শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৭ অপরাহ্ন
এস এম তুষার/ ফয়জুল করীম ॥
বিগত কয়েক বছর থেকে চলমান সময় পর্যন্ত শহরতলীর রহমতপুর অঞ্চলে জনৈক ইটালী আলি ওরফে মামুন, ওরফে কালাম ইত্যাদি নানা পরিচয়ে বিভিন্ন জনসাধারনের কাছে কখনও মোবাইল, কখনো উড়ো চিঠির মাধ্যমে পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির নামে চাদাঁ দাবী করে আসছে, আশ্চর্যজনক কথা হলো এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনের সন্দেহজনক নিরবতা। সমর্থিত কিছু সূত্র মতে, শুধু চাঁদা দাবী নয় বরং টার্গেটকৃত লোকদেরকে বলা হচ্ছে পার্টিতে যোগ দিতে হবে নয়তো খতমের তালিকায় ফেলা হবে। দক্ষিন-বাংলায় ১৯৮৯ সালে সর্বহারা কামরুল গ্রুপ প্রধান কামরুল হাসান ওরফে বিকাশ ওরফে নিজামুদ্দিন জিয়াউদ্দিন গ্রুপের নেতা অবনী বাড়ৈর হাতে নিহত হন। অতঃপর জিয়াগ্রুপ প্রধান কর্ণেল জিয়াউদ্দিন পার্টি ত্যাগ করে ব্যক্তি জীবনে চলে গেলে এতদ্অঞ্চলে সর্বহারা নামধারীদের তৎপরতা স্তিমিত হয়। বাকী শুদ্ধি অভিযান চালায় র্যাব,পুলিশ, ডিজিএফআই। এতো গেলো মোটা দাগের কথা। কিন্তু তাতে বৃহৎ বাংলাদেশে আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতি শেষ হয়নি। কারন কামরুল-জিয়া গ্রুপ ছিলো বলকান গেরিলাদের নেতা অনোয়ার হোক্সার অনুসারী । সারা বিশ্বে হোক্সাবাদীরা দূর্বল। এদেরকে বিরোধীতা করে মাওবাদীরা। এদেশে মাওবাদী বিপ্লবীদের মধ্যে শীর্ষ সংগঠন পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি, পূর্ববাংলার কমিউনিষ্ট পার্টি, পূর্ব-বাংলার সাম্যবাদী দল(অধুনালুপ্ত)। তাদের মধ্যে সর্বহারা পার্টি তিন গ্রুপে বিভক্ত- সর্বোচ্চ বিপ্লবী পরিষদ বা সিসি, দ্বিতীয় জাতীয় কমিটি বা দ্বিজাক এবং কমিউনিষ্ট মাওবাদী বলশেভিক পূনর্গঠন কমিটি। তারা সবাই অবশ্য পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির নামেই চলে। অপরদিকে পূর্ববাংলার কমিউনিষ্ট পার্টির দুই গ্রুপ জনযুদ্ধ গোষ্ঠী, লাল পতাকা। এর মধ্যে জনযুদ্ধ বিলুপ্ত, লাল পতাকা উত্তরাঞ্চলের কোথাও কোথাও সক্রিয়। মাওবাদীদের মধ্যে অভ্যন্তরীন বিরোধ রননীতিগত নয়, রনকৌশলগত। লাল পতাকা সরাসরি নকশালপন্থী। তাদের মতে শ্রেনী শত্রু খতমের মধ্য দিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের সূচনা করতে হবে। এবং খতমের লাইন মূখ্য বিবেচ্য/করনীয়। কিন্তু পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির থিসিসে খতম গৌন করনীয়। থানা ফাঁড়ি দখলের মধ্য দিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের সূচনা করতে হবে। বরিশালসহ বৃহৎ দক্ষিন