রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২১ অপরাহ্ন
গলাচিপা প্রতিনিধি॥ আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পর্যায়ের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। মাঠে শুধু আওয়ামী লীগ থাকার পরেও সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীর নামের তালিকা ঘোষণা করতে পারেনি দুটি ইউনিয়ন।
উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রথম ধাপে ৪টি ইউনিয়নের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায় দলীয় কাউন্সিলে ৬টির নামের তালিকা ঘোষণা করলেও বিপত্তি ঘটে দুটি ইউনিয়ন নিয়ে। গত বছর গলাচিপা সদর ইউনিয়ন আওয়াম লীগের সভাপতি নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করের বিপুল ভোটে পরাজরায় বরণ করেছেন। তাই তাকে বাদ দিয়ে কাউন্সিলস্থলে অন্য যে কাউকে প্রার্থী করা নিয়ে হৈ চৈ শুরু হয়। অপরদিকে চরকাজল ইউনিয়নের সাংগঠনিক দুটি কমিটি থাকায় প্রত্যেকেই নিজেদের এলাকায় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের দাবিতে অনড় থাকায় এসভাও পণ্ড হয়ে যান
আজ শনিবার সন্ধ্যায় দুই ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের নিয়ে উপজেলা কার্যালয়ে জরুরি সভার আহ্বান করা হয়েছে বলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক সন্তোষ কুমার দে নিশ্চিত করেন।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে গলাচিপা উপজেলার আটটি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১৭ অক্টোবর জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। ২০ অক্টোবর প্রার্থীতা বাছাই ও ২৬ অক্টোবর প্রার্থীতা প্রত্যাহারের দিন ঘোষণা করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে গলাচিপার কলাগাছিয়া, বকুলবাড়িয়া, গজালিয়া, ডাকুয়া, গলাচিপা সদও, পানপট্টি, চরকাজল ও চরবিশ্বাস ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ প্রেক্ষিতে গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ার জন্য ইউনিয়নগুলোতে ১ ও ২ অক্টোবর বিশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে কলাগাছিয়া, বকুলবাড়িয়া, গজালিয়া, ডাকুয়া, পানপট্টি ও চরবিশ্বাস ইউনিয়নে কাউন্সিলরদের ভোটে তিনজন করে সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থীর নামের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। অপরদিকে স্থানীয় দলীয় নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে চরকাজল ও গলাচিপা সদর ইউনিয়নে প্রার্থী বাছাই করা সম্ভব হয়নি।
গলাচিপা সদর ইউনিয়নের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী মো. মশিউর রহমান মিশন তালুকদার বলেন, গত নির্বাচনে ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহঙ্গীর হোসেন টুটু দলীয় প্রতীক নৌকা মাকা নিয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। এ বছর তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকায় প্রভাব খাটিয়ে আবার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় কাউন্সিলরা ভোটদান থেকে বিরত থেকে সমঝোতার জন্য বিক্ষোভ করেন।
অপরদিকে চরকাজল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মুজিবুর রহমান খান বলেন, চরকাজল ইউয়িনে আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম চরকাজল এলাকাতেই হয়েছে। দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য উপজেলা থেকে তেমন ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে শনিবার সকালে চরকাজল সাংগঠনিক ইউনিয়ন এলাকায় কাউন্সিলের ভ্যেনু করায় চরকাজল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কোন নেতা কর্মী চরশিবা যেতে রাজি হয়নি। তাই আমরা চরকাজল ও সাংগঠনিক ইউনিয়ন চরশিবার নেতা কর্মীরা সেখানে থাকায় প্রার্থী বাছাইয়ের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়নি।
চরশিবা সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি খোর্শেদ আলমের কাছে এ বিষয় জানার জন্য মোবাইল করলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানান।
এ বিষয় চরকাজল ইউনিয়নে প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্বে থাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হাজী মজিবর রহমান বলেন, চরকাজল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও চরকাজলের চরশিবা সাংগঠনিক ইউনিয়ন কমিটির কাউন্সিলের ভ্যেনু নিয়ে বিরোধ থাকায় আজকের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়নি। দুই পক্ষ দুই এলাকায় অবস্থান নিয়ে নিজেদের দাবির পক্ষে স্বোচ্চার রয়েছে। তাই শনিবার বিকেলে উপজেলা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগর সভাপতি অধ্যাপক সন্তোষ কুমার দে বলেন, গলাচিপা সদর ইউনিয়নের কাউন্সিলের জন্য শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর হোসেন, শ্রমিক বিষয়ক সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান, উপজেলা কমিটির সহসভাপতি মো. রেজাউল করিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ সাহিনসহ আমি উপস্থিত ছিলাম। কাউন্সিল স্থলে কাউন্সিলরা ভোট না দিয়ে সমঝোতার জন্য বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ তীব্র হলে জেলা কমিটির সভাপতির নির্দেশ ক্রমে কাউন্সিল স্থগিত করা হয়।
অপরদিকে চরকাজল ইউনিয়ন কমিটি ও চরশিবা সাংগঠনিক কমিটি রয়েছে। এই দুই কমিটির নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে সেখানেরও কাউন্সিল স্থগিত করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, দলীয় এ দ্বিধা বিভক্তি নির্বাচন ও দলীয় কার্যক্রমে প্রভাব বিস্তার করার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি এ বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য।
Leave a Reply