শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৮ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল, ডেস্ক নিউজ:নগর গোয়েন্দা পুলিশের এক সদস্য ঝালকাঠির তরুণীর সাথে পরকীয়া প্রেমের সূত্র ধরে বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে বরিশালের এক মাদক ব্যবসায়ীর বাসায় টানা ২০ দিন আটকে রেখেছিলো । কিন্তু নিজ স্ত্রীর কাছে ঘটনা ধরা পড়ে যাওয়ায় ঐ তরুণীকে ঝালকাঠীতে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগী হলে আশ্রিতা মাদক ব্যবসায়ীর সাথে মতদ্বন্দ থেকে ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়। সেই সাথে বিয়ের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করায় তরুণী মিম আক্তার মিষ্টি ক্ষুদ্ধ হয়ে আতœহত্যার হুমকি দেয়। বেগতিক পরিস্থিতিতে ঐ মাদক ব্যাবসায়ী মিমকে নিয়ে বরিশাল ডিবি কার্যালয়ে উপস্থিত হলে প্রশাসনের গোয়েন্দা শাখায় তোলপাড় সৃস্টি করে।
গোয়েন্দা সদস্য রফিকুল ইসলাম রাব্বীর স্ত্রী এই খবরে ঐ তরুণীর মুখোমুখিতে এক নাটকীয় ঘটনার অবতাড়না ঘটে। পুলিশ কনস্টেবল রাব্বী ঐ তরুণীর সাথে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করলে খোদ তার নিজ স্ত্রী ও মাদক ব্যবসায়ী কাকতালীয়ভাবে এক কাতারে শামিল হয়ে অভিযোগের প্রমাণাদি উপস্থাপন করে। পরে সত্যতা নিশ্চিত হয় তাদের সম্পর্কের তিন বছর গড়িয়েছে, চলছিল বিয়ের প্রস্তুতি। উর্দ্ধতন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা পরিস্থিতির নিরব সমাধানে ঐ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে একটি ফাঁড়িতে বদলি করার মধ্যে দিয়ে নিজেরা এই ঘটনা এড়িয়ে চলতে চাইছে। এতে ক্ষুদ্ব হয়ে রাব্বী নিজ স্ত্রীকে তালাক দেয়ার সিদ্ধান্তে হুমকিতে ঘরছাড়ার ঘটনায় জেলা পুলিশের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ রাব্বীর স্ত্রীও একজন পুলিশ সদস্য হিসেবে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে কর্মরত।
গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক সূত্র এঘটনা নিশ্চিত করে বলেছে, তাদের সদস্য রাব্বীর গোটা কর্মকান্ড ঔদ্ব্যর্তপূর্ন।
এ ঘটনা নিয়ে ঐ গোয়েন্দা সদস্যের সাথে তার নিজ স্ত্রী জেলা পুলিশের নারী কনস্টেবলের বর্তমান বিরোধে তারা বিব্রত। তবে ১৭ মার্চ সন্ধায় এ ঘটনা ফাঁসের সপ্তাহদুই পূর্বে ঐ নারী কনস্টেবল ঘটনা আঁচ করতে পেরে ডিবি কার্যালয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে নালিশ নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল। এসময় সাথে থাকা তার ননদ ভাইয়ের বিচার চেয়ে ভাবীর সাথে ঐক্যবদ্ধ ছিল। সূত্র জানায়, স্ত্রী অসুস্থতাজনিত কারনে ছুটিতে বরগুনার বাড়ীতে গেলে রাব্বী ঝালকাঠির কীর্তিপাশার গোবিন্দ ধবল গ্রামের মিমকে বরিশালে নিয়ে আসে।
১৭ বছর বয়সী ঐ তরুণীকে বরিশাল নগরীরর নথুল্লাবাদ সংলগ্ন লুৎফর রহমান সড়কের পাপিয়ার বাসায় রেখে আসে। পাপিয়াকে বছর খানেক পূর্বে গোয়েন্দা পুলিশের মাঠ কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন মাদকসহ আটক করলে তৎসময় তার স্বামী জাহাঙ্গীরের সাথে রাব্বীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