বাংলায় মাওবাদীরা সবসময়েই ছিলো দূর্বল। কিন্তু হোক্সাবাদী কামরুল- জিয়ারা বিলুপ্ত হবার পর মাওবাদীরা বিভিন্ন কৌশলে এতদ্অঞ্চলে কাজ বিস্তার শুরু করেছে। মাওবাদীদের সংবিধানে নির্বাচনে মুক্তি নাই বিপ্লব ছাড়া উপায় নাই এবং তা হবে সশ্স্ত্র কায়দায়। গ্রাম থেকে শহর দখলের প্রক্রিয়ায়। এজন্য ব্যাপক গ্রামাঞ্চলে পার্টি বাহিনী গঠন, গনসম্পৃক্ততার দ্বারা নিগেদ গঠন(নিয়মিত গেরিলা দল) ইত্যাদি। এক্ষেত্রে মাওবাদীরা দুইটি বিষয়কে প্রধান আকড়েঁ ধরে কৌশলগত বিবেচনায়। ১, রিলে সেন্টার ২. এসেক্স। বিভিন্ন সূত্র মতে দক্ষিনে মাওবাদীরা অনেক অগ্রসর হয়েছে শক্তিশালী রিলে সেন্টার দ্বারা। মাওবাদীরা মোবাইল ব্যবহার করেনা, কম্পিউটারে ইন্টারনেট চালায়না। তাদের এ বিষয়গুলো দেখে শক্তিশালী রিলে সেন্টার। তবে সে সূত্র জানায়, বৃহত্তর দক্ষিন-বাংলায় এসেক্সের রুপরেখাটি কি সেটা স্পষ্ট না। তিন কি চারটি এসেক্সের শোডাউন করা হয় রাষ্ট্রীয় বাহিনী তথা গোয়েন্দা বিভাগের চোখে ধুলো দেবার জন্য। এর মধ্যে নির্ধারিত একটি এসেক্স ধরে ভৌগলিক সাংগঠনিক তৎপরতা চালাবে মাওবাদীরা। বৃহত্তর ফরিদপুরÑ মাদারীপুরের অনেক গ্রামাঞ্চল মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল। কথা ছিলো সেখান থেকে কয়েকটি শক্তিশালী ট্রুপস রাজনৈতিক/সামরিক দিকে বরিশালে কৌশলগত কাজ বিস্তার করবে। কিন্তু বর্তমান মাওবাদী সর্বহারা পার্টির প্রধান ধারা আনোয়ার কবিরের নেৃত্বাধীন অংশ যেটা সর্বোচ্চ বিপ্লবী পরিষদ তাকে চ্যালেঞ্জ করে কমরেড মতিনের নেতৃত্বাধীন অংশ বলশেভিক পূনর্গঠন কমিটি। এমতবস্থায় সবিপ’ পাবনা, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ রুট ধরে বরিশালে প্রবেশ করবে। অপরদিকে বলশেভিকরা মাদারীপুর- রাজবাড়ীর রুট ধরে বরিশালে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ইত্যবসরে র্যাব, পুলিশের সাথে কয়েকটি যুদ্ধে বলশেভিকদের শীর্ষ সারির বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক এবং সামরিক কমিশার নিহত হলে তারা ষোলোটি গ্রুপে ভাগ হয়ে রিট্টিট করে। সেসবের কোন গ্রুপ বরিশালে কোন রুটে প্রবেশ করবে তা জানা যায়নি। এদিকে বলশেভিক পূনর্গঠন কমিটির সাথে ঐক্য না হওয়ায় সর্বোচ্চ বিপ্লবী পরিষদ‘র ঐক্য আলোচনা বিভাগ’র নকশালপন্থী লাল পতাকা গ্রুপের সাথে ফলপ্রসু আলোচনা হয়। কিন্তু মতিন গ্রুপ ঐক্য করার মত কাউকে পাচ্ছেনা বলে সূত্রে প্রকাশ। সূত্র আরো জানায়, রাষ্ট্রীয় বাহিনী তথা গোয়েন্দা বিভাগের চোখে ধূলো দেবার জন্য নয়া সর্বহারা বিপ্লবীরা রিট্টিট এরিয়াকে প্রধান আকড়েঁ ধরা অঞ্চল হিসাবে উপস্থাপন করবে। ইতিমধ্যে আনোয়ার