শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন
মাসুদ রানা॥ মঠবাড়িয়ায় যৌতুক লোভী ও পরকীয়ায় আসক্ত পাষন্ড স্বামী রিপনের সাথে ২ সন্তানের জননী রহিমার দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটেছে। মুসলিম বিধান মতে গত ১৪ মার্চ ২০০৬ সালে পৌর সভার ৭নং ওয়ার্ডের আবুল হাশেম হাওলাদারের পুত্র রিপনের সাথে একই এলাকার মন্টু হাওলাদারের কন্যা রহিমা (৩০) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিবাহের কিছু দিন অতিবাহিত হতে না হতেই রিপনের বিলাস-বহুল জীবন চালাতে স্ত্রীর কাছে দাবী করছে বিভিন্ন কিস্তিতে মোটা অংকের টাকা। রহিমার সরলমনা বাবা মেয়ের সুখের কথা ভেবে ধারদেনা করে অনেকবার জামাতা রিপনের চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করে আসছিলেন। তার একমাত্র ছেলের ভবিষ্যতের চিন্তা না করে মন্টু মিয়া আওয়ামীলীগের এক নেতার দয়ায় রিপন কে উপজেলা চেয়্যারম্যানের ড্রাইভিং চাকুরীর ব্যবস্থা করে দেন।
এরপর থেকে তার বেপরোয়া জীবনের সুচনা হয়। শুরু হয় ২/৩টি মোবাইল ফোন ব্যবহার সহ স্ত্রী সন্তানদের প্রতি খামখেয়ালী জীবন যাপন। কর্মক্ষেত্র থেকে বাসায় ফিরে ঠুনকো জিনিস নিয়ে প্রায়ই স্ত্রীকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ ও মারপিট করত। অপরদিকে সৌদি প্রবাসী ওবায়দুল হকের স্ত্রী ও এক সন্তানের জননী পারভীন আক্তারের সাথে অবৈধ পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে রিপন প্রলোভন দেখিয়ে পারভীনকে নিয়ে ০৩/১২/১৭ইং তারিখ পালিয়ে যায়। আত্মীয় স্বজনের বাসায় খোজাখুজির পর ২৭/১২/১৭ইং তারিখ মিরপুর মডেল থানায় ওবায়দুল হক এই মর্মে ১টি এজাহার করেন রিপন তার স্ত্রীকে জোর পূর্বক অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে রেখেছে।
সে মামলার অনুসন্ধানে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ রিপন ও পারভীনকে পাথরঘাটা ১টি বাড়ী থেকে আটক করে। জেল থেকে বের হয়ে রিপন মঠবাড়িয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টে পারভীনের স্বামী ও পারভীনের মামাতো ভাই রাসেলকে আসামী করে ১টি মামলা দায়ের করে। যে মামলায় বলা হয়েছে তারা পারভীনকে ভুল বুঝিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিয়ে যায়। রিপন ২য় আরেকটি মামলা পিরোজপুর জজ কোর্টে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে পারভীনের স্বামী ওবাইদুল হককে প্রধান আসামী করে একজন বয়স্ক অচল প্রতিবন্ধী সহ ৩জন কে আসামী করে। পিরোজপুরের মামলাটি বিজ্ঞ বিচারিক হাকিম মঠবাড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামানকে সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন কপি আদালতে দাখিল করার নির্দেশ করেন। তিনি বাদী বিবাদীর সাক্ষ্য প্রমান বিশ্লেষণ করে ১৫/০৭/১৮ ইং তারিখ আদালতে ১টি প্রতিবেদন দাখিল করেন এই মর্মে যে, পারভীন অপহরণ হয়নি এবং এ বিষয়ে কোন পুলিশি প্রতিবেদনও পাওয়া যায়নি।
পারভীন ওই দিন কৃষিকর্মতার অফিসে এসে কার পক্ষে বিপক্ষে স্বাক্ষ্য দেয়নি। ধারণা করা যাচ্ছে সে তার বাবা মায়ের হেফাজতে রয়েছে বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। যাতে রিপনের দায়েরকৃত মামলাটি মিথ্যা বলে প্রমানিত হয়েছে। মামলা ২টিতে পৃথক পৃথক ভাবে অপহরণের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে। যা কোনটির সাথে কোনটির সত্যতা নেই। রিপনের মূলত উদ্দেশ্য হচ্ছে মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রতিপক্ষকে হয়রানী করে সে নিজেকে বাঁচাতে চাইছে। রহিমার বাবা মন্টু মিয়া বলেন, মেয়ে ও নাতিদের সুখের কথা ভেবে শেষবারের মত আমার অভিভাবক আওয়ামীলীগ নেতা রিয়াজ ও আরিফ ভাইয়ের কথায় পিছনের সব কিছু ভূলে গিয়ে মেয়েকে আবার রিপনের ঘরে তুলে দিতে চেয়েছিলাম বরং সে একটুও সংশোধন হয়নি এবং আমার মেয়ে নিয়ে সংসার করার মন মানসিকতাও তার নেই।
বরং সে আমার মেয়েকে মিথ্যে অজুহাতে মধ্যযোগীয় কায়দায় নির্যাতন চালাতো। যে কারণে আমি তার বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিয়েছি। রহিমা জানায় কোন স্ত্রী চায়না সামান্য কষ্ট আর ভুলের জন্য তার সংসার ভেংগে যাক। অনেক ধৈর্য্য ধারণ করেছি। তাকে ভাল হওয়ারও সময় দিয়েছি। অথচ তার নির্যাতন থেকে সে একটুও ফিরে আসেনি। সে আমাকে প্রতিনিয়ত শারীরিক নির্যাতন চালাত। যা সইতে না পেরে দিশেহারা হয়ে আজ আমি থানায় মামলা করতে বাধ্য হয়েছি। ওই এলাকার পৌর কান্সিলর মতিউর রহমান মিলন বলেন, তাদের দাম্পত্য কলহ নিয়ে ৫/৭ বার বৈঠকে সবার সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয় রিপন তার শ্বশুর বাড়ি হতে স্ত্রী রহিমাকে নিয়ে আসবে।
সে বলে কোটি টাকার বিনিময়ে হলেও ওই স্ত্রীকে আমি আর আমার ঘরে তুলব না। একথার পর আমরা সালিস বৈঠক থেকে সরে পরি। সাবেক কমিশনার মোতালেব হোসেন মধু বলেন, বিষয়টি একাধিকবার ফয়সালা হবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু নির্দোষ মেয়েটিকে রিপন তার ঘরে তুলতে কোন মতেই রাজী নয়। অভিযুক্ত রিপনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি তাকে তালাক দিয়েছি। তালাকনামা পেয়ে সে আমার বিরুদ্বে থানায় নারী নির্যাতন মামলা করে।
Leave a Reply