শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৪ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক//নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত একটি কলেজের ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে ব্যক্তি বিশেষের মালিকানাধীন ভূ-সম্পত্তি দখলের নেওয়ার অভিযোগ মিলেছে সাংসদ রত্না আমিনের বিরুদ্ধে। বরিশাল ৬ আসনের সাংসদের এই ভুমিদস্যুতা থেকে রেহাই পাননি খোদ পুলিশ কর্মকর্তাও। ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে ওই পুলিশ কর্মকর্তার সম্পত্তির একাংশ অর্থাৎ চার শতাংশ দখল নিয়েছেন। কিন্তু জনপ্রতিনিধির দখল সন্ত্রাসের শিকার হয়েও ওই পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন নিশ্চুপ। যদিও বাকেরগঞ্জ শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে সিনেমা হলের পাশে রত্না আমিন মহিলা কলেজের নতুন ভবন নির্মাণকে কেন্দ্র করে সাংসদের এই ভূমিদস্যুতা অনেককেই হতবাক-বাকরুদ্ধ করেছে। কিন্তু রত্না আমিন একেতো সাংসদ অপরদিকে সংসদে বিরোধী অপজিশন পার্টির মহাসচিবের স্ত্রী। তাছাড়া তার স্বামী এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারও বর্তমান সাংসদ সদস্য।
মূলত স্বামীও স্ত্রীর নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজ ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছেন। যে কারণে এই ভুমিদস্যুতার বিষয়টি ঘটনাচক্রের প্রকাশ পেলেও কেউ মুখ খোলার সাহস দেখায়নি। এমনকি ভুক্তভোগীরাও প্রভাবের কাছে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনার বিষয়টি অনুমানে নিয়ে পুলিশের কাছে আইনি সহযোগিতাও চায়নি। ফলে এই সুযোগে এই দখল সন্ত্রাসকে কেন্দ্র করে ফায়দা লোটার অভিযোগ রয়েছে কলেজ অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবির ও সাংসদ রত্না আমিনের ক্যাডার হিসেবে সমাধিক পরিচেত জসিম ওরফে খাটো জসিমের বিরুদ্ধে। সাংসদের কব্জা থেকে জমির বের করে নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই দুইজন কারও কারও কাছে লাখ টাকা দাবি করাও অভিযোগ রয়েছে। যদিও এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে কলেজ অধ্যক্ষ দোষ চাপাচ্ছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ঘাড়ে।
এমতাবস্থায় খোঁজখবর নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে- পৌরশহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে সাংসদ রত্না আমিন তৎকালীন সময়ে নিজের নামে ‘রত্না আমিন মহিলা কলেজ’ প্রতিষ্ঠিত করেন। ওই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি দায়িত্বে থাকা রত্না আমিন সাম্প্রতিকালে কলেজটির নতুন ভবন নির্মাণ সিদ্ধান্ত নেন। অবশ্য তার এই উদ্যোগকে বাস্তবায়ন করতে শিক্ষামন্ত্রণালয় অর্থ বরাদ্দ করে। মূলত এই বরাদ্দ পাওয়ার পরপরই কলেজ ক্যাম্পাসে নতুন ভবন নির্মাণ করতে পার্শ্ববর্তী একটি পুকুর ভরাট করা হয়। কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে- পুকুর ভরাটের সাথে আশপাশের অন্তত ৮ থেকে ১০ ব্যক্তি বিশেষের সম্পত্তিও দখল করে নিজের আয়ত্বে নিয়ে যাওয়া হয়। ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজন জমি মালিক রয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের এসআই। ওই পুলিশ কর্মকর্তার বাসার রান্না ঘর ঘেষে নেওয়া হয় ভবন নির্মাণের উদ্যোগ। কিন্তু দেয়াল পাশ থেকে গর্ত করে মাটি তোলার পর পুরো ঘরটি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এই ঘটনাটি প্রকাশ পেলেই সাংসাদবিরোধী অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে পৌরবাসীর মাঝে। যদিও এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ কর্মকর্তাই বিষয়টি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা অবহিত করে সুরহা চাইছিলেন।
যদ্দুর জানা গেছে- আর্জির প্রেক্ষিতে সাংসদও পুলিশ কর্মকর্তার এই বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে কোন ধরনের সুরহা না করেই ভবন নির্মাণকাজ শুরু করেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কলেজ অধ্যক্ষ ও সাংসদের ক্যাডার জসিম উদ্দিন উপস্থিত থেকে প্রতিনিয়ত ভবন নির্মাণ কাজ করাচ্ছেন। এমন বাস্তবতায় সরেজমিনে গিয়েও একই চিত্র প্রতীয়মাণ হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে- প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আহসান হাবিব ও ক্যাডার জসিম উদ্দিন নির্মাণ শ্রমিকদের দিকনির্দেশনা দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। অবশ্য এই সময়ে তাদের পাশে কলেজ অধ্যক্ষকেও দেখা গেছে।
কিন্তু কলেজ অধ্যক্ষের ভাষ্য হচ্ছে- তিনি শুধু নির্মাণকাজ পরিদর্শন করছেন। তবে কোথায় কি নির্মাণ হচ্ছে- সেই বিষয়টির সিদ্ধান্ত কলেজের প্রতিষ্ঠাতা রত্না আমিনই দিচ্ছেন। এবং পরবর্তীতে তা জানিয়ে দিচ্ছেন জসিম। কিন্তু ভবন নির্মাণে অপরের সম্পত্তি দখলের হেতু কি এমন প্রশ্নে তিনি জসিম ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকেই দোষারোপ করলেন। যদিও জসিম বলছেন- তিনি কিছুই জানেন না।
অথচ কলেজ অধ্যক্ষ ও জসিম ভুক্তভোগীদের জমি উদ্ধার করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি টাকা দাবি করেছিলেন। যদিও এখন তারা দুজনেই অর্থ চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করছেন। এমন পরিস্থিতিতে সাংসদ রত্না আমিনের ভাষ্য হচ্ছে- বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত ছিলেন না। খোঁজখবর নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দেখতে নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে কেউ যদিও ভুমিদস্যুতার অভিযোগ তোলে সেটি হবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নতুন একটি ষড়যন্ত্র।
এক্ষেত্রে ওসি মাসুমুজ্জামাদের ভাষ্য হচ্ছে- সাংসদের নিদের্শনা পেয়েই জমি মালিকদের খবর দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে কাগজপত্র দেখে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এই বিষয়ে জানতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। সুত্র, বিডি ক্রাইম24.কম
Leave a Reply