অভিযোগ রয়েছে, জাহাঙ্গীর ও পাপিয়া দম্পতি মাদক ও নারী ব্যবসায় সম্পৃক্ত থাকায় এই গোয়েন্দা সদস্য তাদের সহায়তা দেওয়ার আশ্বাসে তাদের মধ্যে সম্পর্ক জোরালো হয়ে ওঠে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারী মিমকে ঐ দম্পতির বাসায় রেখে আসার পর সেখানে যাতায়েত এবং খোরপোশ দেয়ার পাশাপাশি ফেসবুক মেসেন্জারে উভয়ের আপত্তিকর কথোপকথন ও ভিডিওচিত্র রাব্বীর স্ত্রীর হাতে ধরা পড়ে।
ঘটনা আড়াল করতে ও স্ত্রীকে শান্ত রাখতে তরুণ বয়সী এই গোয়েন্দা সদস্য মিমকে ঝালকাঠি পাঠিয়ে দিতে পাপিয়াকে চাপ দেয়। কিন্তু মিম বিয়ে ছাড়া বাড়ী যেতে নারাজ হলে আতœহত্যার চেষ্টার হুমকি দেয়। এ নিয়ে পাপিয়ার সাথে রাব্বীর সম্পর্কের অবনতি ঘটলে গত ১৭ মার্চ সন্ধ্যায় মিমকে নিয়ে বরিশাল নগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে উপস্থিত হয়।
গোয়েন্দা কার্যালয়ে রাব্বীর মুখোমুখি পাপিয়ার বাকবিতন্ডে মিমের সাথে সম্পর্কের গভীরতা এবং সূত্রপাত সবিস্তার প্রকাশ পায়। খবর পেয়ে রাব্বীর স্ত্রী সেখানে উপস্থিত হলে আরও নাটকীয়তা দেখা দেয়। বিব্রত ও উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা একপর্যায়ে পাপিয়ার জবানবন্দী লিপিবদ্ধ কওে মিমকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে তার পরিবারকে খবর দেয়। রাতেই শাহানাজ পারভীন তার মেয়ে মিমকে নিজ জিম্মায় নিয়ে যায়।
কাকতালীয়ভাবে ওই রাতে রাব্বী (কনস্টেবল নং-৭২৬) তার বদলির আদেশ হাতে পেয়ে নগরীর নতুনবাজার ফাড়িতে যোগদান করেন। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। এবার বেইজ্জতি হওয়ার অভিযোগ তুলে রাব্বী তার স্ত্রীকে ঘরথেকে বের করে দেয়। স্বেচ্ছায় তালাক দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে।
উপায়অন্ত না দেখে জেলা পুলিশের এই নারী কনস্টেবল নগরীরর করিম কুটির এলাকার এক আতœীয়ের বাসায় আশ্রয় নেয়। তার স্বজনদের অভিযোগ, বোন অগ্রণী ব্যাংক ঢাকা বাংলা একাডেমী শাখার কর্মচারী সোনিয়া আক্তার বর্তমানে ভাইয়ের পক্ষ নিয়ে রাব্বীর স্ত্রীকে স্বেচ্ছায় তালাকের জন্য চাপ দেয়। এই ঘটনা নিয়ে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে নালিশ জানানো থেকে বিরত থাকতে অনবরত টেলিফোনে নানা হুমকিও দিচ্ছে।
বিষয়টি বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম অবহিত হওয়ায় তিনি এই নারী সদস্যকে শান্ত ও নিরাপদে থাকতে উপদেশ দিয়েছেন বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। কিন্তু ডিবি কার্যালয় থেকে রাব্বী বদলি হবার পর এই সংস্থার উর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা এই ঘটনা নিয়ে মিডিয়ার কাছে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দিতে চাইছে না। একটি সূত্রের দাবী,ডিবি পুলিশ এখন বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে রাব্বীকে বাঁ”ানোর স্বার্থে। তারচেয়ে বড় কথা তাদের ইজ্জত রক্ষা।
Leave a Reply