সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ১১:২৫ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার॥ বরিশালের হিজলা উপজেলার টেকেরবাজার এলাকায় নিজ গৃহে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া গৃহবধূ ইসরাত জাহান ইমা হত্যা মামলা মোড় নিচ্ছে ভিন্ন দিকে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গৃহবধূ ইমার ৮ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও জবানবন্দি ফাঁস করে দিল ঘটনার আসল রহস্য। এ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। ইমার স্বামী মহসিন রেজার পরিবারের দাবি, ইমার বাবার মাধ্যমে বিনিয়োগ করা প্রায় ৩০ লাখ টাকা আত্মসাত করতেই দাফনের এতদিন পরে মিথ্যা হত্যা মামলা দায়ের করেছেন ইমার বাবা সফিকুল ইসলাম মাসুম।
তাছাড়া ওই ভিডিওতে ইমা নিজেই বর্ণনা দেন, শরীরে আগুন লাগার কারণ। ইমা দাবি করেন, তিনি রান্না ঘরে কাজ করতে গিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে তার শরীরে আগুন লেগেছে। প্রথমে ওড়নায়, পরে শরীরে আগুন ধরে যায়। তাকে বাঁচাতে তার স্বামীর আর্তচিৎকারের কথাও বলেন। স্বামীর সাথে তার মধুর সম্পর্কের কথাও বলেন ইমা। ইমার বাবা স্বামীকে ফাঁসাতে পারেন এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন ইমা নিজেই।
এদিকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার অন্যতম স্বাক্ষী খোকন মুন্সি বলেন, ‘মহসিন-ইমা থাকে তিন তলায়। আমরা থাকি একই ভবনের দ্বিতীয় তলায়। বিকেলে হঠাৎ মহসিনের আর্তচিৎকার শুনে আমি তিনতলায় যাই। সেখানে রান্নাঘরের পাশে অগ্নিদগ্ধ ইমাকে দেখে আমি বাথরুম থেকে পানি এনে তার গায়ে পানি ঢালি। মহসিনও তাকে বাঁচাতে দৌড়ঝাঁপ ও ডাক-চিৎকার দিচ্ছিল। পরে গুরুতর ইমাকে অটোতে হাসপাতালে নিয়ে যায় মহসিন ও তার স্বজনরা’।
মহসিনের পরিবার জানায়, মূলত ইমা’র মামা আরিফের ইটের ভাটা ‘বিবিসি ব্রিকস’-এ ব্যবসার জন্য ১৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছে মহসিন রেজা। তাছাড়া ইমার বাবার মাধ্যমে অন্য একটি জায়গায় আরো প্রায় ১৭ লাখ টাকাসহ মোট ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা আছে। এই টাকা আত্মসাতের জন্যই দাফনের এক সপ্তাহ পরে বুদ্ধি করে মিথ্যা হত্যা মামলা দায়ের করেছে ইমার বাবা মাসুম।
মহসিনের পারিবারিক সূত্র আরো জানায়, এটি একটি দুর্ঘটনা। যা মহসিন ও ইমার বাবার পরিবার জানে। ঢাকা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইমার মৃত্যুর পর ইমার বাবা সফিকুল ইসলাম মাসুম নিজেই বিষয়টিকে দুর্ঘটনা উল্লেখ করে এতে তার কোনো অভিযোগ নেই জানিয়ে ঢাকার শাহবাগ থানায় আবেদন করেন। এরপর ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন ও দোয়া মোনাজাতের সার্বিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। স্বামী মহসিন রেজা ও তার পরিবার এবং ইমার বাবার পরিবার মিলেই এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করে। অথচ দাফনের প্রায় এক সপ্তাহ পরে এটিকে হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে মামলা করা হয়। আইন শৃঙ্খলাবাহিনী নিরপেক্ষ তদন্ত করলে একথার সত্যতা পাওয়া যাবে বলে দাবি মহসিনের পরিবারের।
মহসিনের পরিবারের এসব দাবির কিছুটা সত্যতা পাওয়া যায় খোদ মামলার বাদি সফিকুল ইসলাম মাসুমের কথায়। তিনি বলেন, ‘মামলার কী অবস্থা তা আমি বলতে পারব না। কারণ আমি মামলা মোকদ্দমা তেমন একটা বুঝি না, এসব পরিচালনা করেন আমার ভাই’।
এদিকে মামলা দায়েরের পর গত সেমাবার কবর থেকে ইমার লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্ত শেষে মঙ্গলবার দাফন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ মামলা তদন্তের অগ্রভাগে কাজ করছেন জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা (ডিএসবি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাইমুর রহমান।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১১ জুন ইসরাত জাহান ইমা তার স্বামীর বাড়িতে বসে রান্না ঘরে কাজ করছিলেন। এ সময় তার শরীরে আগুন লেগে যায়। সাথে সাথে স্বামী মহসিন রেজাসহ তার পরিবার প্রথমে স্থানীয় হিজলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কর্তব্যরত ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতাল পাঠিয়ে দেয়। সেখানের কর্তব্যরত ডাক্তার আশংকাজনক দেখলে তাকে ঢাকা শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে রেফার করেন। পরে ১৮ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ইসরাত জাহান ইমার।
নিহতের পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় হাসপাতাল ও ঢাকার শাহাবাগ থানা পুলিশের কাছে লিখিত পত্র দিয়ে লাশ গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার হিজলা থানাধীন মহিষখোলা গ্রাামে এনে মাটি দেয়া হয়। অথচ চলতি মাসের ২১ তারিখ নিহতের বাবা শফিকুল ইসলাম মাসুম চারজনকে আসামি করে হিজলা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। জামাই মো: মহসিন রেজা, রেজার ভাই মোস্তফা ব্যাপারী, রেজার বাবা হাজী মো: দেলোয়ার হোসেন ব্যাপারী ও শাহানাজকে আসামি করে মামলা করেন। ইতিমধ্যে ইমার শ্বশুর হাজী দেলোয়ার হোসেনকে ওই মামলায় গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।সুত্র,নয়াদিগান্ত
Leave a Reply