সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৪ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে এবং চিহ্নিত দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা।
অপরদিকে চরমোনাই দরবার শরীফের ওয়াজ মাহফিলকে কেন্দ্র করে সোমবার থেকে ৩ দিন ধর্মঘট তুলে নিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। তবে তিন দিন পর নতুন কর্মসূচি পালন করবেন বলে দাবি করেছেন শ্রমিক নেতারা।
এদিকে শিক্ষার্থীদের পক্ষ হয়ে কথা বলার কারণে বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমান শাহিনের বিরুদ্ধে ঝাড়ুমিছিল করেছেন শ্রমিকরা।
জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এবং চিহ্নিত দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার বিকাল ৫টায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন তারা। মিছিলটি বরিশাল-ভোলা মহাসড়কের মোড় ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচে এসে শেষ হয়।
মিছিলপূর্ব বক্তৃতাকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি অমিত হাসান রক্তিম বলেন, হামলায় জড়িতদের নাম মামলায় অন্তর্ভুক্তি এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।
আরেক শিক্ষার্থী আলিশা মুনতাজ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে হামলাকারীদের নাম দেয়ার পরেও কারও নাম মামলায় উল্লেখ করা হয়নি। বারবার এ নিয়ে আলাপ আলোচনা হলেও বিষয়টি আমলে নেয়া হচ্ছে না। বরং নিরপরাধ দুই পরিবহন শ্রমিককে গ্রেফতার দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।
অপরদিকে শিক্ষার্থীরা এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে দাবি করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণেরও দাবি জানানো হয়েছে।
এদিকে চরমোনাই দরবার শরীফের ওয়াজ মাহফিল উপলক্ষে সোমবার থেকে ৩ দিন বাস ধর্মঘট ও সড়ক অবরোধের সব কর্মসূচি স্থগিত করেছে বরিশালের রূপাতলীর বাস মালিক ও শ্রমিকরা।
বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন জানান, বরিশালের চরমোনাইয়ের মাহফিলে অসংখ্য লোক দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসেন। তাদের সুবিধার্থে তিন দিন বাস মালিক ও শ্রমিকরা সব কর্মসূচি স্থগিত করেছেন।
এদিকে রূপাতলী বাস শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাহী সভাপতি রফিকুল ইসলাম মানিক জানান, রোববার রাত ২টায় বাস মালিক ও শ্রমিকরা বৈঠক করে যৌথভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিন দিন পরে পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজন হলে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
অপরদিকে ববি শিক্ষার্থী ও শ্রমিকদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের ঘটনায় গণমাধ্যমে সাক্ষাতকার দেওয়ায় এক নেতার বিরুদ্ধে ঝাড়ুমিছিল করেছেন বাস শ্রমিকরা। সোমবার বেলা ১১টায় বরিশাল-পটুয়াখালী ও ঝালকাঠি সড়কে এ বিক্ষোভ ও ঝাড়ুমিছিল বের হয়।
ববি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে দুই শ্রমিকদের গ্রেফতারের জেরে বরিশালে শিক্ষার্থী ও শ্রমিকদের অব্যাহত কর্মসূচি
চলছে।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমান শাহিন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাতকার দেন। সেই সাক্ষাতকারে তিনি একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাওসার হোসেন শিপনকে জড়িয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ তোলা হয়। এর প্রতিবাদে বাসচালক ও শ্রমিকরা সোমবার বরিশাল-পটুয়াখালী ও ঝালকাঠি সড়কে বিক্ষোভ ও ঝাড়ুমিছিল বের করে। এ সময় বিক্ষুব্ধরা আজিজুর রহমান শাহিনের বিচার দাবি করেন। বিচার না হওয়া পর্যন্ত রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে তার মালিকানাধীন কোনো গাড়ি চালনা করবেন না বলে হুমকি দেন চালক ও শ্রমিকরা।
রূপাতলী বাস শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাহী সভাপতি রফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, ববি শিক্ষার্থীদের সাথে সংঘাত হয়েছে বিআরটিসি বাস শ্রমিকদের। আমাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কোনো সংঘাত হয়নি। অথচ শিক্ষার্থীদের ওপর গভীর রাতে হওয়া হামলায় কাওসার হোসেন শিপনকে জড়িয়ে বানোয়াট সাক্ষাতকার দিয়ে তাকে দোষী সাজানোর চেষ্টা চালানো হয়েছে। তাই শাহিনের বিচার না হওয়া পর্যন্ত রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে তার মালিকানাধীন কোনো বাস চালনা করবেন না চালক ও শ্রমিকরা।
আজিজুর রহমান শাহিন বলেন, সেদিন সাক্ষাতকারে বলেছি যে, আমি ৩০ বছর রূপাতলী বাস-মালিক সমিতির দায়িত্ব পালন করেছি। তৎকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কোনো বিরোধ হলে তা দ্রুত সমাধানের জন্য এগিয়েছি। প্রয়োজনে প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়েছি। একথা বলায় কেউ যদি আমাকে দোষী মনে করেন তবে আমি দোষ স্বীকার করতে প্রস্তুত।
প্রসঙ্গত, ১৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিআরটিসি বাস কন্ডাক্টরের বাকবিতণ্ডা হয়। এর জেরে এক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত ও অপর একজন ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করে। ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুই ঘণ্টা রাস্তা অবরোধ শেষে আবাসস্থলে ফিরে যান।
১৭ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শিক্ষার্থীদের মেসে গিয়ে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী নিয়ে পরিবহন শ্রমিকরা শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ১১ শিক্ষার্থীকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলার পরপরই রাত আড়াইটার দিকে সড়কে কাঠ পুড়িয়ে অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
এরপর থেকে কয়েকবার আন্দোলন স্থগিত করা হলেও রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত ছিল। এদিকে শনিবার থেকে সহকর্মীদের মুক্তির দাবিতে ২১ জেলায় বাস ধর্মঘট ও বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা।
Leave a Reply