখ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৮ হাজার ৪৮৯ জনে।
দেশে ৮ মার্চ প্রথম কোভিড-১৯ শনাক্তের কথা জানায় সরকার। এর ১০ দিনের মাথায় ১৮ মার্চ সংক্রমণে প্রথম মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করা হয়। ৫ এপ্রিল পর্যন্ত মৃত্যুর ঘটনা ছিল অনিয়মিত। পরবর্তী সময়ে দেশে করোনায় মৃত্যু যেন প্রতিদিনের একটি স্থায়ী ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
এখন পর্যন্ত সরকার করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ১ হাজার ৩০৫ জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে। এর মধ্যে চলতি মাসের ১৭ দিন মৃত্যু হয়েছে ৬৩৩ জনের। যা মোট মৃত্যুর প্রায় অর্ধেক। এর বাইরে রোগী শনাক্তের প্রথম থেকেই প্রতিদিন কোভিড-১৯ উপসর্গ নিয়ে অনেক মানুষের মৃত্যুর খবর আসছে। এ পর্যন্ত অন্তত এক হাজার মানুষ মারা গেছেন উপসর্গ নিয়ে, যাদের বেশিরভাগেরই নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি।সুত্র,যুগান্তর
Leave a Reply