রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৫ অপরাহ্ন
জেলা প্রতিনিধি॥ বরগুনায় প্রকাশ্য দিবালোকে স্ত্রীর সামনে খুন হন ২৫ বছরের যুবক রিফাত শরিফ। ঘটনার পরই সিসিটিভিতে রেকর্ড হওয়া হত্যাকাণ্ডের সেই ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সকালে ফেসবুকে আরেকটি স্থিরচিত্র ভাইরাল হয়। সেখানে রিফাতের খুনী নয়ন বন্ডের সঙ্গে রিফাতের স্ত্রীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
তার হাতে ফুল, সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য আরেকজন যুবক রিফাতের স্ত্রীকে মিস্টি খাইয়ে দিচ্ছে। রিফাতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নিহত রিফাত শরীফের সঙ্গে আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির বিয়ে হয় দুই মাস আগে। বিয়ের পর থেকেই নয়ন নামে এক যুবক মিন্নিকে তার প্রেমিকা দাবি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট দিতে থাকে। সেই সঙ্গে মিন্নির সঙ্গে তার পরকীয়া সম্পর্ক আছে বলেও দাবি করে নয়ন। স্ত্রীকে ‘উত্ত্যক্ত’ করায় একাধিকবার নয়নকে সতর্ক করে রিফাত। একপর্যায়ে প্রতিবাদ করে রিফাত। সেই জেরেই তাকে খুন করা হয়।
জানা যায়, ঘটনার দিন সকালে স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে বের হন রিফাত। বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে এলে প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে স্বামী রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করে বরগুনা পৌরসভার ধানসিঁড়ি সড়কের আবু বকর সিদ্দিকের ছেলে নয়ন বন্ড এবং তার প্রতিবেশী দুলাল ফরাজীর ছেলে রিফাত ফরাজী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওইদিন সকাল ১০টার দিকে নয়ন নামে এক যুবকের নেতৃত্বে ৪-৫ জন সন্ত্রাসী রিফাতকে দা দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে যায়।
এ সময় বারবার সন্ত্রাসীদের হাত থেকে স্বামীকে বাঁচাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। একপর্যায়ে গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল ৪টার দিকে রিফাত মারা যান। রিফাতের বাড়ি সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের উত্তর বড়লবণগোলা গ্রামে।
রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, নয়ন প্রতিনিয়ত আমার পুত্রবধূকে উত্ত্যক্ত করত এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট দিত। এর প্রতিবাদ করায় আমার ছেলেকে নয়ন তার দলবল নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমার একমাত্র ছেলেকে যারা দিনে-দুপুরে কুপিয়ে হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই। নিহত রিফাতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মঞ্জুরুল আলম জন বলেন, বিয়ের আগে মিন্নির সঙ্গে নয়ন বন্ডের একটা সম্পর্ক ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে রিফাতের সঙ্গে বিয়ে হয় মিন্নির। এটা মেনে নিতে পারেনি নয়ন বন্ড। রিফাতের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে তাকে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতারও করায় সে। এছাড়া মিন্নিকে নানাভাবে উত্ত্যক্তের পাশাপাশি ফেসবুকে তাকে নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট দিত। এসব বিষয় নিয়ে একাধিকবার রিফাতের সঙ্গে নয়নের দ্বন্দ্ব হয়। এ দ্বন্দ্বের কারণেই রিফাতকে লাশ হতে হলো।
মঞ্জুরুল আলম জন আরও বলেন, বুধবার সকালে স্ত্রী মিন্নিকে বরগুনা সরকারি কলেজে নিয়ে যায় রিফাত। কলেজ থেকে ফেরার পথে মূল ফটকে নয়নসহ কয়েকজন রিফাতের ওপর হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে রিফাতকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে নয়ন ও তার সহযোগীরা। রিফাতের স্ত্রী মিন্নি তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই হামলাকারীদের থামানো যায়নি।
তারা তাকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন রিফাতকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি বলেন, বরগুনা পৌরসভার ধানসিঁড়ি সড়কের আবু বকর সিদ্দিকের ছেলে নয়ন বন্ড ও তার প্রতিবেশী দুলাল ফরাজীর দুই ছেলে রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজী এবং রাব্বি আকন আমার স্বামীর ওপর হামলা চালায়।
আমার সামনে ওই সন্ত্রাসীরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। শত চেষ্টা করেও আমি রিফাতকে বাঁচাতে পারিনি। বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবীর মোহাম্মদ হোসেন বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামি শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দ্রুত খুনিদের গ্রেফতার করবে পুলিশ।
Leave a Reply