মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৫:৩৭ পূর্বাহ্ন
এম. কে. রানা॥ বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রায় দুই হাজার মানুষ মারা গেছেন। আর আক্রান্ত দেড় লাখ ছাড়িয়েছে। প্রতিদিন এ সংক্রমণের হার বেড়েই চলছে, সাথে মৃত্যুর সংখ্যাও। করোনায় পুরো বিশ্বই বেসামাল। যার প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-, শিক্ষা ব্যবস্থা ও কর্মসংস্থানের সবগুলো খাত। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশের সরকারও শিল্প কারখানা, ব্যাংক, ব্যবসা বাণিজ্যের মতো বিষয়গুলোকে চালিয়ে রাখার এক ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছেন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূলে যেহেতু দেশ ও জাতির আগামী প্রজন্ম শিশু, কিশোর ও যুবক, তাই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ব্যাপারে বদ্ধ পরিকর সরকার। সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের ওপর চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যা হয়ে উঠতে পারে করোনা পরবর্তীকালে আরও ভয়ংকর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের পরামর্শ ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের দৈনন্দিন কর্মসূচি বা কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করে সে মোতাবেক তাদের খাওয়া, দাওয়া, ঘুম ও পড়াশোনার ব্যবস্থা করা। সাথে সাথে তাদেরকে ইনডোর গেম এর ব্যবস্থা করে দেয়া যাতে তারা নিয়মিতভাবে শরীর চর্চা করতে হবে।
স্কুল কলেজ হলো শিক্ষার্থীদের প্রাণ। স্কুল-কলেজ খোলা থাকলে ছেলেমেয়েরা নিয়মিত স্কুল-কলেজে যায়, বন্ধু বান্ধব ও সহপাঠীদের সাথে আনন্দ ফূর্তির মাধ্যমে পড়ালেখা করে দিনের অধিকাংশ সময় অতিক্রম করে থাকে। ফলে তাদের মন মানসিকতা ফুরফুরে মেজাজের হয় এবং জীবনযাপনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে। প্রতিদিন শিক্ষকদের সাথে শ্রেণিকক্ষে বসে শিক্ষাগ্রহণ করা, তাদের সাথে জ্ঞানের আলাপ করা, নিত্যনৈমিত্তিক নতুন নতুন জ্ঞান অর্জনসহ নানা দিক থেকে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হয়। নিয়মিত ঘুম থেকে ওঠা, পড়ার টেবিলে বসা, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের দেয়া হোমওয়ার্ক সম্পন্ন করা সবই শিক্ষার্থীদের নিয়মিত কর্মসূচির অংশ।
কিন্তু বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে শিক্ষার্থীরা বাসায় বসে অনেক ক্লান্তি ও অস্বস্তি বোধ করে থাকে। ছাত্রছাত্রীদের দৈনন্দিন রুটিন কর্মের মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। শিক্ষার্থীদের এ জাতীয় রেগুলার কাজের মাঝে অনিয়মিতভাব পরিলক্ষিত হয় যা তাদের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। শিক্ষার্থীদের মানসিক উন্নয়নের জন্য যা হুমকিস্বরূপ।
প্রতিদিন প্রকৃতির সান্নিধ্যে থেকে বাইরের আলো, বাতাস, পানি ও মাটির ছোঁয়া নিয়ে বেঁচে থাকার মাঝেই মূলত ছেলে মেয়েদের আনন্দ। লকডাউনের কারণে বহুদিন ধরে গৃহবন্দি থেকে জীবনযাপন করলে শিক্ষার্থীদের মন-মানসিকতার উপরে চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়ে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থার মতে প্রতিদিন ছেলেমেয়েদের কমপক্ষে ৪৫ থেকে ৬০ মিনিট এবং বয়স্কদের জন্য অন্যূন ৩০ মিনিট শারীরিক কসরত আবশ্যক। স্কুল খোলা থাকলে শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ পেয়ে থাকে ফলে তারা মানসিকভাবে সুস্থ ও ভালো থাকে।
দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকার কারণে ছেলেমেয়েরা বাসা-বাড়িতে সম্পূর্ণ গৃহবন্দির মতো জীবনযাপন করে। ফলে তাদের স্বাভাবিক আচার আচরণে ব্যাপক পরিবর্তনও পরিলক্ষিত হয়। প্রবাদ আছে ‘অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা’। করোনা ভাইরাসের কারণে ছাত্রছাত্রীরা অধিকাংশ সময়ে বাড়িতে অলস সময় কাটিয়ে থাকে, ফলে তাদের মস্তিষ্ক কিছুটা ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পর্যালোচনায় দেখা যায় বাসায় বসে অনিয়ন্ত্রিতভাবে তারা সোস্যাল মিডিয়াতে বেশি জড়িয়ে পড়ে। ফেসবুক, ইউটিউব, ইন্সট্রাগ্রাম, লিংডইনসহ নানাবিধ বিনোদন কর্মের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। এমনকি এর এক পর্যায়ে গভীরভাবে আসক্ত হয়ে পড়ে যা শিক্ষার্থীদের মেধা বিকৃতির মতো নানা ধরনের ক্ষতি সাধিত হয়।
এ ব্যাপারে চিকিৎসকদের পরামর্শ, শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে এ সময় অভিভাবকদেরকেই বেশি সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে সন্তানদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করা। তাদের সাথে খোলামেলা আলোচনা করা। সন্তানদের সাথে আলোচনা করে তাদেরকে দৈনন্দিন রুটিন ওয়ার্ক করা যেতে পারে বলেও অভিমত চিকিৎসকদের।
তারা বলেন, এ সময় সচেতন থেকে ঘরোয়া খেলাধুলার আয়োজন করার তাগিত দেন তারা। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থপেডিক্স বিভাগের ইনডোর মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোস্তফা মুহাম্মদ লুৎফুল আজিজ বলেন, করোনাকালীন এ জাতীয় সংকটে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ সম্মিলিতভাবে সচেতন থেকে সকল সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বিধি ও সরকার কর্তৃক প্রদত্ত যে কোনো নীতি অবলম্বন করে সরকারকে সহায়তা করা উচিৎ বলেন তিনি।
Leave a Reply