রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০১ পূর্বাহ্ন
রাহাদ সুমন, বানারীপাড়া ॥ বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের পূর্ব বেতাল গ্রামের আল-আমিন রনি, যিনি গতবছরের জুলাই মাসে ঢাকা গণঅভূত্থানে শহীদ হন, তার মৃত্যুতে স্ত্রীর গর্ভে থাকা সন্তান রোজার ভাগ্য হয়ে উঠেছে করুণ। আল-আমিন রনি শহীদ হওয়ার মাত্র কয়েক মাস পরে, ৪ নভেম্বর তার স্ত্রী মিম আক্তার সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে এক ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। নবজাতকের নাম রাখা হয় “রোজা”।
বাবা আল-আমিন রনি সন্তান হওয়ার আগেই শহীদ হয়েছেন এবং তাকে শেষবারের মতো দেখাও হয়নি। রোজাও বাবার মুখ দেখে না, না বাবার ভালোবাসা পায়। মিম আক্তার একদিকে স্বামীহীন জীবন কাটাচ্ছেন, অন্যদিকে নিজের সন্তানকে বড় করার কঠিন সংগ্রামে লিপ্ত। এবারের ঈদ রোজার জন্য অনেক কষ্টের, কারণ সে এবারই প্রথম ঈদ কাটাল বাবাহীন। চোখে এক প্রশ্ন, কি জানে সে তার বাবার মুখের রূপ কি ছিল!
রনির মা মেরিনা বেগম ও তার শতবর্ষী দাদি মরিয়ম বেগমের কান্না থামছে না। রনির মৃত্যুতে তাদের জীবন যেন এক বিপর্যয়ে পরিণত হয়েছে। তারা এখন প্রতিদিন রনির কবরের কাছে গিয়ে চোখের জল ফেলে, তার জান্নাত কামনা করে প্রার্থনা করেন। মেরিনা বেগম বলেন, “নাড়ী ছেড়া ধন রনি’র মৃত্যুর পর আমাদের জীবনের সব হাসি-আনন্দ চিরতরে হারিয়ে গেছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘রনি প্রতি বছর ঈদ উপলক্ষে আমাদের সবার জন্য পোশাক ও খাবার কিনতো, সবাই মিলে আনন্দের মধ্যে ঈদ উদযাপন করতো। কিন্তু এবার সে আমাদের কাছে নেই, ঈদের আনন্দ তার কবরের কাছে গিয়ে চোখের জলে ফেলে কাটাতে হয়েছে।’’
স্ত্রী মিম আক্তার জানান, রনি তার ছেলে হলে “আজান” এবং মেয়ে হলে “রোজা” নাম রাখার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। মিম তার স্বামীর ইচ্ছা অনুযায়ী মেয়ের নাম রোজা রেখেছেন, তবে এখন তিনি খুবই কঠিন সময় পার করছেন। স্বামীহীন এই তরুণী বলেন, “আমার স্বামীকে হারিয়ে জীবনের সব আনন্দ শেষ হয়ে গেছে। এখন আমার জীবনের লক্ষ্য হলো নিজে সাবলম্বি হয়ে আমার মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করে তুলতে।”
রনির শ্বশুর কামাল হোসেন মাঝি বলেন, “মিম এইচএসসি পাস করেছে এবং এবছর ডিগ্রিতে ভর্তি হবে। আমরা সরকারের কাছে মেয়েকে চাকরি দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।’’ রনির মৃত্যু একদিকে যেমন পরিবারের জন্য দুঃখের, তেমনি সমাজের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।
আল-আমিন রনি (২৪) গতবছরের ১৯ জুলাই ঢাকার মহাখালীতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পরদিন তার মরদেহ বাড়িতে আনা হয়, এবং রাত ১টায় জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার পরিবার বর্তমানে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিনযাপন করছে, আর রোজা এখন বাবাহীন হয়ে বেড়ে ওঠার কঠিন পথে চলছে।
Leave a Reply