রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৪ পূর্বাহ্ন
মাজহারুল ইসলাম:
বরিশাল-ভোলার জনগণের প্রানের দাবি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা সত্ত্বেও দীর্ঘ ৬ বছরেও বরিশাল ভোলা সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা কাজ শুরু করা হয়নি। বরিশাল-ভোলা সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে ৪০ লক্ষাধিক মানুষ।
সরোজমিনে ঘুরে জানাযায়, বরিশাল-ভোলা জেলার দূরত্ব নৌপথে প্রায় ৪০ কিলোমিটার। কিন্তু মেহেন্দিগঞ্জ শ্রীপুর ইউনিয়নের কালাবদর নদী থেকে তেতুলিয়া নদী পর্যন্ত ৬কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা রয়েছে। এ রাস্তাটি পাঁকা সড়কে পরিনত করে কালাবদর-তেতুলিয়া নদীতে ব্রীজ নির্মাণ ও ছোট ৩টি স্লুইজ কালভার্ট করলেই বরিশালের সাথে ভোলার ১৬ কিলোমিটার দূরত্ব কমে যাবে। বর্তমানে নদীপথে লঞ্চ, ট্টলার, স্প্রিডবোট যাতায়াত একমাত্র উপায়। এ কারনে চরম দূর্ভোগে পতিত হচ্ছে এ রুটে চলাচল করা যাত্রী সাধারন।
সূত্রমতে আরও জানাযায়,বরিশাল-ভোলা আসা-যাওয়া করতে প্রায় ৫ ঘন্টা সময় ব্যয় হচ্ছে। বরিশাল-ভোলা সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলে দেড় ঘন্টার মধ্যে পৌছানো সম্ভব। বরিশাল-ভোলা উভয় জেলার জনগন জীর্বিকা নির্বাহের তাগিদে বিভিন্ন কর্মস্থলে যোগদানের লক্ষ্যে যাতায়াত করেন। অতিরিক্ত সময় ও টাকা ব্যয় হলেও কর্মস্থলে পৌছার জন্য সর্বদাই দিশেহারা হয়ে পড়েন। সঠিক সময়ে তবুও পৌছার সম্ভব হচ্ছে না। সরকারী, বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিরা সময় ম্যানেজ করেও সর্বদাই চাকরী হারানো আশাংকায় থাকেন। জীবনের ঝুকিপূর্ন নৌপথ পাড়ি দিয়ে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করেছে। বর্ষার মৌসুমে কালাবদর নদীতে উত্তাল ঢেউ পাড়ি জমিয়ে অফিস, আদালত, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন দপ্তরে যোগদান করতে সকল পেশার মানুষ চলাচল করছে। শীতের মৌসুমে কালাবদর নদী থেকে শুরু করে লাহারহাটের খালের ভিতর দিয়ে কীর্ত্তনখোলা নদী পর্যন্ত শুকিয়ে যায়। এসময় সকল ধরনের নৌযান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।
বরিশাল-ভোলায় কর্মরত মানুষ সময় বাঁচাতে লাহারহাট সড়ক ব্যবহার করছেন। অবৈধ স্প্রিডবোট দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। অফিসের সময় ম্যানেজ করার লক্ষ্যে জীবনের মায়া ত্যাগ করে রোড পারমিট বিহীন গাড়ি, মটর সাইকেলই তখন তাদের একমাত্র ভরসা। অফিসে নিদিষ্ট সময় পৌছার চেষ্ঠায় সবাই ব্যস্ত থাকে। এ কারনেই মটর সাইকেল চালক ও গাড়ি চালক দ্রুতগতিতে চালিয়ে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে দূর্ঘটনায় পতিত হয়। প্রতিদিন সড়ক দূর্ঘটনায় আহত ও নিহত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১১বঙ্গবন্ধু জাতীয় উদ্যান (বেলসপার্ক) ময়দানে ঘোষনা করেন বরিশাল-ভোলা সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তেতুলিয়া-কালাবদর নদীতে ব্রীজ করা হবে। ভোলার গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করে। বরিশাল-ভোলা অর্থনীতি অঞ্চল গঠনপূর্বক সার কারখানা, গার্মেন্টস, শিল্প, কল-কারখানা, বানিজ্য নগরীতে পরিনত করা হবে।ভোলার বিদ্যূৎ ও গ্যাস বরিশাল এনে প্রতিটি ঘরে ঘরে সংযোগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযারী বরিশাল বিভাগ ব্যাপক উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহন করছে আ.লীগ সরকার। বরিশাল বিভাগ উন্নয়নের লক্ষ্যে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার(অতিরিক্ত সচিব)কে আহবায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়েছে।ইতিমধ্যে কমিটির সুপারিশ মতে বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় ব্যাপক উন্নয়নের মহা পরিকল্পনায় বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ সময় সাপেক্ষে সম্পন্ন হবে। ঢাকা-বরিশাল থেকে কুয়াকাটা ফোরলেন মহাসড়ক ও রেললাইন যোগাযোগ ব্যবস্থা, বরিশাল বাবুগঞ্জে রাডার ষ্টেশন, আইসিটি পার্ক, সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীর ক্যাম্প, পায়রা সমুদ্র বন্দর,লেবুখালী, আড়িয়াল খাঁ, ধানসিঁড়ি নদীতে ব্রীজ নির্মাণ করা,সাব মেরিন ক্যাবল ষ্টেশন, সতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়, ডেন্টাল মেডিকেল কলেজ, ভোলায় ১২শ মেওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন কেন্দ্র, ইঞ্জিনিয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেহেন্দিগঞ্জে দেশরত্ন শেখ হাসিনা বিশ্ব বিদ্যালয়, বরিশাল মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঝালকাঠিতে জাহাজ শিল্প-বাণিজ্য নির্মাণ করা, বরিশাল- ভোলা অর্থনীতি অঞ্চল, শিল্প বাণিজ্য ও ইপিজেড,কল-কারখানা নির্মাণ, বরিশাল বিভাগের বৃহত্তম খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খাদ্য গুদাম নির্মাণ করা, নৌ-বিমান ঘাঁটি,বরিশাল বিভাগের প্রত্যাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে ইত্যাদি প্রকল্প গ্রহন করছে সরকার সুত্রটি নিশ্চত করেছে।
সুত্রটি আরও জানায়, বরিশাল-ভোলা জেলার সড়ক যোগাযোগের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। গত ২০ অক্টোম্ভর ২০১৬ বরিশাল-ভোলার সড়ক যোগাযোগের লক্ষ্যে সেতু ও যোগাযোগ মন্ত্রনালয় তেতুলিয়া নদীর ৫শ মিটার ব্রীজের ফিজবলটি টেন্ডার দেয়া হয়েছে।প্রায় ৭হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল-ভোলা সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে কালাবদর-তেতুলিয়া নদীতে ব্রীজ নির্মাণ নদীর ভাঙনে রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বরিশাল-ভোলা সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা হলে ২০ লক্ষাধিক সাধারন জনগনের কর্মস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।এরুটে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা হলে ৪০ লক্ষাধিক জনগনের দূর্ভোগ লাঘব হবে। বরিশাল- ভোলার জনগন প্রধানমন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের সু-দৃষ্টি কামনা করছে।
এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেন, চলতি অর্থবছরের বরিশাল-ভোলা সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা লক্ষ্যে কালাবদর-তেতুলিয়া নদীতে ব্রীজ নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।
সুত্র: দৈনিক বাংলাদেশ বানী ৫ জানুয়ারি ২০১৭ প্রকাশিত
Leave a Reply