মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১১ পূর্বাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥ ইউক্রেনে মার্কিন ও ব্রিটিশ ক্ষেপণাস্ত্রের হামলার জবাবে রাশিয়া প্রথমবারের মতো আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) নিক্ষেপ করেছে। এই হামলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তেজনার নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) মস্কো এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে, যা হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এবং পারমাণবিক হামলার জন্য ডিজাইন করা।
কিয়েভের দুঃসাহস
ইউক্রেন সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটিশদের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার গভীর অঞ্চলে হামলা চালিয়েছে। এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া দ্রুত প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেয়। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যেসব দেশ ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করছে, তাদের ওপর আঘাত হানতে রাশিয়া বাধ্য হবে।
পুতিন বলেন, “কুরস্ক ও ব্রায়ানস্ক সীমান্তবর্তী অঞ্চলে মার্কিন ও ব্রিটিশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আগে পশ্চিমারা স্পষ্ট অনুমোদন দিয়েছে। এটি উসকানির চরম উদাহরণ। পশ্চিমাদের এই নীতি চলতে থাকলে তার পরিণতি ভয়াবহ হবে।”
যুদ্ধের সরাসরি পর্যায়ে যাওয়ার আশঙ্কা
রাশিয়ার হায়ার স্কুল অব ইকোনমিকসের বিশেষজ্ঞ দিমিত্রি সাসলভ মনে করেন, পুতিনের বক্তব্য পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি কঠোর বার্তা। রাশিয়া যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত বলে উল্লেখ করেন তিনি। সুসলভ আরও বলেন, “পশ্চিমারা প্রক্সি যুদ্ধ থেকে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি নিচ্ছে।”
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈজ্ঞানিক কাজের ভাইস-রেক্টর ওলেগ কারপোভিচ জানান, পুতিনের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, পশ্চিমাদের কর্মকাণ্ড বিশ্বকে পারমাণবিক সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
পশ্চিমাদের সতর্কবার্তা
রাশিয়ার আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ঘটনা পশ্চিমাদের জন্য গুরুতর বার্তা বহন করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ ন্যাটো সদস্য দেশগুলোকে তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করবে।
অস্ট্রিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কারিন নাইসল বলেন, “পশ্চিমারা এখনো রাশিয়ার হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র আটকানোর প্রযুক্তি অর্জন করতে পারেনি। পুতিনের এই পদক্ষেপ স্পষ্ট করে দিয়েছে, তারা ন্যাটোর উসকানির বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত।”
ব্রিটিশ ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্ট বলেছে, আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার পশ্চিমাদের ইউক্রেনে সরাসরি জড়িত হওয়া থেকে বিরত করার রাশিয়ার বড় কৌশল।
ইউক্রেন সংঘাতে পারমাণবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ এখন পারমাণবিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার দিকে ধাবিত হচ্ছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, পোল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ঘাঁটি পারমাণবিক ঝুঁকি বাড়িয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, “এই ঘাঁটি এখন রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।”
ফরাসি কূটনীতিক জিন ডি গ্লিনিয়াস্টি বলেন, “যদিও বর্তমানে ইউক্রেন সংঘাত পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা কম, তবে পশ্চিমাদের নীতি এই ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। রাশিয়ার আধিপত্য যুদ্ধক্ষেত্রে প্রমাণিত হচ্ছে।”
রাশিয়ার শক্তির প্রদর্শন
রুশ প্রতিরক্ষা বিষয়ক কমিটির প্রধান আন্দ্রে কার্তাপোলভ বলেন, “পশ্চিমাদের উসকানির পর রাশিয়ার প্রতিক্রিয়ায় তাদের মধ্যে ভয় সৃষ্টি হয়েছে। আইসিবিএম ছুড়ে মস্কো দেখিয়ে দিয়েছে, ন্যাটোর যে কোনো সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানতে সক্ষম তারা।”
সম্ভাব্য পরিণতি
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত এবং উত্তেজনাপূর্ণ হতে পারে। পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহ যুদ্ধকে আরও তীব্র করছে। ফলে বিশ্বব্যাপী এই সংঘাতের প্রভাব আরও গভীর হবে।
Leave a Reply