শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৩৭ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা বর্জ্য যেখানে-সেখানে ফেলে দেয়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন হাজারো মানুষ। হাসপাতালের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ফেলে রাখায় ঝুঁকির মুখে রয়েছেন হাসপাতালে আসা দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলার মানুষ। চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহৃত মাস্ক, গ্লাভস আর পিপিই উন্মুক্ত স্থানে ফেলে দেয়ার কারণে বাড়ছে সংক্রমণের শঙ্কা।
পুরোনো ইনসেনেটর নিয়ে বিপাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ব্যবহার না করতে করতে বিকল সেটিও। কাগজে কলমে এক হাজার শয্যা থাকলেও বাস্তবে ইনডোর-আউটডোর মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ চিকিৎসা পায় এই হাসপাতালে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন ১৫০টি করোনা শয্যা। বিপুল সংখ্যক এই মানুষের চিকিৎসা প্রশ্নে প্রতিদিন উৎপন্ন হয় কয়েক টন বর্জ্য।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, করোনা ওয়ার্ডের বর্জ্য তাৎক্ষণিকভাবে পুড়িয়ে ফেলি। এছাড়া হাসপাতালের পেছনে গর্ত করে ফেলা হয় অন্যান্য চিকিৎসা বর্জ্য। সরেজমিনে গিয়ে গর্তে বর্জ্য দেখা গেলেও ব্লিচিং পাউডার কিংবা সোডা দেয়ার কোনো প্রমাণ চোখে পড়েনি। সেখানে উন্মুক্তভাবে মাস্ক, গ্লাভস, পিপিই পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
করোনা ইউনিট লাগোয়া ভবনটির দক্ষিণপাশে মূল সড়কের পাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হচ্ছে এসব সুরক্ষা সামগ্রী। যার মধ্যে পথ শিশুরা ফেলে দেয়া প্লাস্টিকের বোতলসহ অন্যান্য জিনিসপত্র সেখান থেকে সংগ্রহ করে ভাঙারি দোকানে বিক্রি করছে।
২০০৩ সালে সদর হাসপাতালের জন্য বরাদ্ধ হয় একটি ইনসেনেটর। নগরীর একেবারে কেন্দ্রে হওয়ায় সেখানে সেটি বসানো প্রশ্নে আপত্তি তোলে পরিবেশ অধিদফতর। পরে ২০০৯ সালে তা বসানো হয় শেবাচিম হাসপাতালে।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, ঘণ্টায় ২৫ লিটার কেরোসিন লাগতো সেটি চালাতে। বর্জ্য পোড়ানো যেত ২০ থেকে ৩০ কেজি। যেখানে কেবল হাপাতালেরই বর্জ্য হয় দৈনিক কয়েক টন সেখানে এই মেশিন কোনো কাজে আসেনি। কেরোসিনের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে সেটি বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় তৎকালীন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বন্ধ থাকতে থাকতে এক সময় নষ্ট হয়ে যায় ইনসেনেটর।
ডা. বাকির হোসেন বলেন, অনেক বছর ধরে হাসপাতালের জন্য ইনসেনেটর এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার যন্ত্র চেয়ে আসছি। আজ পর্যন্ত তা পাওয়া যায়নি। বরিশালের পরিবেশ ফেলো মুরাদ আহম্মেদ বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলতে তুলে এনে ফেলা রাখা নয়। নিয়মানুযায়ী সব পুড়িয়ে ফেলতে হয়। ফেলে দেয়ার কারণে নগরীর কাউনিয়ায় ডাম্পিং জোনের আশেপাশের বাসিন্দারা এখন বসবাস করছে মৃত্যুর সঙ্গে।
বরিশালে ইটিপি কিংবা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অন্য কোনো উপকরণও নেই। অথচ নিয়ম মেনে সঠিক পদ্ধতিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা গেলে এসব হতো না।হাসপাতালের দুইজন চিকিৎসক অভিযোগ করে বলেন, গত আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে হাসপাতালের বর্জ্য নিচ্ছে না সিটি কর্পোরেশন। ফলে গর্ত করে ফেলতে হচ্ছে বর্জ্য।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, নিয়মানুযায়ী হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকের নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকবে। মেডিকেল বর্জ্য ঝুঁকিপূর্ণ আবর্জনা হওয়ায় সিটি কর্পোরেশনের নেয়ার কোনো নিয়ম নেই।
Leave a Reply