কবিরের নেতৃত্বাধীন প্রধান ধারাটি বিপ্লবী গনমুক্তি বাহিনীকে শক্তিশালী করে সম্ভাব্য স্থানে প্রচার চ্লাাচ্ছে। জানা গেছে লাল পতাকার সাথে ঐক্য হলেও বৃহত্তর বরিশালে আন্তঃসংঘর্ষ শুরু হতে পারে। কারন সর্বোচ্চ বিপ্লবী পরিষদের মূখ্য রণকৌশল থানা ফাড়িঁ দখলের মাধ্যমে সে অঞ্চলকে পার্টি নিয়ন্ত্রিত মুক্তাঞ্চল হিসাবে ঘোষনা দেয়া। কিন্তু লালপতাকা গ্রুপ মূখ্য রণকৌশলে এলাকার চিহ্নিত গণশত্রু, প্রভাবশালীরা যদি পার্টিতে যোগ না দেয় তবে খতমের ম্ধ্যামে সে অঞ্চলকে মুক্তাঞ্চল হিসাবে ঘোষনার পক্ষপাতি। উত্তরাঞ্চলে রাস্তাঘাট নির্মানের জন্য কার্গো শিপে করে যে পাথর আসে ছত্তিশগড় থেকে, সে পাথরের আড়ালে অস্ত্র-গোলাবারুদের লেনদেন হয়। যার অংশ লালপতাকাও পায় সর্বোচ্চ বিপ্লবী পরিষদও পায়। ভারতের মাওবাদীদের সাথে বাংলাদেশের মাওবাদীদের চুক্তি হয়েছে যে ছত্তিশগড় এবং অন্ধ্রপ্রদেশের নকশালরা লাল পতাকা, বিপ্লবী পরিষদকে যথাসম্ভব ভারী অস্ত্রে সজ্জিত করবে। কিন্তু বিনিময়ে একটা কৌশল গ্রহন করতে হবে যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাখা যাবেনা, তার বদলে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ একত্র করে জনগনতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠন করে মাওবাদী গনযুদ্ধের জন্য রনাঙ্গন ছড়িয়ে দিতে হবে। কিন্তু আনোয়ার কবিরের বিপ্লবী পরিষদ এর বিরোধীতা করে এই মর্মে যেÑ এটা উগ্র জাতীয়তাবাদী চিন্তা। তবে লাল পতাকা জনগনতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের প্রস্তাবকে স্বাগতঃ জানায়। এক অসমর্থিত সূত্র মতে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কিছু অংশ জনগনতান্ত্রিক বাংলাদেশ ধারনাকে মৌন সমর্থন করে। প্রস্তাবিত নতুন বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্ত হবেÑ উত্তরে পূর্ব ভারতের ভগবত অঞ্চল, মধ্য পশ্চিমে প্রন্ডাগ এবং দক্ষিনে দীঘা। সূত্র মতে, আসন্ন সংসদ নির্বাচনের ব্যস্ততার সুযোগে মাওবাদীরা রিলে সেন্টার এবং এসেক্স কেন্দ্রিক কৌশলগত তৎপরতা এগিয়ে রাখবে। তারপর শুরু হবে রণনীতি বাস্তবায়ন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়Ñ রহমতপুরসহ বরিশালের অনেক বিস্তৃর্ণ অঞ্চলে খোদ প্রশাসন পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির নাম দিয়ে বিভিন্নভাবে, নির্ধারিত বিভিন্নজনকে দিয়ে তৎপরতা চালাচ্ছে নেপথ্যে, যাতে করে জনগনের মধ্যে কাজ বিস্তারে মাওবাদী সর্বহারা, লাল পতাকাকে বেগ পেতে হয়। এবং জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন করে তাদেরকে দমন করা সহজ হয়।
Leave a Reply