রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৫ অপরাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ বরগুনার তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া গ্রামে পায়রা নদীর তীরে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ১৪৭টি পরিবারের জমি অধিগ্রহণ করে আইসোটেক গ্রুপ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। আড়াই বছর আগে স্থানীয় প্রভাবশালীদের আশ্বাসে ওই প্রতিষ্ঠানকে জমি দিলেও এখন পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পায়নি ২৩টি পরিবার। বাকি ১২৪টি পরিবারকে সরকারি বিধি অমান্য করে নামমাত্র টাকা দেয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে চীনের ‘পাওয়ার চায়না রিসোর্স লিমিটেড’র সঙ্গে যৌথভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে আইসোটেক গ্রুপ। এ গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইসোটেক ইলেকট্রিফিকেশন কোম্পানির সঙ্গে ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল চুক্তি করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। পরে যৌথভাবে কাজ শুরু করে পাওয়ার চায়না রিসোর্স লিমিটেড, আইসোটেক ইলেকট্রিফিকেশন কোম্পানি লিমিটেড এবং বরিশাল ইলেট্রিক পাওয়ার কোম্পানি। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয় নিশানবাড়িয়ার বড় অঙ্কুজান পাড়ায় পায়রা নদীর তীরবর্তী বেড়িবাঁধের বাইরে। ১৭৪ একর জমি অধিগ্রহণ করে শুরু হয় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন ওই জমি ১৯৪০ সালে স্থানীয়দের কার্ডের মাধ্যমে বন্দোবস্ত দিয়েছিল সরকার। পরবর্তীতে তাদের নামে মালিকানা রেকর্ড করে দেয়া হয়। ভূমিহীন দরিদ্র ১৪৭টি পরিবারের জমির ক্ষতিপূরণ দেয়ার শর্তে অধিগ্রহণ করে আইসোটেক গ্রুপ। এর মধ্যে ১২৪টি পরিবারকে সরকারি বিধিমালার তোয়াক্কা না করে ‘যাকে যেমন সম্ভব’ ক্ষতিপূরণদেয়া হয়। কিন্ত বাকি ২৩ একর জমির মালিক ২৩টি পরিবার আজও ক্ষতিপূরণ পায়নি। এ বিষয়ে বরগুনা সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন ভুক্তভোগীরা। ওই মামলায় আদালত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ স্থগিতের আদেশ দিলেও সে আদেশ অমান্য করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে আইসোটেক গ্রুপ।
ভুক্তভোগী মনির মাঝি বলেন, আমার কোনো জমি নেই। সরকারের বরাদ্দ দেয়া ওই জমির রেকর্ডসূত্রে মালিক আমি। আমার জমি ওই কোম্পানি জোর করে নিয়েছে। আড়াই বছর পার হলেও জমির ক্ষতিপূরণ পাইনি।
আরেক ভুক্তভোগী মাতেন মং বলেন, ক্ষতিপূরণ না পেয়ে আমরা আগের জমিতেই বসবাস করছি। টাকা না পেলে এখান থেকে কোথাও যাবো না।
তালতলী উপজেলা ভূমিহীন সমবায় সমিতির সভাপতি গাজী মো. চান মিয়া বলেন, আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই ভূমিহীনদের নামে বরাদ্দকৃত জমি দখলে নেয় আইসোটেক। আমরা বাধা দিতে গেলে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা করে প্রতিষ্ঠানটি।
নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নামে একটি চক্র জোর খাটিয়ে ওই পরিবারগুলোর শেষ সম্বল ছিনিয়ে নিয়েছে। বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন হাতছাড়া হওয়ায় এখন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে।
তালতলী উপজেলার চেয়ারম্যান রেজবী উল কবীর জোমাদ্দার বলেন, আইসোটেক গ্রুপ জমি ক্রয় ও অর্থ পরিশোধের দায়িত্বে ছিল। তারা পাওয়ার চায়না রিসোর্স লিমিটেডকে জমি বুঝিয়ে দেয়ার পর তালতলী থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়। টাকা পরিশোধ না করে অফিস গুটিয়ে নেয়ায় ভুক্তভোগীরা টাকা চাওয়ার মতো কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না।
Leave a Reply