পার্সেল প্রতারণা: মূল হোতা বিপ্লবকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী Latest Update News of Bangladesh

মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪, ০৯:৪৭ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




পার্সেল প্রতারণা: মূল হোতা বিপ্লবকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

পার্সেল প্রতারণা: মূল হোতা বিপ্লবকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

পার্সেল প্রতারণা: মূল হোতা বিপ্লবকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী




ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ বিদেশি বন্ধু সেজে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কেটি টাকা হাতিয়ে নেয়া দেশি-বিদেশী একটি চক্রের মূল হোতা বিপ্লব লস্কর নামের একজন। শতাধিক প্রতারণার ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই নাম। বিপ্লবের বিরুদ্ধে রয়েছে অন্তত শত মামলা।

 

 

প্রতারণার দায়ে আগে বিপ্লব দুইবার আইনশৃক্সক্ষলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গেলেও জামিনে বেরিয়ে আবারও জড়ান প্রতারণা পেশায়।

 

 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিপ্লব লস্কর নামের ওই ব্যক্তি এক সময় গোপালগঞ্জে কুলি হিসেবে কাজ করতেন। তার বাবাও ছিলেন কুলি। তিনি ২০০০ সালে ঢাকায় এসে ফুটপাতে কাপর বিক্রি করতেন। পরে জাড়িয়ে পড়ে অভিনব প্রতারণায়। গত ১৫ বছর ধরে তিনি বিদেশি বন্ধু চক্রের মাধ্যমে প্রতারণা করছেন। এই মুহূর্তে তিনি চক্রটির মূল হোতা। কয়েক হাজার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে তার নাম যুক্ত আছে। প্রতিটি অ্যকাউন্টেই লেন-দেন হয়েছে কোটি কোটি টাকা।

 

 

২০১৩ ও ২০১৬ সালে তিনি দ্ইুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। অন্তত: শত মামলার মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি বিপ্লব। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পাশপাশি তাকে খুঁজছে র‌্যাব এবং সিআইডি।

 

 

একটি স্বেচ্ছসেবী সংগঠনের কর্মী পল্টনের জামিল হোসেন ভূঁঞা জানান, ২০২০ সালের ১৬ জুলাই বিকালে সাড়ে ৫টার দিকে ‘মিথিলা মিথিলা’ নামের ফেসবুক আইডি থেকে তার ফেসববুক অ্যাকাউন্টে একটি ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসে। জামিল ওই রিকোয়েস্ট গ্রহণ করার পর দুইজনের মধ্যে ম্যাসেঞ্জারে কথা হয়। মিথিলা (মূলত প্রতারক) জানায়, তিনি বতর্মানে ইংল্যান্ডে আছে। তার স্বামী একজন বাংলাদেশি। স্বামী মারা গেছেন। মিথিলাও অসুস্থ। যে কোনো সময় মারা যেতে পারেন। স্বামী-স্ত্রীর নামে অনেক জমানো টাকা আছে। সেই টাকা জামিলের মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠাতে চান। টাকা পাঠানো হলে যেন গরীব মানুষের মধ্যে দান করে দেন।

 

 

ওই বছরের ৪ আগস্ট বেলা ১২ টার দিকে জামিলের মোবাইলে ফোন দিয়ে নিজেকে কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বলা হয়, ‘আপনার নামে ইংল্যান্ড থেকে একটি প্যাকেট এসেছে। ওই প্যাকেটের কাস্টমস চার্জ এসেছে ৭৭ হাজার টাকা।’ পরদিন একটি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে জামিল ও চার্জ পরিশোধ করেন। এরপর কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী ব্যক্তি বলে, ‘স্ক্যানিং করার পর প্যাকেটে মূল্যবান কিছু সামগ্রী পাওয়া গেছে। তাই স্ক্যানিং খরচবাবদ আরো এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা দিতে হবে।’

 

 

সরল বিশ্বাসে জামিল ওই টাকা পরিশোধ করেন। পর দিন আরেকটি মোবাইল নম্বর থেকে ফোন দিয়ে জানানো হয়, ‘আপনার নামে আসা ওই প্যাকেটটি আন্তর্জাতিক কুরিয়ার। সেখানে মোটা অংকের বিদেশী মুদ্রা আছে। তাই কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্যাকেটটি নিয়ে ঝামেলা করছে। তাই আরো টাকা লাগবে।’

 

 

