সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার ॥ ২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বর রাতে নগরীর ভাটিখানা এলাকায় মটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হন সদর উপজেলার রাঢ়ী মহল গ্রামের মাসুদ সরদারের ছেলে ও ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র মুনিব (১৭)। ওই দিন রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে শের-ই বাংলা হাসপাতালে ভর্তি করেন( রেজি নং- ৫৯৩৮৮৩১০)। দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হলে শেবাচিমে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ২৯ নভেম্বর মুনিমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে ৩০ নভেম্বর ঢাকার ইডেন মাল্টি কেয়ার নামে একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি হয় মুনিম। ওই হাসপাতাল থেকে ৫ ডিসেম্বর ছাড়পত্র নিয়ে যাওয়া হয় ইবনেসিনা হাসপাতালে। সেখানে বেশ কিছু দিন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়ার পর ১৮ ডিসেম্বর ছাড়পত্র দেয়া হয়।
মুনিম সুস্থ হয়ে উঠলে গত ২৪ ডিসেম্বর তার মা ফাতেমা আক্তার ঝুমুর বাদী হয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেণ। মামলায় একই এলাকার গোলাম মোস্তফার ছেলে মুসা খাঁন (৩০) ও রিয়াদ খাঁন (২৭) এবং ভাটিখানা এলাকার নাসির উদ্দীনের ছেলে আবিরকে(১৮) আসামী করা হয়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে কাউনিয়া থানায় নথিভুক্ত করার আদেশ দেন। গত ৫ জানুয়ারী থানায় মামলা নথিভুক্ত হয়। এর পরের দিন ৬ জানুয়ারী পুলিশ মুসা ও রিয়াদকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে প্রেরণ করে আসামীদের রিমান্ড আবেদন করেন। ওই মামলায় দুই আসামী বেশ কিছু দিন জেল খেটেছেন।
আসামী পক্ষের অভিযোগ বাদী ফাতেমা আক্তার ঝুমুরের সাথে দীর্ঘ দিন ধরে জমি বিরোধ রয়েছে। এর জের ধরেই তাদের নামে হত্যাচেষ্টা মামলা দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে। আসামী পক্ষ বলছে ‘বাদী মামলায় যে অভিযোগ এনেছে তার সাথে বাস্তবের মিল নেই। হাসপাতালে ভর্তির কোথাও ফিজিক্যাল এ্যাসাল্টের কথা নেই। সব জায়গায় আরটিএ (রোড ট্রাফিক এ্যাক্সিডেন্ট) উল্লেখ রয়েছে’।
বাদী মামলায় উল্লেখ করেন ‘ মুনিব ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র। নিজস্ব মটরসাইকেলে কলেজে যাতায়াত করতো। ওই মটরসাইকেলের প্রতি লোলুপ দৃষ্টি পড়ে মুসা, রিয়াদ ও আবিদের। ২৮ নভেম্বর মুনিব উত্তর আমানতগঞ্জ সেকান্দার আলী সিকদারের বাড়ীর মধ্যে রাত আনুমানিক আটটার সময় ব্যাডমিন্টন খেলছিলো। এসময় আবির অনুরোধ করে তাকে যেন মুনিব মটরসাইকেলে বাসায় পৌঁছে দেয়। মটরসাইকেল চালাচ্ছিলো আবির। মাঝে বসা ছিল মুনিম এবং পেছনে অপরিচিত এক ব্যক্তি। আবির ও মুনিম সহপাঠী। কিন্তু আবির বাসায় না গিয়ে মটরসাইকেলসহ গাউয়াসার এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে মুসা ও রিয়াদ উপস্থিত ছিল। তারা মুনিমকে খুন করার উদ্দেশ্যে মাথায় কোপ দিলে ডান পাশের চোখে গিয়ে লেগে কাটা রক্তাক্ত জখম হয়। এর পর রিয়াদ লোহার রড দিয়ে মুনিমকে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে পিঠে ফাটা ফুলা জখম করে। মাথার পেছনে আঘাত করায় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়’। কিন্তু মামলার বিবরনের সাথে হাসপাতালের চিকিৎসার কাগজপত্রের মিল নেই বলে দাবী আসামী পক্ষের।
মামলার ১নং আসামী মুসা খাঁন অভিযোগ করে বলেন, বাদী মামলায় যেসব কথা উল্লেখ করেছেন তার কোন ভিত্তি নেই। বাদীর সাথে আমাদের জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এই বিরোধের জের ধরেই আমাদের নামে মিথ্যে মামলা করে হয়রানী করছেন। মামলায় বলা হয়েছে মুনিমকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। অথচ মুনিমমে হাসপাতালের ভর্তির টিকিটে উল্লেখ আছে আরটিএ অর্থ্যাৎ সড়ক দুর্ঘটনা। কারণ ঘটনার দিন রাঢ়ী মহল থেকে নগরীতে আসার পথে গাউয়াসার নামক এলাকায় মটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয় মুনিম। যদি এখানে মারধরের কেস হতো তাহলে ভর্তির সময়তো টিকিতে পি/এ (ফিজিক্যাল এ্যাসাল্ট) উল্লেখ থাকতো। শুধু তাই নয় বরিশাল ছাড়াও ঢাকায় যে দুটি হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়েছে সেখানের চিকিৎসকরাও সড়ক দুর্ঘটনা জনিত আঘাতের কথা উল্লেখ করেছেন।
Leave a Reply