রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৯ পূর্বাহ্ন
বরগুনা সংবাদদাতা: পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির আওতায় অস্থায়ী লাইনম্যান হিসেবে কাজ করত বরগুনার বামনা উপজেলার ডৌয়াতলা ইউনিয়নের পাকাপোল এলাকার মো. পারভেজ হোসেন(২৫)। ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে বামনা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুত তার ছিড়ে যাওয়ায় সংযোগ বন্ধ থাকে।
এ কারণে উপজেলার রামনা ইউনিয়নের বলইবুনিয়া গ্রামে প্রায় পাঁচ দিন বিদ্যুৎ ছিল না। স্থানীয় পল্লী বিদ্যুতের ডিলার মো. রাব্বানীর মাধ্যমে ওই এলাকায় ১১ হাজার কেভি লাইনের তার জোড়া লাগানোর কাজে যায় পারভেজ। লাইনে কোনো বিদ্যুৎ সংযোগ নাই বলে রাব্বানী ও সেখানের বিদ্যুতের কর্মকর্তারা তাকে নিশ্চয়তা দিলে সে ওই ছিড়ে যাওয়া তার জোড়া লাগাতে খুঁটি বেয়ে উঠে পড়ে।
কিন্তু তখন লাইনে ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ থাকায় একটি তার ধরার সাথে সাথে তাকে অন্য তারের উপর ছিটকে ফেলে দেয়। সেখানে তারের উপরই কিছুক্ষণ তার শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যাওয়ার পর প্রায় ২০ ফুট উপর থেকে নিচে পড়ে যায়। তার মাথায়, বুকে, পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর আঘাত লাগে। পারভেজ মাটিতে পড়ার সাথে সাথে স্থানীয়রা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
সেখানকার চিকিৎসকরা অবস্থা খারাপ দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। পারভেজ বর্তমানে ঢামেকের ২০১ নং ওয়ার্ডের ২১৬ নম্বর বেডে চিকিৎসসাধীন রয়েছে। তার শরীরের প্রায় ৬০ ভাগ পুড়ে গেছে। ঘটনাটি ঘটে গত ৭ মে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় বলইবুনিয়া গ্রামে। পারভেজ ডৌয়াতলা ইউনিয়নের পাকাপোল এলকার জামাল আকন ও রিনা বেগমের একমাত্র ছেলে।
এ ব্যাপারে পারভেজের মা রিনা বেগম বলেন, ‘আমার একমাত্র ছেলে পারভেজ কারেন্টের কাজ ভালো করে বলে সবাই ওকে দিয়া কাজ করায়। এতে অনেকের হিংসা জন্মেছে। এরাই আমার বাপধনরে খাম্বায় উঠাইয়া পুড়াইয়া মারতে চাইছে। আপনারা আমার একমাত্র নারী ছেরা ধনরে বাঁচান। পল্লী বিদ্যুতের লোকেরা কেউ কোনো খোঁজ নেয়নি। মোর পোলাডা আছে না মরছে কোনো খবর নাই। আপনারা মোর পোলাডারে বাঁচান। টাকার অভাবে মোর পোলাডারে এহন চিকিৎসাও করাইতে পারি না। বিদ্যুতের কেউ কোনো খোঁজ নেয় না।
বর্তমানে পারভেজের সাথে থাকা মামা লিটন হাওলাদার জানায়, রামনা ইউনিয়নের পল্লী বিদ্যুতের ডিলার রাব্বানী ও বামনা উপজেলার পল্লী বিদ্যুতের ইনচার্জ ইচ্ছা করে ওকে বিদ্যুত থাকা অবস্থায় খুঁটিতে উঠিয়েছেন। তারা জানত তারে বিদ্যুৎ আছে। তার ভাগিনাকে তারা কোনো রকম চিকিৎসা সহায়তা না দিয়ে ডিলার রাব্বানী ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে পালিয়ে যায়।
পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুতের কোনো কর্তাব্যক্তি অদ্যাবধি তাদের চিকিৎসার কোনো খোঁজখবর নেয়নি। টাকার অভাবে পারভেজের এখন চিকিৎসা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তিনি সমাজের বিত্তবানদের কাছে পারভেজের সাহায্য চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন। পারভেজকে সাহায্য পাঠানোর বিকাশ নম্বর ০১৭১০০৬৮৬৮ ও ০১৭১৪৪৪৫৩৬৫ পার্সোনাল।
পল্লী বিদ্যুতের অনুমোদিত ডিলার মো. রাব্বানী বলেন, পারভেজকে আমি কোনো কাজে রাখিনি। ও কার আদেশে খুঁটিতে উঠেছে আমি জানি না। তবে আমি ওর দুর্ঘটনার কথা শুনে ওকে নিয়ে বরিশাল ও পরে ঢাকা যাই। ঢাকায় আমার সাথে ওর পরিবার খারাপ ব্যবহার করায় আমি চলে আসি।
পল্লী বিদ্যুৎ বামনা উপজেলা ইনচার্জ শফিক জানায়, পারভেজ আমাদের কোন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী নয়। জনবল সংকটের কারণে তাকে মাঝে মধ্যে আমরা বিভিন্ন কাজে লাগাই। তবে ঘটনার দিন তাকে আমরা কেউ খুঁটিতে উঠতে বলিনি। সে আমাদের কারো কাছে কিছু না বলেই খুঁটিতে উঠে তার জোড়া লাগাতে যায়। আমি ঘটনা শুনে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গেলে তাকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে চিকিৎসার জন্য পাঠাই।
মঠবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুৎ ডেপুটি জেনারেণ ম্যানেজার মো. জুলফিকার রহমান বলেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি। পারভেজকে চিকিৎসার জন্য বামনার ইনচার্জ প্রাথমিক সহায়তা করেছেন। পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. মফিজুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ তাকে অবহিত করেনি।
Leave a Reply