কচুরিপানার স্বাবলম্বী হতে বিদেশ যাত্রা ! Latest Update News of Bangladesh

বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫০ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




কচুরিপানার স্বাবলম্বী হতে বিদেশ যাত্রা !

কচুরিপানার স্বাবলম্বী হতে বিদেশ যাত্রা !




থানা প্রতিনিধি:বড় দিন উপলক্ষে বরিশালের আগৈলঝাড়ায় দু’হাজার দুঃস্থ ও বিধবা নারীর শ্রমে তৈরী কচুরিপানার শান্তা ক্লজ, বাহারী উপহার ও খেলনা সামগ্রী বিদেশে রপ্তানী করে সুনামের সাথে অর্জন করছে বৈদেশিক মুদ্রা। বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা “প্রকৃতি’র” উদ্যোগে আগৈলঝাড়া উপজেলার পাঁচটি কেন্দ্র এলাকার প্রায় দু’হাজার দুঃস্থ ও বিধবা নারীরা এলাকার পরিত্যক্ত ডোবা ও পুকুরের কচুরিপানা দিয়ে বিশেষ ভাবে নির্মিত কাগজ তৈরী করে ওই কাগজ দিয়ে তৈরি করছেন যীশু খ্রিষ্ঠের জন্ম দিন উপলক্ষে সান্তা ক্লজ, ক্রিসমাস ট্রি, গীর্জা ও বাড়ি সাজানোর পন্যসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য নানা উপহার সামগ্রী।

 

উপজেলার জোবারপার এন্টার প্রাইজে গিয়ে ওই গ্রামের বাসিন্দা মনি বালা (৪৮) জানান, কচুরিপানা আর বড়দিন তার জীবনে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। মনিবালা কচুরিপানার কাগজ দিয়ে তৈরি করা বড় দিনের সান্তা ক্লজসহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রী তৈরির সু-নিপুন কারিগরদের একজন। মনি বালার মত ওই এলাকার দু’হাজার অসহায় ও দুঃস্থ নারীরা আগৈলঝাড়ার ৫টি কেন্দ্রে কাজ করে সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন।

 

তিনি আরোও বলেন, ‘অভাবের সংসারে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে বেঁেচছিলাম। আজ তিনি ও তার সহকর্মীরা তিন বেলা ভাত খেতে পারছেন। মনি বালার আরেক সহকর্মী বিধবা বীনা হালদার (৫০) ও বিধবা শিউলী বেগম (৪৭) বলেন, ‘আমরা যেসব জিনিস তৈরি করছি, সেগুলো দিয়ে দীর্ঘদিন থেকে দেশ-বিদেশের খ্রীষ্টিয় সম্প্রদায়ের লোকজনে শুভ বড় দিন পালন করে আসছেন। প্রতিদিন একজন নারী শ্রমিকরা উৎপাদিত কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে চার থেকে সাড়ে চার’শ টাকা আয় করছেন।

 

জোবারপাড় এন্টার প্রাইজের ম্যানেজার পাপড়ী মন্ডল জানান, বর্তমানে প্রকল্পের ৫টি কেন্দ্রের প্রায় দুই হাজার নারী শ্রমিক কাজ করছেন।

 

এদের মধ্যে অধিকাংশ হচ্ছেন স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা কিংবা অসহায় ও দুঃস্থ। প্রোডাক্ট ডিজাইনার খোকন সমদ্দার জানান, উপজেলার জোবারপার এন্টারপ্রাইজ, কালুরপাড়ের বির্বতন, বড়মগরার কেয়া পাম হ্যান্ডিক্রাফ্টস, নগরবাড়ির চ্যারিটি ফাউন্ডেশন ও বাগধা এন্টার প্রাইজে প্রতিবছরই নতুন নতুন গিফ্ট আইটেমের কাজ করা হয়। এখানে চার হাজারের উপর আইটেম তৈরী করা হয়।

আগৈলঝাড়ার বিবর্তনের ম্যানেজার সজল দত্ত জানান, ১৯৮৪ সালে কচুরিপানাকে ঘিরে এমসিসি (মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি) আওতায় এলাকায় গড়ে ওঠে জোবারপাড় এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় এলাকার অসহায় নারীরা শুধু ডোবা ও মজাপুকুর থেকে কচুরিপানা সংগ্রহ করেন। কচুরিপানার সঙ্গে পাট, পরিত্যাক্ত কাগজ ও সিল্ক কাপড় দিয়ে মন্ড তৈরি করা হয়। এরপর তাতে রং দিয়ে রোদে শুকানোর পর তৈরি হয় কাগজ।

 

এভাবে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে ৩ হাজার পিস কচুরিপানার কাগজ। সেই কাগজ দিয়ে তৈরি করা হয় হস্তজাত উপহার সামগ্রী। ঐ উপহার সামগ্রীতে বিভিন্ন ধরনের কাঁচা ফুলও ব্যবহার করা হয়। অল্প সময়ের মধ্যে অসহায় নারীদের হাতে তৈরি পণ্য বিদেশের বাজার দখল করে নেয়। একই বছর উপজেলার বাগধা এলাকায় বাগধা এন্টারপ্রাইজ নামে আরো একটি প্রকল্প চালু করা হয়।

 

এ দুটি প্রকল্পের সাফল্যের পর ১৯৮৭ সালে গড়ে ওঠে কেয়াপাম হ্যান্ডিক্রাফট নামের আরো একটি প্রকল্প। এরপর ১৯৯৩ সালে আগৈলঝাড়ায় বিবর্তন নামের আরো একটি প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে।

তিনি জানান, কচুরিপানার কাগজ দিয়ে তৈরি তাদের উপহার সামগ্রী পাঠানো হচ্ছে কানাডা, ডেনমার্ক, ইতালী, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, হল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট, রাশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।

 

প্রতিবছরই ঐ সব দেশে এ উপহার সামগ্রীর চাহিদা বাড়ছে। বিশেষ করে বড়দিনের উতৎসব থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এর চাহিদা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।

 

 

ওই সংস্থার মাধ্যমে শৌখিন এসব খেলনা ও উপহার সামগ্রী ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে রফতানির মাধ্যমে আসছে প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রা। দুঃস্থ নারীদের তৈরি করা কচুরিপানার শৌখিন উপহার সামগ্রী সর্বত্র প্রশংসা কুড়িয়েছে। ফলে বিধবা ও দুঃস্থ নারীরা খুঁজে পেয়েছেন বেঁচে থেকে স্বাবলম্বী হওয়ায় সুযোগ।

 

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘প্রকৃতি বাংলাদেশ’ এর মাদার প্রকল্প ‘এমসিসি আমেরিকা’র কান্ট্রি প্রতিনিধি মি. জর্জ জানান, ১৯৮৭ সালে আগৈলঝাড়ায় কেয়াপাম হ্যান্ডিক্রাফট্স মাত্র ৭ জন নারী কর্মী নিয়ে ৬ লাখ ডলার মূল্যের রপ্তানি বাজারে প্রবেশ করে। বর্তমানে এখানকার হস্তজাত শিল্প এখন ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ২০ লাখেরও বেশী মার্কিন ডলার আয় করছে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD