রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৬ অপরাহ্ন
শাকিব বিপ্লব:নারী কেলেঙ্কারীর পর এবার ভূমিদস্যু হিসেবে খবরের শিরোনাম হলেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোশারেফ আলী খান বাদশা। নগরীর শ্যামবাবু লেনে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের একটি বসত ভিটার মালিকানা হতে টাকা না দিয়ে জমির জমির মালিককে দৌরের উপর রেখে এলাকা ছাড়ার কৌশল নিয়েছে। কিন্তু পেরে উঠতে না পারায় অবশেষে বয়োবৃদ্ধ আব্দুর রব হাওলাদারকে গভীর রাতে একাকি পেয়ে অনেকটা অপহরণের ন্যায় একটি অভিজাত ভবনে অবরুদ্ধ করে রেখে রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করে ডাকাত বলে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছিলো।
জখম গুরুতর হওয়ায় পুলিশ তা গ্রহন করতে না চাইলে বাদশা তার দলবল নিয়ে ওই বৃদ্ধকে শেবাচিমে লুকিয়ে রাখে। ঘটনার একদিন পর তাকে উদ্ধার করা গেলেও থানায় যেয়ে দেখা যায় উল্টো আহত ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি মামলা সাজানো হয়েছে। আহত ভূমি মালিক পাল্টা মামলা দিতে গেলে পুলিশ তা গ্রহনের প্রস্তুতি নিলে এখন হুঁমকি-ধামকির মুখে তার পরিবারকে অনেকটা অবরুদ্ধ করে রেখেছে।
এই ঘটনা এমনভাবে শুরু থেকে শেষ করা হয়েছে যা বিষয়টি সম্পর্কে এলাকাবাসী কিছুই জানে না। গতকাল আব্দুল রব হাওলাদারের স্ত্রী থানা থেকে শেবাচিমে দৌড়া-দৌড়িতে এ খবর চলে আসে মিডিয়াংঙ্গনের দরজায়। এরপর খোঁজ-খবর নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে সমূলেই সত্য। কিন্তু পুলিশ নিরপেক্ষ ভূমিকা নেয়ায় ঘটনা আড়াল করতে বাদশা কমিশনার বিষয়টি ডাকাতিতে রুপ দিতে জোরতর চেষ্টায় দৌড় ঝাপের কথা শোনা গেছে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, ২০১২ সালে শ্যামবাবুর লেনে লন্ডন প্রবাসী ডা. সুরাইয়া বেগমের তিন শতক জমি ৩৩ লাখ টাকায় দলীল মূলে ক্রয় করেণ আব্দুল রব হাওলাদার।
১৬ নং ওয়ার্ডের একই এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকা সাবেক এই ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা এলপিআরে আসলে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকায় সেখানে ঘর উত্তোলন করতে গেলে প্রথম বাঁধা দেয়। তৎসময় বাদশার প্রথম পক্ষের স্ত্রী রুবিনা আখতার ওয়ার্ড কাউন্সেলর থাকায় তাকে ব্যবহার করা হয়। সেখানে ভবন উত্তোলনের জন্য সিটি কর্পোরেশন থেকে প্লান পাস করতে গেলে সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর ইসরাত জাহান রুপা সহায়তা করতে আগ্রহী হলে বাদশার হুমকি ধামকির মুখে সেই কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়।
সেই সাথে ভবন নির্মান উপকরনের জন্য রড-বালু ও ইট গভীর রাতে সড়িয়ে ফেলে। বিষয়টি সমাধানে রব হাওলাদার বিভিন্ন দরজায় ঘুরলেও কৌশলী বাদশা বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর নাম ব্যবহার করে ব্যক্তিবিশেষের আগ্রহ চাপা দিয়ে দেয়। এরপর নানাভাবে জমিটি বিনামূল্যে বাদশা লিখে দেয়ার জন্য শক্তিপ্রয়োগ করেও ব্যর্থ হয়। সর্বশেষ গতবছর ২০১৮ সারে বাদশা স্ত্রী বদলে নিজে ওয়ার্ড কাউন্সিলর হওয়ার পর নতুন করে শুরু করে রব পরিবারকের এলাকা থেকে বিতারিত করার চেষ্টা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে রব হাওলাদার ওই সম্পত্তির ওপর একটি খুপরি ঘর তৈরী প্রতি রাতে তিনি সেখানে অবস্থান নেন দখল আতঙ্কের ভয়ে। কারণ বাদশা জমি থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরত্বে মার্ক ভবন ভাড়া নিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী সমেত সেখানে বসবাস শুরু করেন।
গত ৮ মার্চ রাতে ওই বয়োবৃদ্ধ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাহিরে বের হলে বাদশা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাকে অপহরণ করে মার্ক ভবনের ভিতর অবরুদ্ধ করে রাখে। স্থানীয় সূত্র জানায়Ñ গভীর রাতে ওই ভবনের ভেতর থেকে কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। পরে উকি দিয়ে দেখে এক বৃদ্ধকে রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করে অচেতনাবস্থায় প্লাস দিয়ে তার হাতের নখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা চলছিল। এসময় বাদশার সাথে মার্ক ভবনের মালিক মাইনুল ইসলামের পুত্র তুর্জ ও শ্যালক ওরুন সিকদার ছিলেন।
এভাবে রাত পার হওয়ার পর ভোরে ওই বৃদ্ধকে ডাকাত বলে আটকের কথা জানিয়ে কোতয়ালী থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করার সহায়তা চায়। পাশাপাশি একটি ডাকাতি মামলা রুজু করার আবেদন করে। পুলিশের একটি কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুর ইসলাম মামলা নেয়ার বদলে আগে ওই বৃদ্ধকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য পরামর্শ দেন। এরপর থেকে তার হদিস মিলছিল না। কোন এক মাধ্যম তার স্ত্রী মিসেস নুরুন নাহার জানতে পারে তার স্বামী শেবাচিমে ভর্তি কিন্তু অচেতন।
হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, বাদশা ও তুর্জ এই দুইজনে মিলে আব্দুর রবের রক্তাক্ত শরীরে ভেজা কাপড় সড়িয়ে ফেলে। পরে তাকে চিকিৎসা দিয়ে থানায় নিয়ে এসে তার পরিবার মামলা গ্রহনে উদ্যোগী হলে পুলিশ একটি আবেদন করার পরামর্শ দেয়। খবর পেয়ে বাদশা থানায় উপস্থিত হয়ে ওই বৃদ্ধকে ডাকাতি মামলায় আটকের দাবী জানিয়ে পুলিশের উপর প্রভাব সৃষ্টির চেষ্টা করে। কিন্তু পেরে না ওঠায় সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর নাম ব্যবহার করে পুলিশকে চাপের মধ্যে ফেলে দেয়।
পুলিশ পরিস্থিতি কিছুটা নাটকিয়তাপূর্ণ ধারণা করায় আগে চিকিৎসা পরে আটক বা মামলা গ্রহনের সিদ্ধান্ত জানিয়ে বাদশাকে শান্ত করে । কেন থানায় যাওয়া হলো এই প্রশ্নে বাদশা আব্দুল রব হাওলাদারের বাশায় এসে চরাও হয়। ইশ্বরবসু সড়কে সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীরের বাসায় ভাড়াটিয়া হওয়ায় সেখানে সুবিধা করতে পারেনি। উল্লেখ্য জাহাঙ্গিরের সাথে বাদশার নীতিগত দ্বন্দ্ব থাকায় ধারণা করছে। এই পরিবারকে জাহাঙ্গীর আশ্রয় দেয়ায় তার এলাকা ছাড়ছে না।
ফলশ্রুতিতে এলাকা ছাড়া করতে ওই ডাকাতির ঘটনা সাজানো হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। বর্তমানে শেবাচিমে চিকিৎসাধীন আব্দুল রবকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে, যাতে এলাকাবাসী বিষয়টি সম্পর্কে না জানে। এদিকে ওই বৃদ্ধার স্ত্রী মামলার জন্য আবেদন করলে তা এখন গ্রহন করার আগে বাদশার আবেদনটি ডাকাতি মামলাটি চুরি মামলা হিসেবে দায়ের করতে সক্ষম হয়েছে। পুলিশের ভেতর থেকেই একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামলাটি গ্রহনে অস্বীকৃতি জানালেও শেষমেষ ক্ষমতাশীন দলের প্রভাব ও বেশ কয়েক জন মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তার পক্ষাবলম্বন করায় পেটানোর ঘটনার বিচারের বদলে বাদশার দাবী পূরণে বাধ্য হয়ে আব্দুর রব হাওলাদারকে একজন চোর হিসেবে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
কিন্তু বাদশার আগে আব্দুর রবের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করলেও তা পরে গ্রহন করা হয়। এ বিষয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বাদশা একা নয় তার পক্ষে সমর্থন বা প্রমাণ দেয়ায় মামলা নিতে বধ্য হতে হয়েছে। বাদশার কমিশনারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জমি দখল পরিকল্পনার কথা অস্বীকারতো করেন উপরন্ত গত ৮ মার্চের ঘটনা উল্লেখ করলে তাজ্জব হয়ে যান। ভাবটা এমন তিনি কিছুই জানেন না।
তাহলে থানায় কেন গেলেন সে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন। তবে নিশ্চিত হওয়া গেছে পুলিশ প্রশাসনের একটি অংশকে তিনি বাগিয়ে নিয়ে এখন এই পরিবারকে দৌড়ের উপর রাখার কৌশল নিয়েছেন, যাতে ওই জমিতে আর না ভিরতে পারে।
এভাবেই বহুমুখী ঘটনার জন্ম দিয়ে ১৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলন বাদশা প্রায় প্রতি বছরই সংবাদের শিরনাম হন। রাজনীতি ভোল পাল্টানো এই নেতা বরাবরই ক্ষমতায় ছায়াতলে থাকায় কেউ তার সাথে পেরে না ওঠায় কোন ঘটনার প্রতিবাদে কারো অগ্রসর হওয়ার আগ্রহ থাকছে না। ফলে ওই এলাকায় এখন তিনিই দন্ডমূ-ের কর্তা।
Leave a Reply