সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৬ অপরাহ্ন
আরিফ হোসেন,বাবুগঞ্জ : বরিশালের বাবুগঞ্জের কেদারপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ভূতেরদিয়ার খন্দকার বাড়ীর একটি ঘর থেকে দুই নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই একই ঘর থেকে মূমুর্ষ অবস্থায় আর একজন নারীকে উদ্বার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার দিবাগত রাত ১২ টার দিকে।
পুলিশ প্রাথমিক ভাবে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে অবহিত করছে। বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে নেয়ার জন্য চুরির মতো একটি ঘটনার রুপ দেয়ার চেষ্টা করেছে দৃর্বৃত্তরা। যদিও এ ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে এখন পর্যন্ত আটক করা হয়নি।
স্বজন ও স্থানীয়রা বলছে, চুরি করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে খাবারের সাথে বিষাক্ত দ্রব্য মিশিয়ে এদের কিছু খাওয়ানো হয়েছে।
মৃত লালমোন নেছা (১১৫) বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য (মেম্বার) দেলোয়ার হোসেনের মা। অপর মৃত রিপা আক্তার (২১) দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সোলায়ামান এর স্ত্রী। এছাড়া গুরুত্বর অসুস্থ সোলায়মানের মা মিনারা বেগম (৫৫) কে স্থানীয় বাহেরচর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বাবুগঞ্জ থানার পরিদর্শক (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে বুধবার (২৬ জানুয়ারি) রাত ১২ টার মধ্যে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। পুলিশের সহযোগীতায় তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। হাসপাতালে নেয়ার পর দাদী শাশুড়ী লালমোন নেছা ও নাত বউ রিপা আক্তারকে মৃত ঘোষনা করা হয়। আর মিনারা বেগম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, বুধবার (২৫ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১১ টা থেকে সাড়ে ১১ টার দিকে প্রতিবেশী খন্দকার কামাল হোসেন এর মা মোসাঃ মরিয়ম বেগম টয়লেটে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হন। তখন তিনি বাড়ির মধ্যে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির অবস্থান দেখতে পেয়ে ডাকাডাকি করেন। তবে ওই ব্যক্তি কোন উত্তর না দিলে ওই নারী ঘরের ভেতর থেকে টর্স লাইট আনতে যান। এসে ওই ব্যক্তিকে আর না পেয়ে নিজেদের গোয়াল ঘরের দিকে যান। সেখানে গিয়ে গরুসহ সবকিছু ঠিকভাবে দেখতে পান। পরে ঘরে ফেরার সময় সাবেক ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেনের ঘরের দরজা খোলা দেখতে পেয়ে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু ঘরের ভেতর থেকে কোন সারাশব্দ না আসায় তিনি ভয়ে ডাক চিৎকার দিলে আশপাশের বাড়ির লোকজনও সেখানে জড়ো হন। পরে স্থানীয়রা মিলে ঘরের ভেতর গিয়ে তিন নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং পুলিশে খবর দেয়।
প্রতিবেশী সোলাইমানের চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, গতকাল ওই পরিবার একটি জমি বিক্রি করে। একটি চক্র মনে করেছিলো জমি বিক্রির টাকা ঘরে আছে তাই এধরণের ঘটনা ঘটিয়েছে। এছাড়া চক্রটি মৃতদের সাথে থাকা স্বর্নালংকার নিয়ে গেছে। এদিকে নিহত রিপার ফুপু সীমা বেগম বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। রিপার সাথে স্বামী সোলায়মান ও তার পরিবারের সাথে দন্দ্ব চলে আসছিলো। এর আগে তাদের সাথে পারিবারিক দন্দ্বে ডিভোর্স হয়ে।পরে স্থানীয়দের মিমাংশায় আবারো বিবাহ হয়। স্থানীয় ইউপি সদস্য ইব্রাহীম বিশ্বাস বলেন, মোঃকেদারপূর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিন ভূতেরদিয়া এলাকার এই ঘটনায় পুরো এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে । গেলো রাতে এ বাড়িতে দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী, মা ও ছেলে বউ ছাড়া কেউ ছিলেন না। কেউ সন্দেহ করছে চুরির জন্য খাবারের সাথে কিছু মিশিয়ে এই পরিবারের তিনজনকে অচেতন করা হয়েছিলো। আর সেই বিষক্রিয়া বেশি হওয়ায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে, বাকী একজন অচেতন হয়ে গুরুত্বর অসুস্থ হয়। তবে সার্বিক আলামত দেখে চুরির জন্য নয়, হত্যাকান্ডের জন্যই এমনটা করা হয়েছে তাও সন্দেহ করছেন অনেকে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরে আলম বলেন, ঘরের এক পাশে একটি ছোট আকারের সিঁদ কাটা হয়েছে, তবে সেটি দিয়ে কোন মানুষের চলাচল সম্ভব নয়। আর পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে যেটুকু জেনেছি তাতে কিছু স্বর্নালংকারসহ অল্প কিছু মালামাল খোয়া গেছে। এক্ষেত্রে চুরি হলে আরও অনেক মালামালই তো খোয়া যেতো।
বাবুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি পুরোপুরি পরিকল্পিত একটি হত্যাকান্ড বলেই মনে হয়েছে। বিষয়টি ভিন্ন খাতে রুপ দেয়ার জন্য চুরির ঘটনা সাজানো হয়েছে। আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বাকেরগঞ্জ সার্কেল) ফরহাদ সরদার বলেন, প্রথমিকভাবে বিষয়টি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে মনে হয়েছে। ময়না তদন্তের পর প্রকৃত ঘটনা যানা যাবে। জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করেছে।
Leave a Reply