তখন জামিল মিথিলার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মিথিলা জানায়, ‘আমার দেয়া প্যাকেটে মিলিয়ন টাকার বেশি আছে। এজন্য সরকারি চার্জ আসবে চার লাখ ২০ হাজার টাকা। আমি চার্জ পাঠাতে ভুলে গেছি। তুমি চার্জ দিয়ে প্যাকেটি ছাড়িয়ে নাও। পরে প্যাকেট থেকে ওই টাকা তুমি রেখে দিও।’ এরপর জামিল ওই টাকা পরিশোধ করেন।

 

 

এভাবে ছয় লাখ ৮২ হাজার টাকা পাঠানোর পর কাস্টমস অফিসার, স্ক্যানিং অফিসার ও আন্তর্জাতিক কুরিয়ার অফিসার পরিচয় দানকারী ব্যক্তিরা জামিলকে বলেন, ‘যেসব রশিদের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করেছেন সেগুলো মিথিলা মিথিলা নামের ফেসবুক আইডিতে পাঠিয়ে দেন।’ টাকা পাঠানোর রশিদ পাঠানোর পর তারা বাংলাদেশি ইনকাম ট্যাক্সবাবদ নয় লাখ ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন।

 

 

এদিকে জামিলের আগের পাঠানো টাকাগুলো ছিলো বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধার করে নেয়া। আর ধার-কর্জ করার মতো পরিস্থিতিও ছিলো না তার। পরে বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারকদের খপ্পরে পড়েছেন।

 

 

পার্সেল প্রতারণার শিকার বনানীর হাবিবুর রহমান বলেন, ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে আমার ফেসবুকে জেসিকা ওকার নামের আইডি থেকে একটি রিকোয়েস্ট আসে। রিকোয়েস্ট গ্রহণ করার পর ওই ব্যক্তি জানান, তিনি আফগানিস্তানে থাকেন। পরে তার সঙ্গে আমার হোয়াটস্যাাপেও কথা হয়। একদিন জানায়, তার কাছে এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় আট কোটি ৫০ লাখ) আছে। সেগুলো বাংলাদেশে আমার মাধ্যমে খরচ করার ইচ্ছা পোষণ করেন। আমি সরল বিশ্বাসে রাজি হলে পার্সেল প্রতারণার মাধ্যমে প্রতারক চক্রের সদস্যরা আমার কাছ থেকে ২১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

 

 

বনানীর আরেক ব্যবসায়ী আহসান হাবীব নাসিম বলেন, বিদেশি বন্ধু সেজে পণ্য বিক্রির নাম করে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে প্রতারক চক্রের সদস্যরা আমার কাছ থেকে সাত লাখ টাকা হতিয়ে নিয়েছে। এ ঘটনায় ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর বনানী থানায় একটি মামলা করেছি। মামলাটি ডিবি পুলিশ তদন্ত করছে।

 

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিদেশি বন্ধুর দামি উপহারের নামে যারা নিয়মিত প্রতারণা করছে তারা বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাসরত নাইজেরিয়া, কম্বোডিয়া ও ক্যামেরুনসহ আফ্রিকার কয়েকটি দেশের বাসিন্দা। তাদের সঙ্গে বিপ্লব লস্করের নেতৃত্বাধীন একটি বাংলাদেশি শক্তিশালী চক্র জড়িত। প্রতারণার জন্য তাদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ডিভিশন। কলিং ও ব্যাংকিং ম্যানেজমেন্ট নামে অভিনব দুটি ডিপার্টমেন্ট খুলে কয়েক ধাপে প্রতারণা করছে চক্রটি। কলিং ডিপার্টমেন্টে কাজ করে বাংলাদেশি প্রতারকরা। এই বিভাগের লোকেরাই কাস্টমস কর্মকর্তা সেজে টার্গেট ব্যক্তিকে ফোন করেন। এখানে আছে আরও দুটি ভাগ। একটি কার্ড ডিভিশন আরেকটি চেক ডিভিশন। প্রতারণা করে পাওয়া টাকা জমা হয় বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে। ব্যাংক হিসাবগুলোর নিয়ন্ত্রণ বিপ্লবের হাতে। ব্যাংক হিসেব থেকে টাকা তুলে চক্রের বিদেশি সদস্যদের পৌঁছে দেন তিনি। এর বিনিময়ে পায় মোটা অঙ্কের কমিশন।

 

 

প্রতারক চক্রটির বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, গত কয়েক বছর ধরে পার্সেলের প্রতারণার যেসব ঘটনা ঘটছে সেগুলো সবকটিতেই বিপ্লব লস্করের নাম জড়িত। আমরা তাকে অনেক দিন ধরেই খুঁজছি। তাকে পাওয়া গেলই এই চক্রের নেটওয়ার্ক ভেঙ্গে দেয়া যাবে। আশা করছি দ্রুতই এ চক্রকে আইনের আওতায় আনতে পারবো।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD