রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:৪০ অপরাহ্ন
এইচ.এম হেলাল ॥ স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের ২১তম দিনে আবারও সহিংসতা দেখা দিয়েছে বরিশালে। রোববার বিকেল তিনটার দিকে শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) প্রধান ফটকের সামনে আন্দোলনকারীদের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে হাসপাতালের কর্মচারীরা। এতে কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হন। এরপর উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে এবং এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের প্রধান ফটকে আটকে দেয়। বাধার মুখে তারা হাসপাতালের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় হাসপাতালের ভেতরে অবস্থান নেওয়া কর্মচারীরা আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে পরিস্থিতি চরম উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পূর্ব প্রস্তুতি থাকায় বড় ধরনের সংঘাত এড়ানো সম্ভব হয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, এর আগে ১৮তম দিনে শেবাচিম হাসপাতালের কর্মচারীরা আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালায়। সেই ঘটনার বিচার দাবি করে এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ২১তম দিনে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী রোববার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর অশ্বিনী কুমার টাউন হলে আন্দোলনকারীরা সমবেত হন। পরে সেখান থেকে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শেবাচিম হাসপাতালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
এদিকে হাসপাতালের ভেতরে আগে থেকেই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবস্থান নেন। সম্ভাব্য সংঘাতের আশঙ্কায় হাসপাতালের প্রধান ফটকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গেট বন্ধ করে দেয়। আন্দোলনকারীরা ভেতরে প্রবেশ করতে না পারলেও বাইরে সড়কে স্লোগান দিতে থাকেন। তাদের স্লোগান ছিল মূলত দালাল চক্র ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।
পরে আন্দোলনকারীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখেন। সেখানে তারা দালাল ও সিন্ডিকেটবিরোধী নানা স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন এলাকা। আন্দোলনকারীরা বলেন, স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি, দালাল চক্র ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের অবসান না হলে এই আন্দোলন শেষ হবে না। পাশাপাশি তারা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। তবে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে আন্দোলনকারীরা সেখান থেকে চলে যায়।
অভিযুক্ত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে আন্দোলনকারীরা সোমবার সকাল ১১টায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের আমতলা মোড়ে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেন। স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক মহিউদ্দিন রনি বলেন, আমরা জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করছি। প্রশাসন যদি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, তবে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।
এদিকে সহিংস ঘটনার পর নিরাপত্তা জনিত কারণে হাসপাতালের চিকিৎসকরা হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এর ফলে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে গেলে সাধারণ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়বেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলন ধীরে ধীরে নতুন মোড় নিচ্ছে। একদিকে ছাত্র-জনতা স্বাস্থ্যসেবায় সংস্কারের দাবি তুলছে, অন্যদিকে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিরোধ ও প্রশাসনের নীরবতা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। তারা মনে করছেন, প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা না নিলে সংঘাত আরও বাড়তে পারে।
এদিকে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনকারীরা বারবার দাবি করেছেন, এটি কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন নয়, বরং জনগণের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নের জন্য করা হচ্ছে। তবে বারবার হামলা ও মামলার ঘটনায় আন্দোলন ক্রমশ সংঘাতের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। এরইমধ্যে আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি চলবে। ফলে আন্দোলন স্থায়ী রূপ পেলে স্বাস্থ্যখাতের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
Leave a Reply